এনজিও ঋণের কিস্তির টাকা অব্যাহত তাগাদার মুখে আলমডাঙ্গার খেজুরতলা গ্রামে ৪ মাসের নবজাতক ফেলে পালিয়ে গেছে এক অসহায় দরিদ্র দম্পতি!

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বিভিন্ন এনজিও’র ঋণের টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে আলমডাঙ্গা উপজেলার খেজুরতলা গ্রামে মাত্র ৪ মাসের নবজাতক সন্তান ফেলে পালিয়ে গেছে সহায়সম্বলহীন এক দম্পতি। মা-বাবার ফেলে যাওয়া শিশু সন্তানটির কান্না কোনোভাবেই থামাতে না পেরে বিপদে পড়েছেন পড়শী গৃহপরিচারিকা দাদি।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের হতদরিদ্র মঞ্জুর-রুপালী দম্পতি। তাদের কোনো জমি-জিরাত নেই। শুধু বাড়ির দু শতক এজমালি জমি রয়েছে। সেখানে বাবা-মার সাথে পৃথক একটি টিনের চালা ঘর করে চলছিলো তাদের সংসার। বাপের মতো মঞ্জুরও অন্যের জমিতে কামলা খাটে। তাদের সংসারে দু কন্যাসন্তান রয়েছে। বড় কন্যার নাম মুসলিমা, বয়স ৭ বছর। আর ছোট কন্যা ফারজানা মাত্র ৪ মাসের। সংসারের ক্রমঃবর্ধমান অভাব-অনটন দূর করতে মঞ্জুর একের পর এক এনজিও থেকে ঋণ নেয়া শুরু করে। এক এনজিও’র ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে অন্য আরেক এনজিও থেকে অপরিনামদর্শির মত ঋণ নেয়া শুরু করে সে। দয়ার সাগর এনজিও’র কর্মচারীরাও বিনা দ্বিধায় তাকে ঋণ দিতে শুরু করে। কিছু দিন যেতে না যেতেই মঞ্জুর দম্পতির ঘাড়ে জমে ৫/৭ এনজিও’র ঋণের কিস্তির বোঝা। মঞ্জুর মা জানিয়েছেন, তিনি সব জানেন না। তবে ব্র্যাক থেকে ১৫ হাজার, আশা এনজিও থেকে ১০ হাজার, জনকল্যাণ এনজিও থেকে ১০ হাজার, খাসকররার আগুন পানি এনজিও থেকে ১৫ হাজার, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। বেশ কয়েক মাস ধরে সব এনজিও’র কর্মীরা কিস্তির টাকা নিতে জোর তাগাদা দিয়ে আসছিলেন। বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ঋণের কিস্তির টাকা মঞ্জুর-রুপালি দম্পতি পরিশোধ করতে পারছিলেন না। ঋণের জালে তখন তাদের হাঁসফাঁস অবস্থা। কিস্তির দাবিদারদের হাত থেকে পালিয়ে থেকে মঞ্জুর বাড়ির বাইরে অবস্থান করলেও রুপালীকে তো ঠিকই বাড়ি ঘরে থাকতে হয়। তাকেই অপমান সহ্য করতে হয়।

কিন্তু এভাবে আর কতো দিন! গত ৩ মাস পূর্বে মঞ্জুর কিস্তির ফাঁস থেকে বাঁচতে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেন। ঢাকায় পৌঁছে কিছু করতে না পেরে অবশেষে রিকশা চালানো শুরু করেছেন। মাঝেমধ্যে স্ত্রীর নিকট ফোন করলেও কোনো টাকা পাঠাতে পারে না। এদিকে রুপালী খাতুন স্বামীর অবর্তমানে ২ কন্যাকে নিয়ে কয়েকদিন খেয়ে না খেয়ে থেকে শেষে শাশুড়ির সাথে অন্যের গৃহপরিচারিকার কাজে হাত লাগায়। চারিদিক দিয়ে অভাব রুপালি খাতুনকে অক্টোপাশের মতো ঘিরে ধরে। উপায় না পেয়ে অবশেষে মাত্র ৪ মাসের আদরের ধন ফারজানাসহ ২ মেয়েকে ফেলে রেখে সন্তানের স্নেহের বাঁধন ছিন্ন করে সংগোপনে ঢাকায় স্বামীর নিকট চলে যান।

এদিকে মাত্র ৪ মাসের শিশুকন্যাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মঞ্জুর মা-বাবা। তারা কিছুতেই নবজাতিকার কান্নার রোল থামাতে পারছেন না। কিনে খাওয়াতে পারছেন না দুধ। বড় বিপাকে পড়েছেন বৃদ্ধা-বৃদ্ধ। গতকাল বুধবার ডাউকি গ্রামের খেদ আলী মেম্বার ওই গ্রামে আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে যান। তিনি শিশুকন্যার কানা দেখে ৫শ টাকা দাদির হাতে দিয়ে আসেন দুধ কিনে খাওয়াতে।

মঞ্জুর মা জানিয়েছেন, তার ছেলের স্ত্রী ২-৩ দিন পর পরই মোবাইলফোনে খোঁজ নেন শিশু কন্যার। সে সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এনজিওগুলোর কিস্তির টাকা পরিশোধের ভয়ে তারা বাড়ি ফিরতে পারছেন না বলে মঞ্জুর-রুপালী দম্পতি তাকে জানাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেছেন।