কেরুজ চিনিকলের ৪ মরসুমের ৬৭ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত : চিনি বিক্রির নয়া কৌশলে সাড়া
হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: মানবদেহের জন্য চরমভাবে ক্ষতিকর ঘন চিনি বা সোডিয়াম সাইক্লামেট। এ চিনির দাম কমাতে সাথে মেশানো হয় বিষাক্ত সার ম্যাগনেসিয়াম সালফেট। এ যেন বিষের সথে বিষ মিশিয়ে বানানো বিকল্প চিনি। সাদা ধবধবে দেখতে সুন্দর এ বিকল্প চিনির এক কেজিতে ৫০ কেজি আসল চিনির কাজ হয়। এ ভেজাল ঘন চিনি দিয়ে তৈরি হচ্ছে মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য, চকোলেট, আইসক্রিম, কনডেন্সড মিল্ক, বেকারি ও বেভারেজ দ্রব্য। বিষ মেশানো এসব খাবার খেয়ে ক্যান্সার, কিডনি বিকল, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কোনো প্রকার ভেজাল না দেয়া দেশে উৎপাদিত চিনির কদর কমেছে। যার কারণে দেশের সবকটি চিনিকলের গোডাউনে পড়ে রয়েছে শ শ কোটি টাকার চিনি। দামে কম ও দেখতে সুন্দর বিদেশি চিনির দিকে ঝুঁকে পড়ছে ক্রেতারা।
দেশের সবকটি চিনিকলের মতো দর্শনা কেরুজ চিনিকলে গত ৪ আখ মাড়াই মরসুমের ১৮ হাজার মেট্রিক টন চিনি রয়েছে অবিক্রিত। চিনি বিক্রির জন্য বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশ নয়া কৌশল গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ প্যাকেটজাতকরণের মাধ্যমে বাজারে ছেড়েছে চিনি। প্যাকেট চিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজারে বেশ সাড়া মিললেও এ অঞ্চলে তেমন সারা মেলেনি। ১ কেজির প্যাকেট ৪২ টাকা ও দু কেজির প্যাকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৩ টাকা। জানা গেছে, গত ২০১১-১২ আখ মাড়াই মরসুমের ২ হাজার ৪ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন, ২০১২-১৩ মরসুমের ৪ হাজার ৮৭৪ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ মাড়াই মরসুমের ৬ হাজার ২৪৮ দশমিক ২০ মেট্রিক টন ও ২০১৪-১৫ মাড়াই মরসুমের ৪ হাজার ৭৮০ দশমিক ১৩ মেট্টিক টন চিনি মিলের বিভিন্ন গোডাউনে রয়েছে। গত ৪ মরসুমের ১৭ হাজার ৯শ মেট্রিক টন চিনি যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬৭ কোটি টাকা।
কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ চিনি রাখতে অতিরিক্ত একটি গোডাউন নির্মান করেছে গত আখ মাড়াই মরসুমে। মিলের সবকটি গোডাউন চিনিতে কানায় কানায় পূর্ণ থাকায় ডিস্টিলারি গোডাউন, অফিসার্স কোয়ার্টার, ট্রেনিং কমপ্লেক্স, ক্লাব, স্কুল ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে চিনি রাখা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ঘন চিনি ভিন্ন ভিন্ন নামে আমদানি করছে এক শ্রেণির আমদানিকারক। সাইট্রিক অ্যাসিড, সোডিয়াম সাইট্রেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ঘোষণা দিয়ে এসব ঘন চিনি আমদানি করা হচ্ছে। কারণ এ তিনটি পণ্য দেখতে হুবহু ঘন চিনির মতো। এ চিনির শুল্কহারও অনেক কম, কিন্তু স্বাদে রয়েছে পার্থক্য। এ ঘন চিনি ক্যান্সারসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে থাকে, যে কারণে ১৯৬০ সালে যুক্তরাজ্য এবং ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র এ চিনি ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বাংলাদেশেও এ রাসায়নিক আমদানি নিষিদ্ধ। কিন্তু দেখতে একই রকম হওয়ায় সাইট্রিক অ্যাসিড, সোডিয়াম সাইট্রেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট নাম দিয়ে দেশে কোনো কোনো আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ রাসায়নিক আমদানি করছে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বেশি লাভের আশায় এসব পণ্য আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নজর দেয়া উচিত বলে দাবি করেছে সচেতনমহল। গত মাসের শুরুর দিকে কেরুজ চিনি প্যাকেটজাতকরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ৭৫ টন চিনি প্যাকেটজাত করা হলে এ পর্যন্ত ৬২ টনের বেশি বিক্রি হয়েছে। প্যাকেটজাত কার্যক্রম রয়েছে চলমান।
এ বিষয়ে কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন বলেন, বিদেশি চিনি চকচকে হলেও কেরুজ উৎপাদিত চিনির গুণগত মান ও স্বাস্থ্যসম্মত। কেরুজ উৎপাদিত চিনিতে তিল পরিমাণ ভেজাল নেই। নির্ভেজাল এ চিনি ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সাড়া মিলেছে। আমরা আশাবাদী মানুষ একটু সচেতন হলেই বিদেশি চিনি থেকে মুখ ফিরিয়ে দেশীয় চিনির প্রতি ঝুঁকে পড়বে। এক্ষেত্রে একদিকে যেমন রক্ষা পাবে দেশের চিনিশিল্প, অন্যদিকে অর্থনেতিকভাবে লাভবান হবে সরকার। তাই চিনিশিল্পকে বাঁচাতে বিদেশি চিনি পরিহার করে কেরুজ উৎপাদিত চিনি ব্যবহার করি।