চুয়াডাঙ্গা মোমিনপুরের সাংবাদিক সদরুল নিপুল খুন মামলা

মুখ না খোলায় ক্যাপ্টেনকে ফের রিমান্ডে নেয়ার প্রক্রিয়া

 

স্টাফ রিপোর্টার: তারিক আজিজ ক্যাপ্টেন প্রথম দফা ৫ দিনের রিমান্ডে সাংবাদিক সদরুল নিপুল খুনের কথা স্বীকার না করলেও কিছু তথ্য দিয়েছে। স্বীকার না করায় তাকে আবারো রিমান্ডের আবেদন জানানো হতে পারে। আজ অথবা আগামীকাল তাকে আদালতে সোপর্দ করে এ আবেদন জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

ট্রেনে কেটে নয়, সাংবাদিক সদরুল নিপুলকে পরিকল্পিতভাবেই মেরে রেললাইনে ফেলে রেখে খুন করেছে ঘাতকচক্র। স্টেশনের আমগাছসহ রেলওয়ের সম্পদ লুটপাট করা সঙ্ঘবদ্ধ নেশাখোররাই যে তাকে খুন করেছে তা স্থানীয়দের মধ্যে এখন আর অজানা নয়। মামলার কয়েকজন তদন্তকারী ইতোমধ্যে পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে পোড়াদহ জিআরপি থানার এসআই আশফাকুর রহমান তদন্ত করছেন। তত্ত্বাবধানে রয়েছেন থানার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হক। জিআরপি সৈয়দপুর রেঞ্জের ডিআইজিও সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যা মামলাটির বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ রাখেন।

খুনিরা কৌশলে সাংবাদিক সদরুল নিপুলকে মোমিনপুর স্টেশনে নিয়ে বেঁধে রাখে। নির্মমভাবে নির্যাতন করে। মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে রাখে রেললাইনের ওপর। রাতেই ট্রেনে কাটা পড়ে। গত বছরের ২১ মে ভোরে উদ্ধার করা হয় খণ্ডবিখণ্ড মৃতদেহ। সাংবাদিক সদরুল নিপুলের স্ত্রী নিলিমা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার এজাহার নামীয় আসামি ক্যাপ্টেন। সে আত্মগোপন করে ঢাকায় অবস্থান নেয়। ঢাকার অপরাধ জগতের রাঘববোয়ালদের সাথে হাত মেলায়। ঢাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে। ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেয় সে। ঢাকায় ধরা পড়ার পর সে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর নীলমণিগঞ্জের সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যা মামলার আসামি বলে জানালেও খুনের বিষয়ে তেমন মুখ খোলেনি। তাকে সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যা মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। তাকে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে আদালতে হাজির করার রিমান্ড শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে তার রিমান্ড শুরু হয়। রিমান্ডে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সে খুনের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে কিছু তথ্য দিয়েছে বলে পুলিশসূত্র জানিয়ে বলেছে, প্রথম দফায় সে খুনের কথা অস্বীকার করায় তাকে আবারো রিমান্ডে নেয়ার প্রক্রিয়া করছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আশফাকুর রহমান।

উল্লেখ্য, সদরুল নিপুল ছিলেন দৈনিক মাথাভাঙ্গার মোমিনপুর প্রতিনিধি। গতবছর ২০ মে রাতে বাড়ির অদূরবর্তী মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশনে কৌশলে ডেকে নেয়া হয়। এরপর খুনিরা তাকে নির্মম নির্যাতন করে। পরদিন ভোরে উদ্ধার হয় লাশ। ঘটনার পর থেকেই স্টেশনের মাদকচক্র আত্মগোপন করে। হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে স্টেশন প্লাটফর্মে নির্যাতনের দৃশ্য এক দরিদ্র নারী দেখলেও তিনি ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি বলে জনশ্রুতি ওঠে। মোমিন ও নিমাই নামের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের নিকট থেকে পুলিশ খুনের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয় তারা। এজাহার নামীয় আসামি ক্যাপ্টেনও প্রথম দফায় রিমান্ডে মুখ খোলেনি। মুখ না খোলায় কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ক্যাপ্টেনের মতো দাগীর মুখ থেকে খুনের বিষয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করতে না পারার আড়ালে কি অন্য কিছু লুকিয়ে আছে? মামলার বাদীসহ সদরুল নিপুলের নিকটজনদের মাঝেও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

Leave a comment