২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এখনো বেশ বাকি। ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের বড় আসর বসবে আগামী বছর মার্চ-এপ্রিলে, ভারতে। হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে এখনই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে পর পর দুটি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের লজ্জার হার ভাবনাটা যে বহুগুণে বাড়িয়েছে তা বলাই বাহুল্য। অথচ বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিলো দারুণ। ২০০৬-এর নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪৩ রানে জয় দিয়ে। দারুণ শুরুর পরও গত নয় বছরে ক্রিকেটের এ সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য সামান্যই। ৪৪ টি-টোয়েন্টির ৩১টিতেই হার। জয় ১২টি।
মাশরাফি বিন মুর্তজা আগেও বলেছেন, টি-টোয়েন্টিতে ভালো না খেলার মূল কারণ বেশি বেশি ম্যাচ না খেলা। সাকিব আল হাসান বাদে তেমন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ও নেই দলে। তবে অধিনায়ক এও বলেছেন, টি-টোয়েন্টি এমনই খেলা, এটাকে কেন্দ্র করে অনুশীলনও করতে পারবেন না। এ জন্য সামনে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ থাকতে হবে। খেলার মধ্যে থাকতে হবে। অবশ্য ব্যর্থতার জন্য এগুলো অজুহাত হতে পারে না। যখন একটা দেশের হয়ে খেলতে নামবেন, পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে সব জায়গায় নিজেদের সবটুকুই উজাড় করে খেলতে হবে।
সূচি অনুযায়ী, এ বছর শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ যা করেছে তা হতাশার কারণ বটে। সে কারণেই ভাবনায় এখনই উঠে এসেছে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি না খেলার প্রভাব বিশ্বকাপে যে পড়বে না, নিশ্চয়তা কী? মাশরাফি মনে করেন, খুব বেশি সমস্যা হবে না। কেননা, টুর্নামেন্টের আগে বাংলাদেশ যথেষ্ট সময় পাবে। যেমনটা পেয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের আগে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মাথায় রেখেই আগামী জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে তিনটি ম্যাচ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ এর আগে একবারই তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে। তা ছাড়া বিশ্বকাপের ঠিক আগমুহূর্তে এশিয়া কাপ। সেটিও এবার হবে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। মাশরাফি তাই বলেছেন, যতোটুকু সুযোগ আছে, তার পুরোটাই কাজে লাগাতে হবে, সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ার সাথে টেস্ট সিরিজের পর এ নিয়ে আমাদের কাজ শুরু করতে হবে। আমি মনে করি না আমরা খুব বাজে অবস্থায় আছি। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষেও আমরা কোনো না কোনো বিভাগে ভালো খেলছি। তবে আরও ভালো করতে আমাদের কিছু সময় লাগবে। এরপর যোগ করলেন, বিশ্বকাপের আগে একটা নির্দিষ্ট সময়ে অনুশীলন করলে আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে। ২০১৫ বিশ্বকাপের ছয় মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করায় ভালো ফল পেয়েছিলাম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেও বড় একটা সময় পাবো। মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারলে সব সমস্যা উতরে যেতে পারবো। মাশরাফির এ প্রত্যাশা তো দেশের ক্রীড়ামোদী সকলেরই। ভারতের সাথে টেস্ট-ওয়ানডেতে ম্যাচে ভালো করলো বাংলাদেশ। সেই বিজয়ের আমেজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে নেমেও ধরে রাখবে বলেই আশা ছিলো সকলের। হলো না, পর পর দুটি টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিঙে বিপর্যয় লালিত স্বপ্নে যেন কুড়ুলের আঘাত। এ ধাক্কা সামলে ওয়ানডেতে ম্যাচে ফেরার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকতে হবে। যে টি-টোয়েন্টিতে নেই, সেই সুযোগ ওয়ানডেতে কাজে লাগাতে না পারলে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের তৃপ্তিটা বড্ড তেঁতো হয়ে যাবে। টি-টোয়েন্টিতে আট ব্যাটসম্যান খেলিয়েও কেন এমন বিপর্যয়ে পড়তে হলো? জবাব খুঁজছে সকলে।
ব্যর্থতার দিনে অনেক ভুল-ত্রুটি বড় হয়ে দাঁড়ায়। গতকাল দেশের পরিচিত মাঠে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিঙেও যে পূর্ণ সন্তোষ প্রকাশ করা যায় তা নয়। ঢিলেঢালা ভাব ফুটে ওঠে মাঝে মাঝেই। নিশ্চয় আসন্ন ওয়ানডে সিরিজে একই ভুল বারবার করতে চাইবেন না মাশরাফিরা। এ প্রত্যাশা আমাদের। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার যে তাগিদ দক্ষিণ-আফ্রিকা দিলো, তা ভুলে গেলে ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের বড় আসরে লজ্জায় পড়তে হবে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে শেষ আটে স্থান করে নেয়ার মধ্যে যে প্রত্যয়ী পরিলক্ষিত হয়েছে তা আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেন ম্লান না হয়, সেদিকে নজর দেয়াই ভালো।