ঈদে আপন ঠিকানায় ফেরার প্রস্তুতির প্রথম পর্বেই ধাক্কা

স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন। ঢাকায় কর্মরতরা ঈদে বাড়ি ফিরে আপনজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এরই প্রথম ধাপ বাড়ি ফেরার জন্য কোচের টিকেট। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ পশ্চিম-দক্ষিণাঞ্চলের কোচের টিকেট পাওয়া যায় গাবতলির কাউন্টারগুলোতে। গত শুক্রবার থেকে আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হয়ে গতকাল রোববার তা শেষ হয়েছে। অবাক হলেও সত্য যে, কাউন্টারগুলোর অধিকাংশে থেকে শুরুর দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত টিকেট নেই বলে ফেরাতে শুরু করে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে কালোবাজারে টিকেট বিক্রির হিড়িক পড়েছে বলে আভিযোগ রয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন ধরে আসা যাওয়া করা পরিচিত যাত্রীদের ক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের কোচগুলোর কাউন্টার মাস্টাররা কিছুটা হলেও সৌজন্যতা দেখিয়েছেন।

জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তিনদিন দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর যাত্রীদের আগাম টিকেট বিক্রি করেছে গাবতলীকেন্দ্রিক পরিবহন কোম্পানিগুলো। টিকেট বিক্রির শেষদিন রোববার প্রায় সব কোম্পানির কাউন্টার থেকে টিকেট নেই বলে যাত্রীদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। তবে গাবতলী, টেকনিক্যাল ও শ্যামলীর বিভিন্ন কাউন্টারের আশপাশে চড়া দামে কালোবাজারে টিকেট বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, নামি-দামি বাস কোম্পানিগুলোর ঈদের আগের এক সপ্তা ১১-১৭ জুলাইয়ের টিকেট নেই। তুলনামূলক ছোট বাস কোম্পানিগুলোর কিছু গাড়ির পেছনের দিকের দু চারটি করে টিকেট রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া চলমান গাড়ির টিকেট সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। যাত্রীরা এসে তাৎক্ষণিক টিকেট নিয়ে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাচ্ছেন। ঈদ সামনে রেখে বাসের যাত্রীসংখ্যা বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিবহন সঙ্কট নেই বলে জানান তারা। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের রুটগুলোতে জনপ্রতি ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় এবং টিকেট কালোবাজারির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে হানিফ এন্টারপ্রাইজের জেনারেল ম্যানেজার মো. মোশাররেফ হুসেইন বলেন, টিকেট কাউন্টারগুলোর সামনে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক অবস্থান করেন, বিআরটিএর কর্মকর্তারাও ঘোরাঘুরি করেন। তাদের সামনে বাড়তি ভাড়া আদায় করা কী সম্ভব? তিনি বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় করছি। অন্যান্য সময়ে কম ভাড়া আদায় করায় যাত্রীদের কাছে ঈদে বেশি ভাড়া আদায় করছি বলে মনে হচ্ছে। কালোবাজারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। হানিফ পরিবহনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এ ধরনের কাজ করতে পারে না। বড় কোম্পানিগুলো নিজেদের সুনাম ধরে রাখতে এ ধরনের খারাপ কাজ প্রশ্রয় দেয় না। তিনি আরও বলেন, কেউ যদি যাত্রীবেশে টিকেট নেয়ার পর তা বেশি দামে অন্য কারো কাছে বিক্রি করে তার দায়-দায়িত্ব আমাদের নয়।

আগাম টিকেট বিক্রির শেষদিন রোববার গাবতলী বাসটার্মিনালে যাত্রীদের উপস্থিতি দেখা যায়। তবে শুক্র ও শনিবারের তুলনায় ভিড় কম ছিলো। বেশিরভাগ বাস কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতারা খোশ মেজাজে ছিলেন। তবে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ ছিল। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই আগভাগে বাড়িতে যেতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ঈদের ভিড় ও যানজট এড়াতে নারী ও শিশুদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন অনেকে।

এদিকে হানিফ, ঈগল, শ্যামলী, নাবিল, এসআরসহ কয়েকটি বাস কোম্পানির কর্মচারীরা জানান, আগাম টিকেট বিক্রির পর্ব শেষ হয়েছে। এবার টিকিট নেয়া যাত্রীদের ভালো ভালো গন্তব্যে পৌঁছে দেয়াই আমাদের প্রধান টার্গেট। বাড়তি দামে আগাম টিকেট কেনার পর গোপালগঞ্জের যাত্রী মো. ফিরোজ আহমেদ জানান, কাউন্টারের বাইরের এক পরিবহন শ্রমিকের কাছ থেকে কমফোর্ট লাইন প্রাইভেট লিমিটেডের ১৬ জুলাইয়ের দুটি টিকিট কিনেছেন। প্রতিটি টিকিটের জন্য ৫০ টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। সকালের বাসের টিকিট চাইলেও রাতেরটা দেয়া হয়েছে। দালালদের কাছ থেকে অনেকেই চড়া দামে টিকিট কিনছেন। হানিফ কাউন্টারের পাশে রবিউল নামে এক ব্যক্তি ৫০০ টাকা অতিরিক্ত দিলে টিকেট দেয়ার কথা জানান। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় জানার পরই সটকে পড়েন ওই ব্যক্তি।

ঢাকার গাবতলি টার্মিনাল কাউন্টারগুলো থেকে টিকেট না পেয়ে ফেরা যাত্রীদের অনেকেই বলেছেন, প্রতিবার ঈদেই টিকেট নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এবারও ব্যতিক্রম নয়। ও যেনো চেনা ছবি।

Leave a comment