চোরাচালান নয় : স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে হাঁটাই শ্রেয়

আমাদের দেশে গো-মাংসের ঘাটতি, পড়শি দেশ ভারতে উদ্বৃত্ত। চরম এ সত্যটা উপলব্ধি করে একটু ধৈর্য ধরলে ওরাই উজিয়ে টাকার বিনিময়ে গরু সীমান্তে গোছিয়ে দিয়ে যায়। অথচ আমাদের দেশের পাচারকারীরা সামান্য কিছু অর্থের লোভ সামলাতে না পেরে ভারত অভ্যন্তরে প্রবেশ করে শুধু নির্যাতনেরই শিকার হচ্ছেন না, নির্মমভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন। দেশের আত্মমর্যাদায় দাগ পড়ছে। তা ছাড়া চোরাচালানের মাধ্যমে চাহিদা পূরণে সাময়িক স্বস্তি পরিলক্ষিত হলেও তা স্বনির্ভরতা অর্জন তথা টেকসই উন্নয়নে চরম অন্তরায়। অর্থনীতিতে শেষ বেঞ্চের পড়ুয়ার কাছেও বিষয়টি খুব একটা অস্পষ্ট নয়। অথচ আমরা?
চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে দাম বাড়ে। কিছু ক্ষেত্রে হাউখাউ পড়ে যায়। সে কারণেই চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হয়। কোনো দেশ থেকে তা আমদানি করা সম্ভব না হলে চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে বিশেষ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নজর জরুরি হয়ে পড়ে। আমরা নানা কারণেই দেশে গো-মাংসের চাহিদা পূরণের মতো উৎপাদন করতে পারছি না। ঘরে ঘরে গরু মোটা তাজা করার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হলেও পাচারকারীদের কারণেই লাভের বদলে লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির হাটে গরু বিক্রি করতে গিয়ে দেশের বহু খামারিকেই পথে বসতে হয়েছে। তা ছাড়া গরু-ছাগলের সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও দেশে এখন পর্যন্ত অপ্রতুল।
প্রসঙ্গত, প্রতিবেশী দেশে গরু উদ্বৃত্ত। ধর্মীয় দৃষ্টিতে গরুকে বিশেষ মর্যাদায় দেখা হয় বলেই বৈধভাবে রপ্তানিতে তাদের বাধা। অবৈধভাবেও পাচারে অধিকাংশেরই আপত্তি। তারপরও বাজার প্রতিযোগিতার সরল সমীকরণে পাচার বন্ধ থাকেনি, থাকে না। ভারতের হরিয়ানাসহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে গরু বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় জড়ো করে ওই দেশের ব্যবসায়ীরাই। এরা পাচার করে। সীমান্তের এপারে পৌঁছে দিলে গরু প্রতি এক-দেড় হাজার বেশি লাগে। প্রাপ্ত তথ্যমতে- এ এক-দেড় হাজার টাকার জন্যই দেশের বহু পাচারকারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে তারকাঁটা কেটে গরু আনতে গিয়ে পশুর চেয়ে নিম্নমানের প্রাণীর মতো প্রাণ হারায়। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়। প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের কষ্টের খবর পত্রিকার পাতায় উঠে আসে।
অবশ্যই পরনির্ভরতা কোনো জাতির জন্য না কল্যাণকর, না মর্যাদার। স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য দরকার ঘাটতি পূরণে উৎপাদনে উৎসাহিত করার পাশাপাশি তা লাভজনক করার মতো বাস্তবমুখি পদক্ষেপ। বিশেষ এ উদ্যোগের যে বড্ড অভাব তা পদে পদে পরিলক্ষিত হয়। গরু পাচারের অজুহাতে মারণনেশাই শুধু নয়, মারণাস্ত্রও পাচার করে এনে দেশের সর্বনাশ ডেকে আনে চোরাচালান চক্র। চোরাচালানের কারণে সর্বক্ষেত্রেই স্বনির্ভরতা অর্জনের পথ রুদ্ধ হয়। ভেঙে পড়ে অর্থনীতি। ফলে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় গুলি করে হত্যা না করার অনুরোধের বদলে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথ মসৃণ করাই শ্রেয়।