নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস

স্টাফ রিপোর্টার: ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ৪ লাখ ১৫ হাজার ৩০৮ কোটি ১৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দশম সংসদের দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে এ বাজেট পাস হয়। এর মধ্যদিয়ে নতুন অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পাস হলো। সংসদে গৃহীত এ অর্থ হিসাববিজ্ঞানের তথ্যানুযায়ী গ্রস বাজেট। যা পুরোপুরি ব্যয় হয় না। শুধু আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী কিছু ব্যয় বাজেট বরাদ্দে দেখাতে হয়। যা পরে আয় দেখিয়ে বাজেটের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। অনুমোদন ব্যয়ের মধ্যে প্রকৃত বাজেট হল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১শ কোটি টাকা। যা গত ৪ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছিলেন। অর্থবিল ২০১৫ এবং নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৫ দুটিতে সম্মতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বিলটিতে ওইদিনই সম্মতি দেন তিনি। এর ফলে আজ বুধবার থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে।

সংসদে অনুমোদিত ৪ লাখ ১৫ হাজার ৩০৮ কোটি ১৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকার মধ্যে সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় হচ্ছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৭৬ কোটি ৯৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। যা সংসদে অনুমোদনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতাবলে সরাসরি এ অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দিতে পারেন। সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাইকোর্টে বিচারপতি এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বেতন ইত্যাদি দায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট ২ লাখ ৭১ হাজার ১৩১ কোটি ২১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা হচ্ছে সংসদে ভোটে গৃহীত ব্যয়। এ অর্থই ৫৬টি মঞ্জুরি দাবির মধ্যদিয়ে সংসদে গৃহীত হয়েছে। ব্যয় অনুমোদনের জন্য কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রীরা জাতীয় সংসদে মোট ৫৬টি মঞ্জুরি দাবি উত্থাপন করেন। এসব মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে ৭টি মন্ত্রণালয়ের ওপর ৫২৫টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। এর মধ্যে সাতজন প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও তিনজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন।

ছাঁটাই প্রস্তাব দেয়া সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- হাজি মো. সেলিম, মো. শওকত চৌধুরী, নূরুল ইসলাম মিলন, মো. রুস্তম আলী ফরাজী, ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম ওমর, মাহজাবীন মোরশেদ, তাহজীব আলম সিদ্দিকী এবং আবদুল মতিন। এসব প্রস্তাবের মধ্যে নীতি অনুমোদন ছাঁটাই, মিতব্যয় ছাঁটাই ও প্রতীকী ছাঁটাই রয়েছে।

সরকার ও বিরোধী দলের হুইপের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী মোট ৫৬টি মঞ্জুরি দাবির মধ্যে ৭টি মঞ্জুরি দাবি আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। এ দাবিগুলো হলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন। এসব মঞ্জুরি দাবির ওপর বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যরা তাদের আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। যদিও আলোচনা শেষে এ ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

এসব ছাঁটাই প্রস্তাব নিষ্পত্তি শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেলা ১টা ২৫ মিনিটে নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৫ পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের দফাগুলো সংসদে গৃহীত হওয়ার পর বেলা ১টা ২৯ মিনিটে নির্দিষ্টকরণ বিল কণ্ঠভোটে সংসদে পাস হয়। বাজেট পাসের সময় সংসদের সভাপতির আসনে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অন্যদিকে ট্রেজারি বেঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ ট্রেজারি বেঞ্চের সিনিয়র মন্ত্রীসহ প্রায় সব মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ৪ লাখ ১৫ হাজার ৩০৮ কোটি ১৮ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে অর্থ বিভাগে। এ বিভাগের ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯৭ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ব্যয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ বিভাগের ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৮৭১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বেশির দিক থেকে ব্যয়ের তৃতীয় খাত প্রতিরক্ষা খাত। এ খাতের ব্যয় হচ্ছে ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। খাত ওয়ারি অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয় জাতীয় সংসদ খাতে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় খাতে ৮০২ কোটি ৭২ হাজার টাকা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনধিক ৫০ কোটি ৩১ লাখ টাকা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় খাতে ১ হাজার ৪৮৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৫শ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ১ হাজার আটশ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ৯২৩ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ খাতে ৯ হাজার ৬৬৩ কোটি ১০ লাখ, পরিকল্পনা বিভাগে ১ হাজার ৮৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ খাতে ১৩৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৩৯৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খাতে ৩৫৯ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৯০২ কোটি ২১ লাখ টাকা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ২০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, আইন ও বিচার বিভাগে ১ হাজার ৪৬ কোটি ৮ লাখ টাকা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১২ হাজার ৪০৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগে ২১ কোটি ৩২ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় খাতে ১৪ হাজার ৫০৪ কোটি ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় খাতে ১৭ হাজার ১১৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৫৫০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় খাতে ১২ হাজার ৭২৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ২১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ৫১ লাখ ৭ হাজার টাকা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৬৭৯ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় খাতে ৩০২ কোটি টাকা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় খাতে ২ হাজার ৯১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, তথ্য মন্ত্রণালয় খাতে ৬৫৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৬৪ কোটি ৯৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪২৭ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় খাতে ৮৩৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে ১ হাজার ৩৫০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৩৭২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ২৮৪ কোটি ২১ লাখ টাকা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে ২ হাজার ৩৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয় খাতে ১২ হাজার ৭০৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৪৮৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ২০ কোটি ২৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, ভূমি মন্ত্রণালয় খাতে ৮৮৯ কোটি ৪৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় খাতে তিন হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয় খাতে ১১ হাজার ২১৮ কোটি ৬৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৭ হাজার ৪৪০ কোটি ৫০ লাখ ৩২ হাজার টাকা।

এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ খাতে ৭ হাজার ৯১১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় খাতে ৭ হাজার ৮৩৯ কোটি ৩০ লাখ ৭১ হাজার টাকা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৩৭৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় খাতে ৩৭১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় খাতে ২ হাজার ৩৭৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে ৭৭৯ কোটি ৩ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগ খাতে ১৬ হাজার ৫০৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, সুপ্রিমকোর্ট খাতে ১১২ কোটি ৬১ লাখ টাকা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে ২ হাজার ৬৭৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় খাতে ৪৩৮ কোটি ৬৭ লাখ ৯৯ হাজার, দুর্নীতি দমন কমিশন খাতে ৬৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ও সেতু বিভাগ খাতে আট হাজার ৯৫২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

Leave a comment