স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যার ঘটনায় গাফিলতি ও আসামিদের পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ ওঠার পর পুলিশের এক পরিদর্শকসহ তিন সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরা হলেন- জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন এবং এসআই জাকির হোসেন ও এসআই আমিনুল ইসলাম। এদের মধ্যে দুই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত ও পরিদর্শককে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রহমত উল্লাহ জানান।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের ভূমিকা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রাজন হত্যার ঘটনার পর পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নিতে গাফিলতি ও আসামিদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রোকনের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর দিন শুক্রবার দুপুরে সিলেট সফর শেষে ঢাকা ফেরার পথে ওসমানী বিমানবন্দরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, রাজন হত্যায় পুলিশের ভূমিকা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিন দিনের সফরে সিলেট এসেই বুধবার রাজনের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে সান্ত্বনা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল। তার সফরের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করে কয়েকজন। ওই নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে তারা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলে সারাদেশে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পিটিয়ে হত্যার কারণ হিসাবে ভ্যানগাড়ি চুরির অভিযোগ শোনা গেলেও রাজনকে বলাৎকার করতে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।
হত্যাকাণ্ডের পর আসামি মুহিতকে বাঁচাতে এবং তার সৌদিপ্রবাসী ভাই কামরুলকে পালিয়ে যেতে সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন ও এসআই আমিনুল ইসলাম সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ করেন রাজনের বাবা। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলা এবং থানায় মামলা করতে গেলে রাজনের বাবার সাথে খারাপ ব্যবহারেরও অভিযোগ ওঠে পুলিশে এই দু সদস্যের বিরুদ্ধে। তদন্ত কমিটি গঠনের পর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে এর মধ্যেই জালালাবাদ থানা থেকে এসআই আমিনুলকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় মুহিত আলম, তার স্ত্রী লিপি বেগম, দু প্রত্যক্ষদর্শী আজমত উল্লাহ ও ফিরোজ আলীসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। কামরুল ইসলাম ঘটনার পর সৌদি আরবে প্রবাসীরা তাকে আটক করেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।