আলমসাধু অতিক্রম করায় সাতগাড়ির একদল যুবক ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকাশ্যে চালালো তাণ্ডব : শহর ফাঁড়ি পুলিশের সাহায্য মেলেনি!
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা শহর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে একদল যুবক প্রকাশ্যে মাইক্রোবাস ভাঙচুরসহ চালক ও এসএমসির সহকারী বিক্রয় প্রতিনিধিকে পিটিয়ে আহত করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে একাডেমি মোড়ে মাইক্রোবাস আড় করে দিয়ে সড়ক অবরোধ গড়ে তুলে শ্রমিকরা অবস্থান করতে থাকেন। তিন দিনের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে তিন ঘণ্টার মাথায় অবরোধ তুলে নেয়া হয়। তিন দিনের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করা না হলে শনিবার থেকে দূরপাল্লার কোচসহ সকল প্রকারের পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
আহত মাইক্রোবাসচালক চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মসজিদপাড়ার সানে আলম ওরফে মদনের ছেলে মারুফ হোসেন (২৬) ও এসএমসির সহকারী বিক্রয় প্রতিনিধি কেদারগঞ্জের শাহাবুদ্দিনের ছেলে জিয়াউর রহমানকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নেয়া হয়। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের মাইক্রোচালক শাখার সভাপতি মো. টোকন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তারা হলো- চুয়াডাঙ্গা সাতগাড়ির বিশের ছেলে খালিদ (২৫), আনিছের ছেলে রোকন (২৩), শহিদের ছেলে আসাদ (২৪), লাল মিয়ার ছেলে মামুন (২০), হবির ছেলে রফিকুল (২৪) ও মিনাজের ছেলে শুভ (২৪)। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আসামিদের তেমন কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আক্রান্ত মাইক্রোবাসের (ঢাকা-মেট্রো-চ-৫১-৬৫০৮) আহত চালক মারুফ হোসেন বলেন, মাইক্রোটি তহিবুর রহমান বাবুর। এসএমসির মালামাল সরবরাহের কাজে মাইক্রোটি ভাড়ায় খাটে। চালক হিসেবে আমি দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছি। জিয়াউর রহমান সাথেই থাকেন। তিনি এসএমসি কোম্পানির সহকারী বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মাইক্রোবাসযোগে আমরা দুজন চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার থেকে ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলাম। একাডেমি মোড়ে আলমসাধুযোগে বেশ কয়েকজন যুবক একই দিকে যাচ্ছিলো। আমরা স্বাভাবিকভাবেই অতিক্রম করি। প্রয়োজনে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই পেছন থেকে আলমসাধুর আরোহী যুবকদল হামলা চালিয়ে মাইক্রোবাস ভাঙচুর করতে থাকে। আমাদেরও রড দিয়ে মারতে শুরু করে। প্রকাশ্যেই গাড়ি ভাঙচুর করতে থাকে। আমরা প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ ফাঁড়ির মধ্যে ঢুকে পুলিশের সহযোগিতা চাই। অবাক হলেও সত্য যে, পুলিশ মাইক্রোবাস ভাঙচুর প্রতিরোধ দূরের কথা, আমাদের তেমন সহযোগিতাই করেনি। যুবকরা চলে গেলে আমরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাই।
এদিকে মাইক্রো ভাঙচুর ও চালককে মারধরের খবর মাইক্রোস্ট্যান্ডে পৌঁছুলে সহকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তারা একাডেমি মোড়ে মাইক্রো রেখে সড়ক অবরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় সকল রুটেই যান চালাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রিপন মণ্ডল, মাইক্রো শাখার সভাপতি মো. টোকন মিস্ত্রি, সাধারণ সম্পাদক জুলিয়াস আহমেদ মিন্টুসহ সকলেই সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। এরই মাঝে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সদর থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত হোসেনসহ সঙ্গীয় ফোর্স। পরিস্থিতি যখন টান টান উত্তেজনাকর, তখন সদর থানার ওসি হামলাকারীদের তিন দিনের মধ্যে গ্রেফতার করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এরই প্রেক্ষিতে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সড়ক অবরোধ স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে বলেন, তিন দিনের মধ্যে আসামিদের ধরে আইনে সোপর্দ করা না হলে শনিবার সকাল থেকে দূরপাল্লার কোচসহ সকল প্রকারের পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করবেন।
গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আসামিদের তেমন কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেছেন, গ্রেফতারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।