স্টাফ রিপোর্টার: একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে জটিলতা ও বিড়ম্বনার শিকার শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। গতকাল রোববার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘটনাকে ডেভেলপমেন্ট পেইন বা উন্নয়নের বেদনা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বড় কাজ করতে গেলে ছোট ভুল হতেই পারে। তবে এটা হোক আমরা তা চাই না। এটা উন্নয়নের সমস্যা, উন্নয়নের বেদনা।
ভর্তির ভোগান্তির বিষয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, বিভিন্ন ধরনের অনেক ভুল-ত্রুটি হয়েছে। এ কারণে আমাদের যে সব প্রিয় শিক্ষার্থী, সম্মানিত অভিভাবক ও শ্রদ্ধেয় দেশবাসী সমস্যায় পড়েছেন তাদের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের ভর্তি ব্যবস্থাকে উন্নতমানে নিয়ে যেতে আধুনিক, সহজতর ও প্রকৃতপক্ষে বিড়ম্বনামুক্ত করার লক্ষ্যে আমাদের এ প্রচেষ্টা ছিলো।
শিক্ষামন্ত্রী স্বীকার করেন, অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ছিলো। তিনি বলেন, এ কারণে ভর্তি কার্যক্রমে কিছু ত্রুটি হয়েছে। আমরা কম ঢাল-তলোয়ার নিয়ে বড় যুদ্ধে নেমেছিলাম। এ সময় তিনি ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো জটিলতা না হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, প্রতি বছর যে পদ্ধতিতে ভর্তি করা হয়, তা নিয়েও কিন্তু অনেক লেখালেখি, সমালোচনা, ভুল-ত্রুটির কথা উঠে আসে। এবার সেগুলো নেই। ভর্তি বাণিজ্য, ঘুষ দিয়ে ভর্তি হওয়া, স্বজনপ্রীতি ও কোচিং বাণিজ্য এ বিষয়গুলো এবার দূর হয়ে গেছে।
শিক্ষামন্ত্রী এবারের চার ধাপের ভর্তিই বিলম্ব ফি ছাড়া সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এখনও যারা ভর্তি হতে পারেনি, তারা কোনো প্রকার বিলম্ব ফি ছাড়াই আগামী ৩ সপ্তার মধ্যে ভর্তি হতে পারবে। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে চাই, হয় তো একটু বিলম্ব হচ্ছে, একটু উদ্বেগ হয়েছে। কিন্তু ভর্তি জটিলতার জন্য কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। শিক্ষা সচিবের সাথে দ্বন্দ্বের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের কৌশলী জবাবে মন্ত্রী বলেন, বড় কাজ করতে গেলে কিছু বাধা ও সীমাবদ্ধতা থাকবেই। এর মধ্যে আর কোনো ফাঁক খোঁজার কোনো কারণ নেই। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, আমি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে স্পেসিফিক্যালি টি-টোয়েন্টি খেলছি। শুধু টি-টোয়েন্টি না, টি-টোয়েন্টির লাস্ট ওভার খেলছি। পরামর্শ করে টিম স্পিরিট নিয়ে ডেফিনিটলি কাজ করছি। ছক্কা মারার চেষ্টা করছি, ছক্কা মারতে গেলে অনেক সময় আউট হয়, সেটা হতে পারে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আলাপ-আলোচনা হয়, সেখানে দ্বিমতও হতে পারে। তবে কোনো মনোমালিন্য নেই। এ প্রক্রিয়ায় যখন একবার সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে, তখন সিদ্ধান্তটা পালন করতে হবে। শিক্ষা সচিব এ সময় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান। ৬ জুন অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে একাদশ শ্রেণিতে এবারের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকেই নানা জটিলতায় পড়ে শিক্ষার্থীরা। তবে এটি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায় ২৫ জুন রাতে ফলপ্রকাশ করতে না পারায়। ৩ দিনের জটিলতার পর ২৮ জুন মধ্য রাতের পর ফল প্রকাশ পায়। এরপর শুরু হয় জটিলতার আরেক অধ্যায়। চলে ২ জুলাই পর্যন্ত। এরই মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়, শিক্ষামন্ত্রী এভাবে ভর্তি পদ্ধতি চাননি। কিন্তু শিক্ষা সচিবের একক ইচ্ছায় একতরফাভাবে এ পদ্ধতি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ রকম নানা আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে সংবাদ সম্মেলনে মুখ খুললেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ রোববারের এ সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবার নতুন পদ্ধতিতে ১১ লাখ ৫৬ হাজার ২২৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেছে। এদের মধ্যে যারা প্রথম মেধা তালিকায় নির্বাচিত হয়েছে, তাদের মধ্যে ৯ লাখ ২৩ হাজার ১০৫ জনের ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রীর এ হিসাবে চান্স পাওয়ার পরও নানা জটিলতায় ২ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি।