ঈদ উৎসবে অপরাধীদের অপতৎপরতাও বেড়ে যায়

 

ঈদ উৎসব ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। আপন ঠিকানায় ফিরছে দূরে থাকা সন্তানেরা। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার পথে পাহাড়সম দুর্ভোগ ঠেলেই পৌঁছুতে হয় তাদের। দূরে থাকা সংগ্রামী নারী-পুরুষের ঈদ উৎসবে বাড়ি ফেরার কষ্টকে অনেকেই নারীর প্রসব বেদনার সাথেও তুলনা করেন। কষ্ট যতোই হোক, বাড়ি ফিরে আপনজনদের কাছে পাওয়ার মজাটাই আলাদা। এর মাঝে মনোকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় যখন কেউ রাস্তায় বকশিসের নামে টাকা দিতে বাধ্য করে। বুকে চাকু ধরে হাতিয়ে নেয় টাকা। অজ্ঞান করে নতুন পোশাক নিয়ে সটকে পড়ে প্রতারক। এসব কারণেই সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের বাড়তি নজরদারির নির্দেশনা দিয়েছে। যদিও জনগণের জান-মালের নিরপাত্তা বিধানের কাজে যারা ঈদের দিনও দায়িত্ব পালন করেন তাদেরও আপন ঠিকানা আছে, আছে সন্তান, সংসার। সে কারণে কারো কারো মধ্যে ওদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ, বিশেষ মায়া জেগে ওঠে বটে।

প্রতিবারই ঈদের আগে পরে দূরপাল্লার কোচের ভাড়া কৌশলে অতিরিক্ত আদায় করা হয়। ওতে যতোটা না কষ্ট, তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয় অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ে। দুর্ঘটনা ঘটেও। আনন্দের যাত্রা হয়ে দাঁড়ায় মৃত্যু মিছিল। উৎসবের আমেজ বদলে নেমে আসে শোক, শোকের ছায়া। এবারও ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে তরতাজা প্রাণ। সড়কে ডাকাতি-ছিনতাই তো আছেই। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতিও ঈদকে সামনে রেখে বেড়ে যায়। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি ভাংবাড়িয়া এলাকায় ডাকাতদল নগদ টাকা, টেলিভিশন, ঈদের নতুন পোশাকআশাকও ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। পুলিশ পারেনি ডাকাত ধরে ডাকাতি করা মালামাল উদ্ধার করতে। এখন আর পুলিশ আগের মতো উদ্ধারে অতোটা সক্ষমতা দেখাতে পারে না। নানা অজুহাতে দায় এড়ানোর সুযোগ যখন থাকে তখন ডাকাত ধরে ডাকাতি করা মালামাল উদ্ধার আর কে করে? সড়ক ডাকাতিও ঈদ সামনে বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ছোট বড় চুরি। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বহুল পরিচিত বাদুরতলার একটি প্রতিষ্ঠানে চালের টিন কেটে যেভাবে চুরি হয়েছে তা দুঃসাহসিক। শহরের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই মোটরবাইক, বাইক চুরি লেগেই আছে। মাদক? পবিত্র রমজানেও চিহ্নিত স্থানগুলো অন্য সময়ের মতোই জমজমাট। এসবের পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে এক শ্রেণির সঙ্ঘবদ্ধ যুবকেরা দোকানে দোকানে ঈদ বকশিসের নামে চোখ রাঙিয়ে টাকা আদায় করে। এ বকশিস আদায় অবশ্য সরকারি চাকুরেদের কারো কারো মধ্যেও রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদের কেনাকাটার ভিড়ে যেমন টাকার জালনোট কারবারীরা সুযোগ নেয়, তেমনই পকেটমারও ঘুর ঘুর করে। মোদ্দা কথা, ঈদ উৎসবকে ঘিরে আমজনতার ব্যস্ততার মাঝে অপরাধীদেরও অপতৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়।

ঈদ সকলের মাঝে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। এ প্রত্যাশা পূরণে ইসলামধর্মের প্রকৃত অনুশাসনও চমৎকার সহায়ক। জাকাত ফেতরা পেয়ে দুস্থ দরিদ্রদের ঘরেও ফুটে ওঠে ঈদ উৎসব। কালক্রমে ধর্মীয় উৎসবগুলো এখন শুধু ওই ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেই সীমিত থাকেনি, ছড়িয়ে পড়েছে যেন সবার মাঝে। যেহেতু আমাদের সমাজে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যা গরিষ্ঠ, সেহেতু ঈদ উৎসব সমাজের অন্যতম প্রধান উৎসবে রূপায়িত। এ উৎসব ঘিরে ঘরে ফেরা দূরে থাকা সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহেরই নয়, এলাকাবাসীরও। দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক আইন মেনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বাড়তি ট্রিপের আশায় অস্বাভাবিক গতিতে বাস-ট্রাক চালানো যেমন পরিবহার করা দরকার, তেমনই দরকার আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের বাড়তি টহল, বাড়তি দায়িত্ব পালন। এলাকার আপন ঠিকানায় ফেরা, দূরে থাকা সকলকে ঈদ শুভেচ্ছা।

Leave a comment