দামুড়হুদার মদনায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে খুনের বদলে খুন
মদনা থেকে ফিরে হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: দামুড়হুদা মদনায় পৈত্রিক ভিটা-জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাতিজাদের ধারালো অস্ত্রে কোপে খুন হয়েছেন চাচা রহমতুল্লাহ। গতকাল দুপুরে নিজ বাড়িতে ভাতিজা আয়নাল ও ফরজসহ ৭-৮ জন রহমতুল্লাহ ওপর হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করে। এ সময় রহমতুল্লাহর স্ত্রী আমেনা বিবিকেও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে দেড় বছর আগে রহমতুল্লাহ খুন করে বড় ভাই কাশেমকে। জমি-জায়গা ও খুনের জের ধরে ভাজিতা আয়নাল ও ফরজের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন রহমতুল্লাহ। এক পর্যায়ে ভাতিজারা উত্তেজিত হয়ে চাচাকে প্রকাশ্য কুপিয়ে খুন করে। রহমতুল্লার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি হত্যামামলা করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক রয়ে বলে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।
গ্রামবাসী ও প্রত্যাক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের মদনা পাঠানপাড়ার মৃত শামসুদ্দীনের ছেলে রহমতুল্লাহ ও তার ছোট ভাই আবুল কাশেমের সাথে ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাঁশ কাটাকে কেন্দ্র করে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৭-৮ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে আবুল কাশেম মারা যান। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃতে আবুল কাশেমের দু ছেলে আয়নাল ও ফরজের জমিজমা নিয়ে চাচা রহমতুল্লার সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এ সময় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আয়নাল, ফরজসহ ৬-৭ জন হামলা চালায় রহমতুল্লার ও তার স্ত্রী আমেনা বিবির ওপর। হামলাকারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে রহমতুল্লাহ ও আমেনা বিবিকে। আমেনা বিবি পালিয়ে রক্ষা পেলেও হামলাকারীদের হাতে প্রাণ দিতে হয় রহমতুল্লাহকে। ভাতিজাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান রহমতুল্লাহ (৬৫)। কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে আমেনা বিবি (৫৮) ও প্রতিবেশী জয়তুননেছাকে (৬৫)। আহতদের মধ্যে আমেনা বিবির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গোটা গ্রামের লোকজন ভিড় জমায় ঘটনাস্থলে। খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছান দামুড়হুদা থানার ওসি কামরুজ্জামান, ওসি (তদন্ত) আজিজুর রহমান ভূঁইয়া, দর্শনা আইসি ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান এবং এসআই আ. গফুর। পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য নেয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে।
জানা গেছে, রইচ উদ্দিনের ছেলে রহমতুল্লা ও আবুল কামেশের পৈত্রিক জমিজমা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। দু ভাইয়ের মধ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়া রাস্তাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব আরো ঘনীভূত হয়। দিন দিন দু ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর শনিবার ভোরে ঝাড়ের বাঁশ কাটাকে কেন্দ্র দু ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে রহমতুল্লাহর ছেলে জয়নাল, আলীম স্ত্রী আমেনা ওপর পক্ষের আবুল কাশেম, ছেলে আয়নাল, ফরজ ও ইদ্রিস। দু পক্ষের সংঘর্ষে রক্তাক্ত জখম হয় সকলেই। মুমূর্ষু অবস্থায় ৮ জনকেই উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নেয়া চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যান আবুল কাশেম (৫৫)। ওই দিনই দামুড়হুদা থানা পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্রেফতার করে রহমতুল্লাহ (৫৮), ছেলে জয়নাল (২৮) ও আলীমকে (২৫)। ওই মামলায় হাজতবাস শেষে মাস তিনেক আগে তারা জামিনে মুক্ত হয়। পিতার হত্যাকারীর ওপর প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে আয়নাল ও ফরজ। অবশেষে খুনের বদলে খুন করে নিলো প্রতিশোধ। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে রহমতুল্লার লাশ আনা হয় বাড়িতে। সন্ধ্যায় স্থানীয় গোরস্তানে রহমতুল্লাহর লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে জয়নাল বাদী হয়ে আয়নাল ও ফরজসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গতকালই দামুড়হুদা থানায় হত্যামামলা দায়ের করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ খুনের ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।