প্রসঙ্গ : দর্শনা কাস্টমস চেকপোস্টে দালালদের উৎপাত

কোনো সমস্যাই একদিনে ব্যাপকতা পায় না। দর্শনা চেকপোস্ট ঘিরে দালালচক্রের উৎপাত সমস্যাও একদিনে ভয়ানক হয়নি। সুযোগ পেয়েছে বলেই অবৈধভাবে মালামাল পাচারকারীদের সহযোগীর সংখ্যা বেড়েছে। যাদের সহযোগিতায় পাচারকারীদের সহযোগী তাদের কেউ কেউ এখন এতোটাই বেপরোয়া যে, কাস্টমসের একজন সদস্যকে মেরে রক্তাক্ত করতেও ভয় পায়নি। সরকারি কাজে বাধা দেয়ার পরও যদি ওরা পার পেয়ে যায় তা হলে ওদের আধিপত্যের কাছে দায়িত্বপালনকারীদের যে আত্মসমর্পণ করতে হবে তা বলাই বাহুল্য।

চুয়াডাঙ্গা দর্শনার সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ভারত-বাংলাদেশ ভ্রমণকারীর সংখ্যা কয়েকশ। যাত্রীদের অনেকেই অতিরিক্ত মালামাল আনা নেয়া করে। এদের স্থানীয় ভাষায় লাগেজপার্টি বলে। এছাড়াও সীমান্ত চেকপোস্টের আশপাশ দিয়ে চোরাচালানীসহ বিনা পাসপোর্টে ভারতে প্রবেশেরও অভিযোগ রয়েছে। বিনা পাসপোর্টে যারা অবৈধ অনুপ্রবেশ করে তাদেরকে স্থানীয়ভাবে ধুড় আখ্যা দেয়া হয়। এদের পাচার এবং লাগেসপার্টির মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যারা বিশেষ দায়িত্ব পালন করে তাদেরকে বলা হয় দালাল। কেননা, এরা দায়িত্বশীলদের সাথে অবৈধ চুক্তির কাজটি করে থাকে। এই দালালদের উৎপাত বেড়েছে দর্শনার জয়নগর চেকপোস্টে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাগেজপার্টির অবৈধভাবে আনা মালামাল আটক করার কারণে চিহ্নিত কয়েকজন কর্তব্যরত কাস্টমসের এক সিপাহীকে মেরে রক্তাক্ত করেছে। মামলা হলেও তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও গ্রেফতার দুরস্ত, অভিযোগ রয়েছে হামলাকারীরা বহাল তবিয়তেই রয়েছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, তবে কি ওদের সহযোগিতায় অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে? সে শক্তি যতোই শক্তিশালী হোক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীলদের আইন প্রয়োগে আন্তরিক হওয়াই কাম্য। কর্তব্য পালনে পেশাদারত্ব থাকলে অপশক্তির কোনো হুংকারই স্থায়িত্ব পায় না।

অনিয়ম যখন নিয়মে রূপ নেয় তখনই নিয়ম তথা বিধি লঙ্ঘনকারীদের দাপট বাড়ে। আড়ালে থাকে উপরি আয়। অনিয়মের সাথে আপস। দর্শনা জয়নগর কাস্টমস চেকপোস্টে দীর্ঘদিনের অনিয়মের আধিক্য বা প্রশ্রয়েই যে কর্তব্যরত ব্যক্তির ওপর হামলার সাহস জুগিয়েছে তা পুরোপুরি অস্বীকার করার জো নেই। অবশ্যই অনিয়ম রুখতে কর্তাদেরই অধিক কর্তব্যপরায়নতা প্রয়োজন। উদাসীনতা যেমন অনিয়মকে সংক্রমিত করতে উসকে দেবে, তেমনই একজন সিপাহীর ওপর হামলার ঘটনাকে খাটো করে দেখলে কর্মকর্তাদের নিরাপত্তাও নড়বড়ে হয়ে উঠবে।