আগাম টিকেটে বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বেসরকারি বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু
স্টাফ রিপোর্টার: রোজার ঈদ সামনে রেখে বরাবরের মতোই বিড়ম্বনা আর বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগের মধ্যে ঢাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণ জনপদের বিভিন্ন গন্তব্যে বাসের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। ভোর থেকে কঠিন সংগ্রাম করে যারা টিকেট পেয়েছেন, তারা ঘরে ফিরেছেন আনন্দ নিয়ে। আর যারা কাউন্টারে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত দিনের টিকেটের নেই শুনছেন, তাদের মুখে নামছে আঁধার।
অনেকেই অভিযোগ করেছেন, আগের কোনো গন্তব্যের জন্য টিকেট কিনলেও তাদের কাছ থেকে বাসের শেষ গন্তব্যের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আবার একটি পরিবহন সংস্থা বেশি ভাড়া আদায়ের যুক্তি হিসাবে বলেছে, তারা অন্যসময় কম নিলেও এখন সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছে। প্রতি ঈদেই বাসের আগাম টিকেট কিনতে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় গাবতলী বাস টার্মিনালে। শুক্রবার আগাম টিকেট বিক্রির প্রথম দিনও সেখানে দেখা গেলো একই চিত্র।
ঠাকুরগাঁওয়ের টিকেট কিনতে গাবতলীর বালুরমাঠে হানিফ কাউন্টারে আসা বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী নবাব আলী বলেন, ৬০০ টাকার টিকেট ৮৫০ টাকা নিচ্ছে। ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য টিকেট নিলেও ভাড়া নেয়া হচ্ছে বালিয়াডাঙ্গার। একই অভিযোগ পাওয়া গেল কল্যাণপুরে হানিফ কাউন্টারে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণবের কাছে। তিনি জানান, এমনিতে যশোরের টিকেট ৪৮০ টাকা হলেও এখন নেওয়া হচ্ছে ৬৫০ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার (উত্তরাঞ্চল) মো. ওয়াহিদুজ্জমান বলেন, আমরা টিকেটের গায়ের যে মূল্য সেটাই নিচ্ছি। তবে যে যেখানেই নামুক, টিকেটে লাস্ট স্টপেজের ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এবার ঈদে সরকারি ছুটি ১৭ থেকে ১৯ জুলাই। এ কারণে ১৫ ও ১৬ জুলাইয়ের টিকেটের চাপ বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, সবাই যাতে টিকেট পায়। আমাদের পর্যাপ্ত গাড়ি আছে।
আশুলিয়া থেকে দিনাজপুরের টিকেট কিনতে আসা গার্মেন্ট কর্মী গোলাম রব্বানী হানিফ কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সেহেরির পরপরই। বেলা ১১টায় টিকেট পাওয়ার পর তার চোখেমুখে ফুটে বেরুচ্ছিল আনন্দ। তিনি বলেন, পাঁচটা চাইছিলাম, তিনটা পাইছি। ঈদে বাড়ি যাবো। কিন্তু লাইনে দাঁড়ানো সবাই তার মতো সৌভাগ্যবান নন। কাউন্টারের সামনে পৌঁছানোর পর অনেককে বলা হচ্ছে, তার গন্তব্যে নির্ধারিত তারিখের টিকেট আগেই শেষ হয়ে গেছে।
দিনাজপুরের টিকেট সংগ্রহ করতে আসা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক মঞ্জুরুল হকের অভিযোগ, বেশি লাভ করতে বাস মালিকরা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করছেন। এখানে আরটিফিশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করা হচ্ছে। যার ফলে আতঙ্কে পড়ে যাত্রীরা বেশি দামে টিকেট সংগ্রহ করে নিচ্ছে। সচরাচর ঢাকা থেকে রাজশাহী ৬০০ টাকা ছিলো, এখন সেটা ৬৫০ টাকা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মন্টু কুমার ঘোষ বলেন, আমরা সব দিনের টিকেটই দিচ্ছ। তবে ১৬/১৭ তারিখে চাপ বেশি থাকায় কমবেশি করে দিচ্ছি। মালিক সমিতির নির্ধারিত রেট অনুযায়ী আমরা ভাড়া নিচ্ছি।
নাবিল পরিবহনের কাউন্টারের সামনে টিকেট প্রত্যাশীদের সাথে কথা বলে জানা গেলো, সাধারণ সময়ের তুলনায় এখন টিকেটপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। নীলফামারীর চিলাহাটির যাত্রী বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, সাভার থেকে সকাল ৬টার দিকে এসে ১২টার সময় টিকেট পেলাম। এমনিতে টিকেটের দাম ৫৫০ টাকা ছিলো। আজ নিলো ৭৫০ টাকা। নাবিল পরিবহনের রংপুর সেকশনের কাউন্টার মাস্টার রায়হান সরকার অন্য সময়ের তুলনায় বেশি ভাড়া নেওর কথা স্বীকার করলেও তিনি বলছেন, এটা বাড়তি ভাড়া নয়। আগে মালিক সমিতির নির্ধারিত রেটে ভাড়া নেয়া হতো, এখন কিলোমিটার অনুযায়ী সরকারি রেট নেয়া হচ্ছে। তাই যাত্রীদের কাছে ভাড়া বেশি মনে হচ্ছে। এদিকে আগাম টিকেট কিনতে এসে বুকিঙের কারণে টিকেট না পেয়ে ঈদযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানালেন কয়েকজন।
যশোরের চৌগাছার টিকেট সংগ্রহ করতে গাবতলীতে আসা ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম তিনি বলেন, ভোর ৬টায় এসেছি। ১৬ তারিখ বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো, কিন্তু ওই রুটের ভালো বাসগুলোর কোনোটিরই ১৬ তারিখের টিকিট পেলাম না। তারপর ১৪ তারিখের টিকিট খুঁজলাম- তাও পেলাম না। শেষে ১৮ তারিখ রাতের টিকিট পেয়েছি।
ঢাকা-যশোর রুটের ভালো বাস হিসেবে পরিচিত হানিফ পরিবহন, একে ট্রাভেলস, সোহাগ পরিবহন সবগুলোতে একই অবস্থা বলে জানান তিনি। রংপুরের টিকেট সংগ্রহ করতে আসা এসআর ট্রাভেলসের কাউন্টারের সামনে সকাল ১০টা থেকে দাঁড়িয়ে থাকা মাহমুদুর রহমান বলেন, তিন ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। টিকেটের দেখা নেই। সব জায়গায় এক অবস্থা। টিকিট ভেতরে আছে ঠিকই- কিন্তু ওরা দেবে না। ১৫ তারিখের আগাম টিকেট কাটার জন্য এসেছিলেন বলে জানান তিনি।
কুষ্টিয়ার পারভেজ রানার সাথে কথা বলে এই বুকিং বিষয়টি কিছুটা বোঝা গেলো। তিনি বলেন, আমার টিকেট পেতে সমস্যা হয়নি, লাইনেও দাঁড়াতে হয়নি। আগে থেকে বুক করা ছিলো। ঢাকা-বাগেরহাট রুটের জেআর ট্রাভেলসের কাউন্টার মাস্টার মো. জিলাল হায়দার বলেন, অনেক যাত্রীর সাথে পরিবহন স্টাফদের বিশেষ খাতির থাকে। তারা স্টাফদের হাত করে নেয়। সেই সুবাদে আগে থেকেই আগাম টিকেটের বুকিং দিয়ে রাখে। আনুষ্ঠানিকভাবে শুক্রবার টিকেট বিক্রি শুরু হলেও দশ রোজার আগে থেকেই অনেক টিকেট এভাবে বুক হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। বুকিঙের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে ঢাকা-সাতক্ষীরা রুটের ঈগল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার বশির আহমেদের বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। বুকিং এর কথা বলছেন…. সবাই ১৬ তারিখের টিকিট চায়। সবাইকে তো এক দিনের টিকিট দেয়া সম্ভব না।