আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় কোমেন : নিহত ৪

 

 

iiii_300193

স্টাফ রিপোর্টার: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় কোমেন রাত সাড়ে ৯টার দিকে সন্দ্বীপ অতিক্রম করতে শুরু করে। রাত পৌনে ১০টার দিকে তা চট্টগ্রামের দিকে এগিয়ে আসছিল। এর প্রভাবে উপকূলে রাতে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। অবনতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। সাগর ও নদ-নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলের অনেক এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। টেকনাফ ও ভোলায় গাছচাপায় ৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গতরাত ১০টায় উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় কোমেন উত্তর দিকে সরে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় কিছুটা দুর্বল হয়ে সন্দ্বীপের কাছ দিয়ে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম রাত ১০টায় বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করার পর আরও পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৭০ কিলোমিটার পযন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার দিনভর ও রাতে আতঙ্কে দিন কেটেছে উপকূলের মানুষের। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান নেয়।

গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সারা দিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিসহ দমকা হাওয়া বয়। ফলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে হাজার হাজার গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

আরিচা-পাটুরিয়া, শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দিসহ উপকূলে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উপকূলীয় জেলাগুলোতে এ বিভাগের অধীনে সব ফেরি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যানবাহন পরিবহনে সীমিত আকারে ফেরি ব্যবহার করা যাবে। কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ ও উড্ডয়নসহ বন্ধ করে দেয়া হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একই কারণে মিয়ানমারের জলসীমায় উদ্ধার হওয়া ১৫৯ জন বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন, উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় কোমেন মোকাবেলার জন্য সরকার সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আশা করি, বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হবে না। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুতির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন জানিয়ে মায়া বলেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে এমন ১৩ জেলায় উদ্ধার, জানমাল রক্ষার প্রস্তুতিসহ পরিকল্পনা মাফিক সব কাজ চলছে। কক্সবাজারে ৯৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করার সময় ঘূর্ণিঝড় কোমেনের আঘাতে সেন্ট মার্টিনে গাছচাপা পড়ে মোহাম্মদ ইসলাম নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মহেশখালী দ্বীপের নিুাঞ্চল প্রায় ৪ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ের ঢল ও ধসের কারণে অসংখ্য পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে একাকার হয়ে পড়েছে বহু চিংড়ি প্রজেক্ট। এদিকে ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে পড়লেও জেলার উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে শহরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ ও পেকুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে।

বঙ্গোসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ কোমেন টেকনাফে আঘাত হেনেছে। এতে প্রকৃতির নিষ্ঠুর তাণ্ডবে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, গাছপালা, পাহাড়ি ও সড়কের গাছ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে গাছচাপায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। উপকূলীয় ইউনিয়নের সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে ৭০০০ লোক আশ্রয় নিয়েছে।

কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বৃহস্পতিবার সকালে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে এ দুই উপজেলার প্রায় ১০টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেশিরভাগ বাড়িঘরে জোয়ারের পানি উঠেছে। এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বৃহস্পতিবার বর্ষণের পাশাপাশি মাতামুহুরী নদীতেও পাহাড়ি ঢল নামে।

পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের টেকপাড়া ও ফেরাশিঙ্গা পাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ওই ভাঙনগুলো দিয়ে উজানটিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কোমেনের প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালীর ৩০ গ্রাম কোমর থেকে গলা পানিতে তলিয়ে গেছে। সমগ্র উপজেলায় অন্তত ১১ হাজার লোক ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গেছে। বিদ্যুৎ না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে সমগ্র এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার ধলঘাটা, মাতারবাড়ি ও কুতুবজোম ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম ২ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

মংলা বন্দরে ৫নং বিপদ সঙ্কেত দেয়া হয়। এ দুর্যোগ মোকাবেলায় মংলা উপজেলা ও পৌর প্রশাসন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। নিরাপদ অবস্থানে রাখা হয়েছে বন্দরে অবস্থানরত দেশী-বিদেশী সব বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে। বন্দরে অবস্থানরত ৫টি বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য বোঝাই ও খালাস কাজ বন্ধ রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সাগর ও নদীপথে চলাচলকৃত সব ধরনের নৌযান নিরাপদে অবস্থান নিয়েছে। বুধবার রাতে ৫নং বিপদ সংকেত জারির পর থেকে পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়েছে। উপজেলার ৩৯টি সাইক্লোন শেল্টার ও দূর্যোগকালীন সময়ে মানুষের আশ্রয়ের জন্য সব বহুতল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সুন্দরবনে রেড অ্যালার্ট জারি: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় কোমেনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘রেড এলার্ট’ জারি করেছে সুন্দরবন বিভাগ। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাগেরহাট জেলা সদরসহ মংলা, রামপাল, শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্টোল রুম। মাঝারি এ ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা মংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জে বুধবার রাতে মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়। পিরোজপুরে কোমেনের প্রভাবে ২-৩ ফুটের বেশি জোয়ারের পানিতে উপজেলার ৩০-৪০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। উপজেলায় ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়।

সাতক্ষীরায় সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। বিশেষ নজর রাখা হয় আইলা ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগর উপজেলার দুটি দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও পদ্মপুকুর এবং আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের ওপর। জেলা শহরসহ ৭টি উপজেলায় ৮টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং একটি মনিটরিং সেল গঠন করে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুরকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ধরে নিয়ে ৩৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। এদিকে কপোতাক্ষ উপচে তালা ও কলারোয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বুধবার বিকালে ঘুর্র্ণিঝড় প্রচণ্ড আঘাত হানে জিয়ানগরে। মাত্র ৫ মিনিট স্থায়ী এ ঝড়ে উপজেলার প্রায় শতাধিক বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোলা জেলায় বুধবার রাত থেকে ঘূর্ণিঝড় আতংক দেখা দেয়। লালমোহন, চরফ্যাশন ও ভোলা সদরে ওই রাতে ব্যাপক ঝড় হয়। বৃহস্পতিবার লালমোহনের গজারিয়ায় গাছচাপা পড়ে মনজুরা বেগম (৫৫) নামের এক মহিলা মারা গেছেন। এছাড়া বুধবার রাতে ঝড়ে আরও একজন মারা গেছেন বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুব্রত কুমার সিকদার। মনপুরার কলাতলির চর, চরফ্যাশনের ঢালচরসহ মেঘনা নদীর মাঝে অবস্থিত ১১টি চরে সতর্কতামূলক মাইকিং করেন সিপিপি কর্মীরা।

বরিশাল নদীবন্দরের জন্য ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় গতকাল সকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ দেয়ার আগ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। বরিশাল নদীবন্দরের জন্য ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বরিশালের উপপরিচালক আ. রশীদ জানান, বরিশাল অঞ্চলে ৯৮৭টি সাইক্লোন শেল্টারে বিকাল পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে ভোলায় ১৩ হাজার এবং বাদবাকি পটুয়াখালীর কলাপাড়া, গলাচিপা, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা এবং পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার।

পটুয়াখালীতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখানো হয়। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের আতংকে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে উপকূলবাসী। এদিকে গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যাণকলশ গ্রামের নুরুল ইসলাম (৫২) গাছচাপা পড়ে নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কলাপাড়া, গলাচিপা ও রাঙ্গাবালীর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ, সিবোট, ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ সতর্কতায় নৌচলাচলে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

লক্ষ্মীফুর জেলায় ১০৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়। রামগতির বিচ্ছিন্ন চর আবদুল্লাহে আটকা পড়া অর্ধশতাধিক কৃষককে উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম থেকে ভোলাগামী শিশু ও নারীসহ শতাধিক বাসযাত্রী আলেকজান্ডার লঞ্চঘাটে আটকা পড়ে। বান্দরবানে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বান্দরবান জেলায় বুধবার সকাল থেকে পুনরায় শুরু হওয়া টানা মাঝারি বর্ষণ বৃহস্পতিবার আরও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। এতে শহর, লামা, আলীকদম, রুমা, থানছি, রোয়াংছড়ি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নিচু এলাকাগুলো আবারও প্লাবিত হয়েছে। সাংগু, মাতামুহুরী এবং বাঁকখালী নদীসহ খাল-বিল ও পাহাড়ি ঝিরিতে পানির প্রবাহ বাড়ছে। জেলা শহর এবং উপজেলাগুলোতে ৬ দিন ধরেই পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। এদিকে বৃহস্পতিবার ভোররাতে টর্নেডোর ছোবলে রুমা, থানছি, রোয়াংছড়ি এবং আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৬শ’ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বরগুনা পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া বেড়িবাঁধ ভেঙে ৭ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বেড়িবাঁধের বাইরের ১৩ গ্রামও। উপকূলীয় এলাকার সাইক্লোন শেল্টারগুলো খুলে দেয়া হয়।

নোয়াখালী উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে ছোট ফেনী নদী ও বামনীয়া নদীর তীরবর্তী এলাকায় ৩-৫ ফুট বেশি উচ্চতায় জোয়ার হয়েছে। বামনীয়া নদীর তীরবর্তী এলাকার ৮টি বসত ঘর হেলে পড়েছে। উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছপালা।

মানিকগঞ্জে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক এসএম সাজ্জাদুর রহমান লঞ্চ চলাচল বন্ধের কথা নিশ্চিত করেছেন।

চাঁদপুর থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ রুটের ছোট-বড় সব ধরনের লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। বুধবার রাত ১২টা থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও চাঁদপুর থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যেতে দেয়া হয়নি এবং চাঁদপুর ঘাটেও কোনো লঞ্চ এসে ভেড়েনি। চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চাঁদপুরকে ৩ নম্বর নৌবিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে।

কুমিল্লায় ধীরগতিতে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ৩০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে দূষিত পানি পান করে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বন্যাকবলিত মানুষ। আলকরা ইউনিয়নের বন্যাকবলিত বিভিন্ন গ্রামে সরকারিভাবে প্রতি পরিবারের জন্য ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। ফেনীতে টানা বর্ষণ ও মহুরী-কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বুধবার রাতে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ৭০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে গ্রামগুলোর ৯০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সড়ক এক থেকে দুই ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে প্রায় ১০ কোটি টাকার মাছ। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৫৩০ হেক্টর আমান ধানের বীজতলা। এদিকে উপজেলার ১২৫০ পরিবারের মধ্যে বৃহস্পতিবার ত্রাণ বিতরণ করেছেন ফেনী-৩ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী।

বরিশালে এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার পানিবন্দি মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে জীবনযাপন করছে। এদিকে কোমেন আতংকে উপজেলার ১৩১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করা হয়।