শিক্ষার্থীদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কুতুবপুর কলেজে ভর্তিতে বাধ্য

গাংনীর কুতুবপুর ও বামন্দী স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশংসাপত্র বিক্রি

 

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কুতুবপুর ও বামন্দী স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পাস করা ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রশংসাপত্র বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রছাত্রীরা কলেজে ভর্তির প্রয়োজনে ৫০০-৮০০ টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করেছে প্রশংসাপত্র। অন্যদিকে কুতুবপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসপি পাস করা ছাত্রছাত্রীদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ওই কলেজে ভর্তিতে বাধ্য করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। দেশের শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের নানামুখি সুযোগ সুবিধার সময়ে প্রতিষ্ঠান দুটির এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে শিক্ষা বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন।

অভিযোগে জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় কুতুবুপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র সহগলপুর গ্রামের নাইম হোসেন কয়েক দিন আগে প্রশংসা পত্র নেয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইদুর রহমানের কাছে ফোন করে। নাইমকে তিনি ৮শটা নিয়ে আসতে বলেন। দরিদ্র পরিবারের পক্ষে ভর্তির টাকা জোগাড় করতেই যখন নাজেহাল অবস্থা, তখন প্রশংসাপত্রের টাকার বিষয়টি যেন মাথায় বজ্রপাতের শামিল। শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের সদস্যদের কাকুতি-মিনতির পর ৪শ টাকায় রাজি হন সাইদুর রহমান। তবে টাকা নিয়ে প্রশংসাপত্র দিলেও রশিদ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি। জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে টাকা নিয়েই প্রশংসাপত্র দেয়া হচ্ছে।

পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের লক্ষ্যে টাকা নেয়া হয়েছে। এটি কমিটির সিদ্ধান্ত। সরকারি নীতিমালায় টাকা নিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশংসাপত্র বিতরণের সরকারি নির্দেশনা কেন মানা হচ্ছে না সে প্রশ্নের সদুত্তোর দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। শুধু টাকা নিয়ে প্রশংসাপত্র নেয়ার ঘটনা নয়, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আরো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ। চলতি বছরে প্রতিষ্ঠানটির ৬০ জন পরীক্ষার্থীর মাধ্যে পাস করে ৫৫ জন। তবে এ সকল শিক্ষার্থীর ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ ছিনিয়ে নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কমিটির সদস্যবৃন্দ। পাস করা সকল শিক্ষার্থীর রোল নম্বর দিয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসএমএম’র মাধ্যমে ভর্তির আবেদন করা হয়। প্রতিষ্ঠানের কলেজে ছাত্রছাত্রীগুলো ভর্তি করার জন্য এই হীন কাজটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ভুক্তভোগী ছাত্রী গাড়াবাড়িয়া গ্রামের তোতা মিয়ার মেয়ে চম্পা খাতুন জানান, তার জীবনের একটি বড় স্বপ্ন ছিলো মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজে লেখাপাড়া করবে। কিন্তু সে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। শিক্ষকরা তার ভর্তির জন্য প্রথম পছন্দ দিয়েছে কুতুবপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এতে তার মহিলা কলেজে ভর্তির স্বপ্ন ভেঙে গেছে। এ ঘটনায় চম্পা খাতুনসহ তার পরিবারের সদস্যরা চোখে শুধুই অন্ধকার দেখছেন। বিষয়টি গতকাল বুধবার সকালে চম্পার পরিবারের লোকজনসহ আরো কয়েকজন অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রী প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। এ নিয়ে সহকারী অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলামের সাথে বাগবিতণ্ডা শেষে কোনো সমাধান করতে না পেরে বাড়ি ফিরে যান তারা। চম্পাসহ অনেক ছাত্রছাত্রীর ভালো কলেজে পড়ার স্বপ্ন ছিনিয়ে নেয়ায় তারা এখন কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশংসাপত্র বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে বামন্দী স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এসএসসিতে কৃতকার্য রুমানা আক্তার টনির পিতা বামন্দীর মজিবর রহমান জানান, মেয়ের প্রশংসাপত্র নিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দিতে হয়েছে ৫শ টাকা। তার মতো অনেক অভিভাবক নিরুপায় হয়ে টাকার বিনিমেয় প্রশংসাপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে আব্দুল হাদির মোবাইলে যোগাযোগ করলেও তার সাথে কথা হয়নি। এদিকে প্রতিষ্ঠান দুটির এই ব্যবসায়িক মানসিকতায় হতবাক ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দ। দায়ী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন তারা। গাংনী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন। তিনি জানান, যারা ছাত্রছাত্রীদের জীবন নিয়ে নগ্ন খেলায় মেতেছে তাদের সাজা হওয়া উচিত। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার তাই করা হবে।

Leave a comment