কবে সড়ক নিরাপদ করার কাজ শুরু হবে কে জানে!

রাস্তায় বের হয়ে সুহালে বাড়ি ফেরার ন্যূনতম নিশ্চয়তা নেই। আমাদের ছোট বড় প্রায় সকল সড়কই কালক্রমে আমরাই মৃত্যুপুরিতে রূপান্তর করে চলেছি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে পদে পদে। প্রতিদিনই ঝরছে রক্ত। সন্তান হারানো মাতা-পিতার কান্নায় ভারী হচ্ছে বাতাস। সবই যেনো গা সওয়া এক অবাক সমাজ!

সড়কে শ্যালোইঞ্জিনচালিত রাক্ষুসে অবৈধ যানের অবাধ চলাচল। সড়কের ধারে খেয়াল খুশিমতো বাস-ট্রাক রেখে ধোয়া-মোছা। কাঠের গুঁড়ি ফেলা এবং সড়কের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ- এসব কি ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী করেছে? মানুষেরই সৃষ্টি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে, হচ্ছে। দেদারছে ঝরছে তরতাজা প্রাণ। দুর্ঘটনায় জখম হয়ে পঙ্গুত্ব বরণে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। প্রতিকার?

যে সমস্যা আমজনতা সৃষ্টি করে, সেই সমস্যা দূর করার জন্যই তো আইন। আইন প্রয়োগে লোকবল নিয়োগ। অবৈধ যান প্রকাশ্যেই চলে। অবাক হলেও সত্য যে, বৈধ যানের কাগজপত্র যানচালকের সাথে না থাকলে জরিমানা হয়, পাশ দিয়ে বিকট শব্দ করে বেপরোয়াগতিতে ছুটে যায় অবৈধ যান, অবৈধ চালক। ওদের দিকে অতো দরদ বা কৃপা কেন? স্থানীয় প্রশাসনের এ সংক্রান্ত অধিকাংশ বৈঠকেই উঠে আসে কর্মসংস্থান প্রসঙ্গ। বলা হয়, অবৈধ যান চালানোর মধ্য দিয়ে অসংখ্য মানুষ বেকারত্বই শুধু ঘোচাচ্ছে না, কৃষি উৎপাদিত পণ্য সস্তায় আনা-নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করছে। পক্ষান্তরে বলা হয়, যতোজন বেকারত্ব ঘুচিয়ে সংসারে সচ্ছলতা এনেছে তার চেয়ে ঢের বেশি পরিবারের ঘাড়ে চেপে বসেছে পঙ্গুত্বের বোঝা। অবৈধ রাক্ষসরূপী ওইসব যানের কারণে কর্মক্ষম কতোজন পুরুষ হারিয়ে কতোটা পরিবারকে পথে বসতে হয়েছে? তার পরিসংখ্যান নেই। কারণ, বৈধ যানের বৈধ চালকের হাতে দুর্ঘটনা ঘটলে দু-একটি মামলা হলেও অবৈধ যান দুর্ঘটনায় হতাহতের বেলায় মামলা হয় না বললেই চলে। আর সড়কের পাশে ট্রাক বাস থামিয়ে রেখে ধোয়া-মোছাসহ নানা কাজের কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি? সেটাও কম নয়। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, শুধু কি এসব কারণেই দুর্ঘটনা? অবশ্যই না। আরো অনেক কারণ রয়েছে। তবে সব কারণের আড়ালেই আইন প্রয়োগে যথার্থতার অভাব যে পরিলক্ষিত হয় তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। কিন্তু কেন? কর্তব্যরত কর্তার কুম্ভঘুম ভাঙানোর মতো নেতৃত্বের অভাব আছে নিশ্চয়। তা না হলে অতো কান্নার পরও সম্মিলিত উদ্যোগের তাগিদ কোথায়? সমস্যা পাহাড়সম হলেও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা অপসারণ অসম্ভব নয়।

মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চায়। দুর্ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলার যুগ অনেক আগেই গত হয়েছে। বহু দেশ আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে যেমন পথচারীদের সতর্ক করতে সক্ষম হয়েছে, তেমনই চালক, আরোহী ও সড়ক বেদখল মুক্ত রাখার মধ্যদিয়ে দুর্ঘটনা বহুলাংশেই কমিয়ে আনতে পেরেছে। আমরা পরছি না। আমাদের পারতে হবে। আমাদেরকে পারার মতো করে শুরু করতে হবে। তবেই তো মিলবে প্রতিকার।

একটি অবৈধ যানকে জায়গা দিতে গিয়ে সড়কের পাশে থেমে থাকা ট্রাকের সাথে ধাক্কা মেরে তিন চাকার বেবিটেক্সি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। এ দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে শিক্ষাপর্ব প্রায় সম্পন্ন করা এক মেধাবীর স্বপ্ন। এভাবে আর কতোটা প্রাণ ঝরার পর পাবো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব? কবে সড়ক নিরাপদ করার কাজ শুরু হবে, কে জানে!