আলমডাঙ্গার স্কুলছাত্রী তাহেরার মৃত্যু রহস্যের নতুন মোড় : বাচ্চুসহ দু আসামি ডিএনএ পরীক্ষার আদেশ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার স্কুলছাত্রী তাহেরার মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করে হত্যার আলামত নেই বলে জানানো হলেও তার পরনে থাকা পোশাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর মামলার আসামিদের ধরে তাদেরও ডিএনএ পরীক্ষার আদেশ দিয়েছেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত আলমডাঙ্গা অঞ্চল। ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে ভাড়ায় দেয়া বাড়ি মালিকের ছেলে মাসুদ রানা বাচ্চু। তার ডিএনএ পরীক্ষার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। এছাড়াও পূর্বে গ্রেফতারকৃত প্রাইভেট টিউটর রাশেদুলেরও ডিএনএ টেস্ট করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এদের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা হবে, স্কুলছাত্রী তাহেরার পরনে থাকা পাজামায় পাওয়া আলামতের সাথে মিল রয়েছে কি-না।

তাহেরার পিতা আশঙ্কা করছেন প্রভাবশালীদের প্রভাবে আবার ডিএনএ পরীক্ষার আলামত নেয়ার সময়ও না জানি উল্টোপাল্টা না হয়ে যায়। এ আশঙ্কা থেকে আসামিদের শরীর থেকে নমুনা নেয়ার সময় তাহেরার পিতাকে রাখারও আবেদন জানানো হয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে বিচারকের বিবেচনাধীন বলে জানিয়েছেন তাহেরার পিতা। গতকাল তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করার সময় শুনলাম হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। পরে যখন রিপোর্ট দিলো তখন তাতে হত্যা নয় বলে মন্তব্য করা হলো। পরবর্তীতে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে কবর থেকে লাশ তুলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়। একই সাথে তাহেরার পরনে থাকা পাজামা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়। তাতে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। এরপরই আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ প্রধান সন্দেহভাজন মাসুদ রানা বাচ্চুকে গ্রেফতার করে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। সপ্তাখানেক ধরে বাচ্চু জেলহাজতেই রয়েছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়ার শাজাহান আলী মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের আনন্দধামের হাবিলকাবিল মোড়ের অদূরবর্তী আব্দুল কাদেরের দোতলা বাড়ির নিচতলার দুটি ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। গত বছর ৮ ডিসেম্বর দুপুরে ওই বাড়িতে একাই ছিলো শাজাহান আলীর মেয়ে তাহেরা। সে আলমডাঙ্গার পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী ছিলো। ওইদিনই দুপুরের পর ঘরের সিলিঙে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো ঝুঁলে থাকা লাশ উদ্ধার করা হয়। তার হাতের কবজিতে আঁচড়ের দাগ ছিলো। হাতের একদিকে লেখা ছিলো এলওভিই। এমনভাবে নিজের উল্টো দিক থেকে ওই শব্দটি লেখা, যা নিজের পক্ষে ধারালো কিছু দিয়ে লেখা অসম্ভব। এসব দেখে হত্যার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মূল সন্দেহভাজনদের তালিকায় উঠে আসে বাড়ির মালিক আব্দুল কাদেরের ছেলে মাসুদ রানা বাচ্চু ও তার কয়েক সহযোগীর নাম। স্থানীয়দের মূল সন্দেহ তার দিকে গেলেও পুলিশ গ্রেফতার না করায় জনমনে নানা প্রশ্ন দানা বাধে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দিতে সময় লাগে কয়েক সপ্তা। তাহেরার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পুলিশের হাতে পৌঁছায় কয়েকদিনের মধ্যে। তাতে হত্যা নয় বলে উল্লেখ থাকায় বিষয়টি নিয়েও সন্দেহ দানা বাধে। গুঞ্জন ওঠে বাড়িওয়ালা নানাভাবে তদবির করে ছেলেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ মামলাটি অপমৃত্যু মামলায় রূপান্তরের প্রক্রিয়া করতে থাকে। অপরদিকে তাহেরার পিতা আদালতের স্মরণাপন্ন হন। এরপরই একের পর এক পদক্ষেপে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ফলে মামলাটি পেয়েছে নতুন গতি। যদিও মামলার বাদী পুলিশি আচরণে এখনও ভরসা রাখতে পারছেন না।