একাদশে ভর্তিতে আরও দুটি মেধা তালিকা হবে

 

স্টাফ রিপোর্টার: এবার অনলাইনে একাদশ শ্রেণির ভর্তি নিয়ে ব্যাপক শোরগোল হয়েছে। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই একাদশ শ্রেণির প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর লাখ লাখ শিক্ষার্থী নানা বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। কোনো ধরনের সমাধান না পাওয়ায় তাদের দুর্ভোগেরও অন্ত নেই। কোনো উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য হয়ে এখন তৃতীয় ও চতুর্থ মেধা তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটি। কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবু বক্কর সিদ্দিক এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা পরপর চারটি মেধা তালিকা প্রকাশ করব। নতুন করে আরও দুটি তালিকা প্রণয়ন করে প্রকাশ করা হবে। ৬ জুলাই প্রকাশিতব্য দ্বিতীয় মেধা তালিকার শিক্ষার্থীরা ১০ জুলাই পর্যন্ত কলেজগুলোতে ভর্তি হতে পারবে। এজন্য তাদের কোনো বিলম্ব ফি দিতে হবে না। তিনি জানান, যেসব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী প্রথম ও দ্বিতীয় মেধা তালিকায় ভর্তির সুযোগ পায়নি, অথবা সুযোগ পেলেও কলেজ পছন্দ না হওয়ার কারণে ভর্তি হয়নি, তাদের জন্য তৃতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। তারা ৯ ও ১০ জুলাই নতুন করে শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করতে পারবে। এই শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে ১১ জুলাই। ১২ জুলাই তৃতীয় মেধা তালিকার এ ছাত্রছাত্রীরা কলেজে ভর্তি হতে পারবে। এজন্য তাদেরও কোনো বিলম্ব ফি গুনতে হবে না। এ তিন ধাপের মেধা তালিকা প্রকাশ করার পরও কোনো ভর্তিচ্ছুর সমস্যা থাকলে তাদের জন্য চতুর্থ মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। চতুর্থ তালিকার ভর্তিচ্ছুদের ১৩ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ৫০ টাকা ফি দিয়ে বোর্ডে আবেদন করতে হবে। এ আবেদনকারীদের ফল প্রকাশ করা হবে ২৩ জুলাই। সর্বশেষ তৈরি এই মেধা তালিকার ভর্তিচ্ছুদের জন্য নির্ধারিত কলেজে ভর্তি হতে হবে ২৫ ও ২৬ জুলাই। কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে শেষ দফার এই ভর্তিচ্ছুদের অবশ্য ৫০ টাকা করে বিলম্ব ফি পরিশোধ করতে হবে।

এর আগে চার দফা পেছানোর পর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির মেধা তালিকা প্রকাশ করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। এতে যে মেধা তালিকা দেয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি তালগোল পাকানো। তালিকা অনুযায়ী মেয়েদের কলেজে ছেলেদের ভর্তি দেয়া হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের বাতিল করা কলেজেও দেয়া হয়েছে ভর্তির মনোনয়ন। বাণিজ্য বিভাগ নেই- এমন কলেজেও পাঠানো হয়েছে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের। মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বিজ্ঞান বিভাগে। আবেদন করেনি এমন কলেজেও পাঠানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

ঢাকা বোর্ড জানায়, আগের সিদ্ধান্ত অনুসারে দুটি মেধা তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে এখন চারটি মেধা তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম মেধা তালিকা গত রোববার প্রকাশ করা হয়। ত্রুটিপূর্ণ এ তালিকা নিয়ে এরই মধ্যে সারা দেশে ভর্তিচ্ছু আর অভিভাবকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। গত বৃহস্পতিবার এ তালিকা অনুসারে ভর্তির সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে শুক্র ও শনিবারও কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটি জানিয়েছে। প্রথম মেধা তালিকায় যাদের নাম আছে এ দু দিন তারা ভর্তি হতে পারবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ঘোষণা দিলেও রাজধানীর কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি কার্যক্রমে অংশ নেয়নি।

কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী ২ জুলাই ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ায় শুক্রবার কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে আসেনি। এরই মধ্যে সবাই ভর্তি শেষ করেছে। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, সিটি কলেজে ভর্তি কার্যক্রম ছিলো না বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে এ বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বলেন, ১ হাজার ৩৮০ জনের মধ্যে বিজ্ঞানে ৬০, বাণিজ্যে ৪০ জন ভর্তি অবশিষ্ট রয়েছে। শুক্রবার তো কোনো ভর্তি নেয়া হয় না। ঢাকা বোর্ড থেকে তো নির্দেশনা দেয়া আছে শুক্র ও শনিবার ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে আসেনি। আর একটি কলেজের অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুক্রবার ব্যাংক খোলা না থাকলে শিক্ষার্থীরা টাকা জমা দিতে পারবে না। এজন্য ভর্তিও হয়নি।

সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, যারা ভর্তি হওয়ার তারা ২ জুলাইয়ের মধ্যে ভর্তি হয়ে গেছে। ১ হাজার ২০০ আসনের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১০০ ভর্তি হয়েছে। বাণিজ্যে ২০১ জনকে মনোনয়ন দেয়া হলেও ভর্তি হয়েছে ১০০’র কম শিক্ষার্থী। তবে ঢাকা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে গেছে এবারের ঢাকা বোর্ডে প্রথম হওয়া ডেমরার সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ঢাকা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা শিক্ষার্থী ভর্তি করেছি। শুক্রবার আমাদের তিন বিভাগ মিলে ৮০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞানে ৭০, ব্যবসায় ৫ এবং সাধারণ শাখায় ৫ শিক্ষার্থী। অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় কারিগরি জটিলতা কাটিয়ে নির্ধারিত সময়ের তিন দিন পর ২৮ জুন মধ্যরাতে প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশ করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। প্রথম দফায় ভর্তির জন্য ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৪ শিক্ষার্থী মনোনীত হয়। ২৯ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত কলেজে ভর্তির সময় বেঁধে দেয়া হলেও অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতা দেখা দেয়। এতে কলেজ কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ভর্তিচ্ছুরাও চরম বিপাকে পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে শুক্র ও শনিবারও ভর্তির ঘোষণা দেয় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। ৬ জুলাই দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এদিকে, প্রথম দফায় কোন কলেজে কত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই ৪ জুলাইয়ের মধ্যে তা অনলাইনে নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।