সৈয়দ আশরাফের দফতর হারানোর নেপথ্যে

 

স্টাফ রিপোর্টার: সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নতুন পরিচয় দফতরবিহীন মন্ত্রী। আওয়ামী লীগের টানা দু বারের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছ থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আর এ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। আর এর মধ্যদিয়ে সমাপ্তি হলো গত দু দিন ধরে চলে আসা গুঞ্জনের। কিন্তু কি কারণে দফতর হারালেন আওয়ামী লীগের টানা দু বারের সাধারণ সম্পাদক। সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। গত মঙ্গলবার একনেক সভার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে তার মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেয়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিনই এ সংক্রান্ত নথি প্রস্তুত করে গণভবনে পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পরের দিন বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নথিতে স্বাক্ষর করেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাসে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলার সময় আস্তে আস্তে তার ক্ষমতার ধার কমতে থাকে। এ সময় বিএনপির সাথে আলোচনা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৈয়দ আশরাফের সম্পর্কের অবনতি হয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকে আশরাফকে অনুপস্থিত থাকতে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রধানমন্ত্রী।

ওই বৈঠকের নির্ধারিত এজেন্ডা ছিলো গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প-২। এরকম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অনুপস্থিতির জন্য মন্ত্রীর ওপর ক্ষোভের বহির্প্রকাশ হিসেবে সাথে সাথে তার কাছ থেকে দফতর কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশনাও দেন। তবে শুধুই একনেকের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকা নয়, সৈয়দ আশরাফের দফতরবিহীন মন্ত্রী হওয়ার পেছনে আরো কোনো কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন তারই সহকর্মীরা। তাদের অনেকেই এ সিদ্ধান্তে হতবাক হয়ে যান। তবে প্রকাশ্যে কেউ কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রী এ ঘটনার পর তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গত ছয় বছর ধরেই দলের শীর্ষ ও তৃণমূল নেতাসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা আশরাফের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি ফোন রিসিভ করতেন না। তাকে প্রয়োজনে পাওয়া যেতো না।

দিনের পর দিন গুরুত্বপূর্ণ দলীয় মিটিঙে অনুপস্থিত ছিলেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনও অনেক সময় রিসিভ করতেন না বলে জানা গেছে। তার জীবনযাত্রা নিয়ে রসালো আলোচনা হতো সরকার থেকে দলীয় ফোরাম পর্যন্ত। এতোকিছুর পরও আশরাফই ছিলেন দলীয় ফোরামে শেখ হাসিনার পর সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার আরো একদফা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাথে বৈঠক করেন। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। যদিও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাথে সাধারণ সম্পাদকের কি কথা হয়েছে তা জানা যায়নি। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যুবলীগের ইফতার পার্টিতে প্রধান অতিথি ছিলেন এই দফতরবিহীন মন্ত্রী। অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলে তিনি এ ব্যাপারে কিছু বলবেন না বলে জানান। অবশ্য মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জে এক ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়ে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, গুজবে কান দেবেন না।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মূলত ক্ষমতাধর হয়ে আবির্ভূত হন ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা জেলে যাওয়ার পর। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি লাইম লাইটে আসেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় এলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান সৈয়দ আশরাফ। পরবর্তীতে জাতীয় কাউন্সিলে ভারমুক্ত হয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক হন এই নেতা। তিন বছর পর কাউন্সিলে আবারো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করলে আগের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ই থাকে তার অধীনে।

Leave a comment