পূর্ণ রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: মিসাইলম্যান খ্যাত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দেশটির শীর্ষ রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ, প্রভাবশালী ব্যক্তিসহ সাধারণ মানুষ। জনগণের রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিচিত আবদুল কালামের মৃত্যুতে গতকাল প্রথমদিনের মতো শোক পালন করেছে ভারতের সর্বস্তরের জনগণও। আবদুল কালামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে একটি শোক প্রস্তাব পাস করেছে ভারতের পার্লামেন্ট। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।

গত সোমবার ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন আবদুল কালাম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করে তার মরদেহ নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে আনা হয়। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার মরদেহ বিমান থেকে নামানো হয়। পালাম বিমানবন্দরে তার মরদেহ গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পালামে তাকে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরীকর, দিল্লির উপরাজ্যপাল নজিব জং, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল প্রমুখ। এর আগে এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী মোদী টুইট করে সাবেক রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি লেখেন, কালাম প্রথমে রাষ্ট্ররত্ন, তার পর রাষ্ট্রপতি। বেলা পৌনে একটা নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছান মোদী। শ্রদ্ধা জানান কালামকে। এর কিছু পরেই পৌঁছান রাষ্ট্রপতি। একে একে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা।

বিমানবন্দর চত্বরে তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে। বিমানবন্দর থেকে কালামের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার ১০ রাজাজি মার্গের বাড়িতে। গত সাত বছর ধরে সেখানেই থাকতেন তিনি। সেখানে ভারতের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ কালামের বাসভবনে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাঠানো এক বার্তায় কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক জ্ঞাপন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পালাম বিমানবন্দর থেকে রাজাজি মার্গ পথের ধারে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির ছিল স্কুল-কলেজের কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী। ছিলেন প্রচুর সাধারণ মানুষও। ভিআইপিদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিকেলে জনসাধারণ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে যেন মানুষের ঢল নামে সেখানে।

আজ বুধবার সকালে কালামের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তামিলনাড়ু। সেখানকার রামেশ্বরমে তার জন্ম। ৯৯ বছরের ভাই ছাড়া এখন আর কাছের তেমন কেউই আর বেঁচে নেই কালামের। সেখানেই বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে তাকে রামেশ্বরমে দাফন করা হচ্ছে।

সাবেক এ রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে সোমবারই সরকারিভাবে সাত দিনের জাতীয় শোকের ঘোষণা করা হয়। গতকাল শোক প্রস্তাবের পর মুলতবি হয়ে যায় সংসদের দুই কক্ষের অধিবেশন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ভারত একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিজ্ঞানী, একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ও এক মহান সন্তানকে হারিয়েছে। লোকসভার অধিবেশন আগামী ৩০ জুলাই ফের বসবে।

গত সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে বি-স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ‘লিভেবেল প্ল্যানেট আর্থ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় হঠাত্ পড়ে যান কালাম। সাথে সাথে তাকে নেয়া হয় শিলং শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। যেখানে তিনি ইন্তেকাল করেন।

বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী আবদুল কালাম ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন ভারতের তৃতীয় মুসলিম রাষ্ট্রপতি। দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন ছাড়াও পদ্মভূষণ ও পদ্মবিভূষণ খেতাবেও ভূষিত হন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন। খুব সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন তিনি।

বিমান প্রকৌশলে পড়াশোনা করে ভারতের প্রথম মহাকাশযান তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন আবদুল কালাম। ওই মহাকাশযান দিয়েই ১৯৮০ সালে দেশটি প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র রোহিনী উৎক্ষেপণ করে। ১৯৯৮ সালে ভারতের পোখরান-২ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষার পেছনেও প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে মূল পরীক্ষা চালানোর পর দীর্ঘ ২৪ বছরে ভারতের এটাই ছিলো প্রথম সফল পারমাণবিক পরীক্ষা।

Leave a comment