সালিস হচ্ছে না কেন প্রশ্ন : মাতবরকে মারপিট ভাতিজার পায়ে গুলি

আলমডাঙ্গার হাপানিয়া-আইন্দিপুর মাঠ থেকে শ্যালোমেশিনের পাম্প চুরি ও উদ্ধার : ৩ সপ্তা ধরে উত্তেজনা

 

স্টাফ রিপোর্টার: শ্যালোমেশিনের পাম্প চুরি ও বিক্রির সময় উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে টানা ৩ সপ্তা ধরে উত্তেজনার পর একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে দুজন। গতরাত সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নের হাঁপানিয়া দক্ষিণপাড়ার হাফিজুলের চা দোকেনের নিকট উপস্থিত জনতার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

মারপিট ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত মতিয়ার রহমানকে (২৮) গতরাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের উদ্দেশে নেয়া হয়। তিনি রবিউল হোসেনের ছেলে। অপর আহত আইনাল হককে (৫০) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। টর্চলাইট দিয়ে তার মুখে আঘাত করায় চোখের কিছু অংশ কেটে রক্তাক্ত জখম হয়। তিনি মৃত রমজান মণ্ডলের ছেলে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয়রা বলেছেন, ১৫ রোজার রাতে হাঁপানিয়া ও আইন্দিপুর মাঠের সেচযন্ত্র শ্যালোমেশিনের দুটি পাম্প চুরি হয়। পরদিন ওই পাম্প স্থানীয় এক বাজারের দোকানে বিক্রি করতে গেলে একজন ধরা পড়ে। সে ৬ জনের নাম বলে। প্রত্যেকেরই বাড়ি হাঁপানিয়া দক্ষিণপাড়ায়। মারুফ, হাফিজুল, কিবরিয়া, কালু, আশাদুল ও হাপুর নাম মুখে মুখে প্রচারিত হতে থাকে। চিৎলা ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি জানার পর স্থানীয়ভাবে ঘটনার নিষ্পত্তি করে দেন। শ্যালোইঞ্জিনের পাম্প চুরির বিষয়টিকে যেনতেনভাবে মিটিয়ে দেয়ায় অনেকেই নাখোশ হন। গ্রামের কেউ কেউ গ্রাম্য সালিসের দাবি তুলতে থাকেন। এ নিয়ে গ্রামের উত্তরপাড়া ও দক্ষিণপাড়ার মধ্যে বিভক্তি দানা বাধে। কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিরাতেই সালিসের আবহওয়া তৈরি হয়। সালিস হয় না। গতরাতেও দক্ষিণপাড়ার হাফিজুলের চা দোকানের সামনে সালিস হবে শুনে অনেকেই ভিড় জমান। রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলযোগে ৬ জন ও হেঁটে বেশ কয়েকজন দোকানের সামনে এসে উপস্থিত হয়। সালিস কেন হচ্ছে না প্রশ্ন তুলে দোকানের সামনে বসে থাকা আইনাল হকের নিকট কৈফিয়ত চাওয়া হয়। শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। টর্চলাইট দিয়ে আইনাল হককে মারপিট শুরু হয়। তারই ভাতিজা মতিয়ার রহমান এগিয়ে গেলে তাকেও মারপিটের পাশাপাশি ডান পায়ে গুলি করা হয়। দুজনকেই উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসার এক পর্যায়ে আহত মতিয়ার রহমান ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, আমি ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। আমার পায়ে গুলি করেছে স্থানীয় যুবলীগ নেতা মন্টু। তার সাথে ছিলো অনেকে। আইনাল হক বলেছেন, আমি ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি। গ্রাম্য মাতবর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। সকলে মানেও। শ্যালোর পাম্প চুরির সাথে যাদের নাম উঠে এসেছে তারা কোনো দলের নয়। যদিও কেউ কেউ কোনো কোনো দলের পরিচয় দিচ্ছে এখন। ওদের মধ্যে একজন বিএনপি আর বাকি ৫ জন আওয়ামী লীগের পরিচয় দেয়। বিষয়টি ঘটনার পর পরই চেয়ারম্যান সমাধান করে দিয়েছেন। তাছাড়া যাদের মেশিনের পাম্প চুরি হয়েছে, তাদের কেউ নালিশ করেনি। গ্রামের পরিবেশ অশান্ত করতে উত্তরপাড়ার কয়েকজন সালিসের জন্য মাতামাতি শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে যুবলীগের মন্টু তার দলবল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে।

খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গার সহকারী সিনিয়র পুলিশ সুপার সুফি উল্লাহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছান। আহতদের নিকট থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন।