সচেতন হলে যেকোনো দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব

 

রাজধানীর বস্তি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকে। আর এসব অগ্নিকাণ্ডের যেমন সম্পদহানি হয়, তেমনি ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। যখন স্বল্প আয়ের মানুষজনের একটু একটু করে গড়ে তোলা সংসার নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় তখন তা কতোটা হৃদয়বিদারক বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় গত সোমবার দুপুরে আগুনে পুড়ে গেছে শতাধিক টংঘর। যদিও সোমবার রাত পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় প্রাণহানির খবর না পাওয়া গেলেও দরিদ্র মানুষের শেষ সম্বল পুড়েছে। ফলে আমলে নিতে হবে যে, এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সামর্থ্য এখন তাদের নেই। উল্লেখ্য, মধ্য বাড্ডার প্রগতি সরণির লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের উল্টো দিকের বহুতল ভবনগুলোর পেছনে অগভীর জলাভূমি। এর মধ্যেই কংক্রিটের পিলার পুঁতে কাঠের পাটাতন আর টিন-বাঁশের বেড়া ও ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এক তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত টংঘর। এখানে দেড় শতাধিক ঘর রয়েছে; যে ঘরগুলো বোর্ডিং, মেস, দোকান ও নিম্ন আয়ের মানুষের থাকার ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখানে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতেরও সংযোগ রয়েছে। যে গ্যাসের সংযোগও অবৈধ বলেন একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

এবারে ঈদের কারণে এখানে বসবাসরত বাসিন্দারা গ্রামের বাড়ি যাওয়ায় ও অনেকে ঘরের বাইরে থাকায় হতাহত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলেই প্রতীয়মান হয়। কিন্তু আমরা মনে করি, এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণহানি না ঘটলেও ঘটনার ভয়াবহতাকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। অগ্নিকাণ্ডে যাদের সর্বস্ব গেছে তাদের কাছে এটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডই। প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, বিভিন্ন ধরনের অগ্নিকাণ্ডের পর দেখা যায় যে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় রান্নাঘরের চুলা ও বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের জন্য অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকে। এবারের অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা না গেলেও, রান্নার চুলা থেকে আগুন লেগেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানতে পেরেছেন। যদিও স্থানীয় কয়েকজনের ধারণা, ফুচকা কারখানার কেরোসিনের চুলা বিস্ফোরিত হয়ে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। আমরা মনে করি যেভাবেই আগুনের সূত্রপাত হোক না কেন তা এক ধরনের অসচেতনতা। ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য যথাযথ সচেতনতার বিকল্প নেই। একই সাথে বসবাসের উপযোগী করাসহ যেকোনো স্থানকেই নিরাপদ রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি। স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। অনেক বস্তি এলাকাতেই দেখা যায় অবৈধ বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ নেয়া আছে। এসব সংযোগে নির্ধারিত লোডের চেয়েও অনেক বেশি লোড ব্যবহার করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়া নানারকম অব্যবস্থাপনার ফলেও সার্বক্ষণিক আশঙ্কা বিরাজ করে। এবারের অগ্নিকাণ্ডের স্থানে দেখা যায় যে, মূল সড়ক থেকে ১শ গজের মধ্যে টংঘরগুলোর অবস্থান হলেও সেখানে যাওয়ার রাস্তাটি খুব সরু। ফলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো সেখানে ঢুকতে না পেরে মূল সড়ক থেকেই লম্বা পাইপ দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পানি ছিটিয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে এ রকম স্থানে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও তা মোকাবেলা করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেয়া অপরিহার্য বলেই আমরা বিবেচনা করি। কেননা যত্রতত্র নিয়মবহির্ভূতভাবে বসবাস করা হলে তাতে নানা ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়। সার্বিকভাবে আমরা বলতে চাই, এবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসছে যে, অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষতি কি পূরণ হবে? যদিও ব্যাংক ঋণসহ বিভিন্ন সুবিধার কথা বলা হচ্ছে। আমরা মনে করি সরকারকে ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়টি নিয়ে যথাযথভাবে বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একই সাথে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কিছু দিন পরপরই এ রকম অগ্নিকাণ্ডে নিম্ন আয়ের মানুষের সর্বস্ব হারানোর আশঙ্কা তৈরি হবে, তা হতে পারে না। সচেতন হলে যে কোনো দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।