মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনারোধে সরকারকে কঠোর হতে হবে

সড়ক দুর্ঘটনা, রেলক্রসিঙে দুর্ঘটনা ইত্যাদি যেন ক্রমেই মহামারীর রূপ নিচ্ছে! গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরে রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ডেমু ট্রেন ধাক্কা দিলে একই পরিবারের ছয়জনসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়। রেলক্রসিংটি অরক্ষিত ছিলো। এছাড়াও ওই দিন পৃথক দুর্ঘটনায় মারা যান আরও ২৩ জন। রেল কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, রেলপথে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল সীমিত করতে অন্তত ৬০টি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি টাঙানো হয়েছে। কিন্তু এসব যে খুব একটা কাজে আসছে না, নিয়মিত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনাই তার প্রমাণ। শুক্রবার মাদারীপুর ও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১০ ব্যক্তি। গতকাল শনিবার গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। তবে ঈদের পর বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা সড়কপথে চলাচলে জনমনে এক ধরনের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক দুর্ঘটনারোধের বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত।

পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেখা গেছে, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের দাপটের কারণে অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালক ও মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। এসব ক্ষেত্রে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির মদদ রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে মহাসড়কে আনফিট গাড়িসহ নসিমন-করিমন, ভটভটি, অটোরিকশা ইত্যাদির চলাচল বন্ধ এবং চালকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের সুপারিশ ও পরামর্শ দেয়া হলেও তা যে অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তারই বড় প্রমাণ। নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছা নিয়ে বর্তমানে যাত্রীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করে, যা লাঘব করতে হলে সড়ক ব্যবস্থাপনার মান উন্নত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে আইনের প্রয়োগ। সড়ক-মহসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। এজন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। সড়কপথে শৃঙ্খলা ফিরে এলে দুর্ঘটনার হার অনেক কমে যাবে। সরকার এ বিষয়ে অধিকতর মনোযোগী হবে- এটাই প্রত্যাশা।