বাংলাদেশের সন্তানরা জয় করবে পৃথিবী

 

শুধু ক্রিকেটে নয়, আমরা এগিয়েছি অনেক কিছুতেই। গণিত অলিম্পিয়াডের দল এনেছে গৌরব। বিশ্ব গণিতের আসরে আমরা ভারতকে পেছনে ফেলে ৩৩তম অবস্থানে। ইতোমধ্যে বিজ্ঞানে এক জগৎখ্যাত গৌরব এনেছেন আমাদের জাহিদ হাসান। তিনি বাংলাদেশেরই সন্তান। এ দেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। কোয়ান্টাম ফিজিক্সে তাক লাগিয়েছেন। তিনি আবিষ্কার করেছেন অতি-পারমাণবিক কণা। এ কণার নাম ভেইল ফার্মিওন। তত্ত্বীয়ভাবে সে কণার উপস্থিতির কথা প্রায় আট দশক আগে জানিয়েছেন জার্মান বিজ্ঞানী ভেইল। সে কণার অস্তিত্বের পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ মিলেছে জাহিদ হাসানের গবেষণায়। তিনি কাজ করছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভৌত বিজ্ঞানের জন্য যেটি পৃথিবীর শীর্ষ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি। তার গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানের জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জার্নাল, সায়েন্স ম্যাগাজিনে। এরকম বহু খবর আমাদের অগ্রযাত্রায় উৎসাহিত করছে।

বাংলাদেশ যেন সত্যিই এক অন্যরূপে জেগে উঠছে। এ দেশের বংশোদ্ভূত মেয়েরা এখন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। ‌এ দেশের মেয়ে ওয়াসফিয়া সারা পৃথিবীর পর্বত জয় করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মানুষের নিরলস প্রচেষ্টা দেশটাকে তলাহীন ঝুঁড়ি থেকে দাঁড় করিয়েছে পৃথিবীর সম্ভাবনাময়ী দেশে। জন্মনিয়ন্ত্রণ, শিশুমৃত্যু রোধ, নারী শিক্ষা ইত্যাদিতে আমাদের অর্জন গোটা এশিয়াকে বিস্মিত করেছে। এ দেশের সন্তান ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প এখন এশিয়া, আফ্রিকা এমনকি ল্যাটিন আমেরিকায়। আমাদের ফজলে হাসান আবেদ জয় করেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান। আমাদের সৈনিকেরা শান্তিরক্ষা কমিশনে জগৎ শ্রেষ্ঠ। বাংলাদেশ অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে ও অব্যাহত রাখতে রাষ্ট্রের রাজনীতির অনেক ভূমিকা দরকার। রাজনীতিকদের হতে হবে রাষ্ট্র ও জনগণ বান্ধব। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে করতে হবে আরও গতিশীল। যদিও এগুলোর বড্ড অভাব। অভাবের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা ক্ষমতাসীনদলের ছাত্রসংগঠনের সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত করা। রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রের চর্চা থাকলে তার ইতিবাচক প্রভাব যে সর্বস্তরে পড়তে বাধ্য তা বলাই বাহুল্য। আর ছাত্র সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন? গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হলে তার ঔজ্জ্বল্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পড়ে। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক গতি ফিরিয়ে আনতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মানুষ গড়ার জায়গা। এখান থেকে বেরিয়ে আসবে শ শ জাহিদ হাসান। প্রজন্মকে জাগাতে একটি দেশে অনেক নায়ক তথা আদর্শবান মানুষ দরকার। সাকিব, মাশরাফি, আশরাফুলদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে দেশের অসংখ্য কিশোর ও তরুণ খেলোয়াড়। মাত্র কয়েক বছরে আমরা তার সুফল দেখতে পাচ্ছি। ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে এমন অনেক নায়ক তৈরি করতে হবে। একজন জাহিদ হাসান দেশের সহস্র মেধাবী শিক্ষার্থীকে নাড়া দেয়। স্বপ্নটাকে বড় করে দেয়। লক্ষ্যটাকে দৃঢ় করে দেয়। বেরিয়ে আসে অনেক জাহিদ হাসান।

আমাদের ভালো করতে হবে বিজ্ঞান, শিল্পকলা, ব্যবসা, সাহিত্য এমন সকল শাখায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি রোধ করতে হবে। পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে এমন দলীয় রাজনীতি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে না। শিক্ষাবর্ষে জট ​তথা সেশন জ্যাম বলে কিছু নেই। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাড়াতে হবে গবেষণা। দেশের বাইরে যারা ভালো করছে, তাদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাবী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য করে দিলে রাষ্ট্র বদলে যাবে অচিরেই। আমরা শুধু ক্রিকেট বিশ্বেই ভালো করবো না আমাদের অর্জন হবে বহুমুখি ও বিশ্বব্যাপি। বাংলাদেশের সন্তানরা জয় করবে পৃথিবী।