গাংনীর বাদিয়াপাড়ায় গণপিটুনির রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে
মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বাদিয়াপাড়া-মহব্বতপুর গ্রামের জামাই নাজিম উদ্দীন (৪৫) হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে শুরু করেছে। শাশুড়ি রহিমা খাতুনের সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় জামাই নাজিম উদ্দীন। পথের কাটা পরিষ্কার করতেই রহিমার দেবর বিল্লাল হোসেন অপকৌশলে গণপিটুনির নাটক সাজিয়ে নাজিম উদ্দীনকে হত্যা করে। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার ওসি (তদন্ত) এমন আভাস দিয়ে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত আসামিরা গ্রেফতার এড়াতে গাঢাকা দিয়েছে। দ্রুত তাদের গ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করার আশা করলেন তিনি।
গত ১২ মে মধ্যরাতে বাদিয়াপাড়া-মহব্বতপুর গ্রামে সাজানো গণপিটুনিতে নাজিম উদ্দীন নিহতের পর হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়। প্রভাবশালী একটি মহল হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে প্রভাব বিস্তার করে। এতে প্রাথমিকভাবে গণপিটুনি হিসেবে চিহ্নিত হলেও মূল রহস্যের খোঁজে হাল ছাড়েনি পুলিশ। ঘটনাস্থলে কয়েক দফা পরিদর্শন, ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের জিজ্ঞাবাদ, অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীদের মোবাইলের কললিস্ট যাচাইসহ নানান পন্থায় তদন্ত এগিয়ে যেতে থাকে।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার ওসি (তদন্ত) মোক্তার হোসেন জানান, রহিমার স্বামী মহসিন আলী বছর পাঁচেক আগে মৃত্যুর পর তিনি স্বামীর ছয় বিঘা মাঠের জমিসহ বাড়ির সম্পত্তির মালিক হন। এর মধ্যে প্রতিবেশী ইলিয়াছের সাথে প্রেমসম্পর্কের জের ধরে বিবাহ হয়। পরে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে রহিমাকে তালাক দেন ইলিয়াছ হোসেন। রহিমার কাছ থেকে ওই ৪০ হাজার টাকা ধার নেন তার দেবর বিল্লাল হোসেন। শুধু ধারের টাকা নয় রহিমার সব সম্পত্তি নিজের করে নেয়ার জন্য বিল্লাল হোসেন প্রেমের ফাঁদ পাতে। যেকোনো মূল্যে রহিমাকে পাওয়ার আশায় মত্ত ছিলেন বিল্লাল। প্রতিদিনই বিল্লাল হোসেন মোবাইলে রহিমার সাথে কথা বলতেন। গত ১ মে থেকে ১২ মে রাত পর্যন্ত বিল্লাল ও রহিমার মধ্যে মোবাইলে ১৪৭ বার কথা হয়। ঘটনার দিন অর্থাৎ ১২ মে রাত ১০টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত বিল্লাল হোসেন তার মোবাইল নম্বর দিয়ে রহিমার সাথে ২২ মিনিট কথা বলেন। প্রেমসম্পর্কের টানে বিল্লালের কথামতো রাতে বাড়ি থেকে বের হন রহিমা খাতুন। গোপনে শাশুড়ির পিছু নেন নাজিম উদ্দীন। বিল্লাল হোসেন বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতিরোধ পরায়ণ হয়ে ওঠেন। পথের কাটা পরিষ্কার করতেই নাজিম উদ্দীনের নামে গরু ও কবুতর চুরির অপবাদ গিয়ে পাড়া প্রতিবেশীদের ডেকে গণপিটুনি দেয়। তাকে ঠেকাতে গিয়ে রহিমা খাতুনও মারাত্মক আহত হন। সকালে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করে বিল্লাল পক্ষ। ওই মামলায় রহিমা কিছুদিন হাজতও খাটেন।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ওসি তদন্ত আরো বলেন, বিল্লাল হোসেনের প্রতিশোধ কৌশলে যোগ দেন ইলিয়াছ হোসেনসহ গ্রামের অতি উৎসাহী কিছু লোক। তারা সকলে মিলে নৃশংসভাবে হত্যা করে নাজিম উদ্দীনকে। ওই গ্রামের আব্দুস সামাদ ও তার ভাই মাসাদ আলী প্লাস দিয়ে নারকীয়ভাবে নাজিম উদ্দীনের হাত ও পায়ের নখ তুলে নেয়। বিল্লাল ও ইলিয়াছসহ আরো কয়েকজন লাঠিসোঁটা দিয়ে বিভিন্নভাবে আঘাত করে নাজিম উদ্দীনের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এদিকে প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ চোরের গণপিটুনির দিকে চালিয়ে দিলেও পার পাচ্ছে না অভিযুক্ত আসামিরা। পুলিশের তৎপরতায় অভিযুক্তরা আসন্ন বিপদের অশনি সঙ্কেত বুঝতে পেরে আত্মগোপন করে। বিল্লাল হোসেন বেশ কিছু দিন আগেই রহিমার সাথে কথা বলা সেই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ করে এলাকা ছেড়ে যায়। সামাদ ও মাসাদসহ অভিযুক্ত অন্যরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলাফেরা করছে। তবে অপরাধীরা যতোই ছলচাতুরি করুক না কেন তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন গাংনী থানার ওসি।