প্রতিদিন ত্বকের যত্নে

স্টাফ রিপোর্টার: আজকাল ত্বকের যত্নের ব্যাপারে নারী-পুরুষ উভয়েই সচেতন হয়ে উঠেছেন। নানারকম ক্রিম, তেল, সাবান, ফেসওয়াশ, পাউডার ইত্যাদির বিজ্ঞাপন রেডিও, টিভি ও পত্রপত্রিকায় সবসময়ই প্রচারিত হচ্ছে। রং ফর্সা করা, কালো দাগ ও ব্রণ দূর করা কোনোকিছুই যেন আজকাল আর অসম্ভব নয়। অথচ ত্বকের সৌন্দর্য বা যত্নের ব্যাপারে আমাদের ধারণা অনেকাংশেই ভুল।

স্বাস্থ্যসচেতন হলে ত্বক এমনিতেই সুন্দর থাকার কথা। আপনি যে সুস্থ আছেন সেটা আপনার চমত্কার ত্বক দেখেই বোঝা সম্ভব। সুন্দর ত্বক সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। কিন্তু যাদের ত্বকে মেলানিন কম থাকে অর্থাৎ যারা ফর্সা রঙের অধিকারী তাদেরই ত্বকের নানারকম সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ত্বকের বলি রেখা, কালো দাগ, রোদে পোড়া দাগ এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও তাদের বেশি।

সাধারণত আমাদের সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা হয়। পরের দিন আবার অফিস। ক্লান্তিতে নিজের যত্ন নেয়ার সদিচ্ছা থাকে না। তবুও প্রতিদিনই বাইরে থেকে ফিরে ত্বকের যত্ন নিতে হবে। আর এ সময়ের বাতাসে ধুলার ভাগ বেশি থাকে। সে কারণে ত্বক পরিষ্কার রাখা দরকার। বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বকে ধুলা বেশি জমে। সারা দিনের কর্মব্যস্ততার মধ্যেও নিজের যত্ন নিতে হবে। এর জন্য বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না। তিন-চারবার পানির ঝাপটা দিতে পারেন মুখে। এতে ক্লান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত তেল থাকবে না। ফলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। সেজন্য সকালে বের হওয়ার সময় পানিরোধক কাজল, আইলাইনার ও মাশকারা ব্যবহার করতে হবে। এরপর বাসায় ফিরে আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী যত্ন নিতে হবে।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন: এ ধরনের ত্বকের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন তেল-ময়লা তুলে ফেলা। তাই তুলার সাহায্যে টোনার দিয়ে মুখ মুছে ফেলতে হবে। তেলমুক্ত ক্লেনজিং ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। এরপর স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আলতো করে মুখ মুছে নিয়ে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। তবে যাদের ব্রণের সমস্যা আছে, তারা ব্রণ প্রতিরোধক জেল লাগিয়ে ঘুমাতে যাবেন। সকালে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া বাড়িতে আগে থেকে ফেসপ্যাক বানিয়ে ফ্রিজে রাখতে পারেন। শসা, আপেল, কমলার রস, চন্দন ও সামান্য পরিমাণ টকদই দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকে শসার রস পরিমাণে বেশি রাখতে হবে। সম্ভব হলে প্রতিদিনই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়বে। তৈলাক্ত ভাব কমে যাবে।

মিশ্র ত্বকের যত্ন: এই ত্বকে কোনো অংশ তৈলাক্ত আবার কোনো অংশ স্বাভাবিক বা শুষ্ক হয়ে থাকে। এ ধরনের ত্বকে প্রতিদিন টোনার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করতে পারেন। যাতে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে যায়। যেকোনো ম্যাসাজ ক্রিম দিয়ে প্রথমে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। আপনার প্রয়োজনমতো ত্বক মালিশ করুন। হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মুখ মুছে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন, তৈলাক্ত ত্বকে কখনো হালকা গরম পানি ব্যবহার করবেন না। এরপর বাড়িতে বানানো যেকোনো প্যাক লাগাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শসার রসের পরিমাণ স্বাভাবিক রেখে মৌসুমি ফল দিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। এতে ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক কোনো উপাদান নেই।

শুষ্ক ত্বকের যত্ন: এ ধরনের ত্বকে টোনার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। প্রতিদিনের ব্যবহারের ক্লেনজিং ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ, ত্বক পরিষ্কার করে নিন। গাজর, কলা, সামান্য পরিমাণ মসুর ডাল, টকদই মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করুন। তবে সপ্তাহে প্রতিদিন সম্ভব না হলে অন্তত তিন দিন শসার রস বা শসা গোল করে কেটে চোখের ওপর দেওয়া উচিত। সারা দিনে চোখের ওপর চাপ বেশি পড়ে। আবার ক্লান্তিও প্রকাশ পায় চোখের মাধ্যমে। তাই নিয়মিত চোখের যত্ন নিতে হবে। এভাবে নিজের যত্নে ৩০ মিনিট রাখুন। তাহলে শরীর ও মন দুই-ই সতেজ থাকবে।

Leave a comment