মাদক : ফসকা গেরোয় বজ্র আটুনির দৃশ্যই ঘুরে ফিরে ফুটে ওঠে

 

মাদকাসক্ততা মানুষকে কতোটা অমানুষ করে তার আরো একটি উদাহরণ চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি রেলগেটপাড়ার অস্থায়ী বাসিন্দা শহিদ। শিশু দু ছেলেকে স্কুলের বদলে চা দোকানে কাজে পাঠিয়েছে। অটো চালিয়ে পাওয়া অর্থই শুধু নেশার পেছনে ব্যায় করে না, শিশু সন্তানদের পাওয়া সামান্য বেতনও নেশার ধোঁয়ায় উড়িয়ে দেয়। বারণ করায় স্ত্রীর গলায় ব্লেড দিয়ে পোঁচ মেরে রক্তাক্ত জখম করেছে। শহিদ শুধু একা নয়, সমাজে অসংখ্য নেশাখোর তাদের সংসারে অশান্তির আগুন জ্বালিয়েছে। সমাজের শান্তিও কেড়ে নিয়েছে। পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে। রুখতে না পারার দায় সমাজের সচেতন মহলের কম নয়।

গত পরশু চুয়াডাঙ্গায় যখন মাদকদ্রব্য অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসের নানা কর্মসূচি পালন করা হয়, তখন নেশাখোর স্বামীর ব্লেডের পোঁচে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তিন সন্তানের জননী আঞ্জিরা খাতুন। এবারের প্রতিপাদ্য ছিলো ‘আসুন মাদকমুক্ত অর্থবহ জীবন, সম্প্রদায় ও সত্ত্বার বিকাশ নিশ্চিত করি। এই একটি স্লোগানেই স্পষ্ট মাদক কতোটা ভয়ানক। অথচ মাদকের কবলে পড়ে বিশেষ করে ড্রাগজাতীয় দ্রব্যে নেশাগ্রস্ত হাজার হাজার প্রতিভা ধুলুণ্ঠিত হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণের নামে ফসকা গেরোয় বজ্র আটুনির দৃশ্যই যেনে ঘুরে ফিরে ফুটে ওঠে।

চুয়াডাঙ্গায় বাংলা মদের বৈধ দোকান আছে। এ দোকানের খদ্দের কারা? যাদেরকে সমাজের নোংরা পরিষ্কারসহ নানা কাজে অপ্রকৃতস্থ হতে হয় মূলত তারা। এরা আর স্বীকৃতিপত্র নেয়া যোগ করলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় কতো? মদ বরাদ্দ দেয়া হয় কতো লিটার? অতো মদ কোথায় যায়? সামান্য এ হিসেব খতিয়ে দেখলেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তা কতোটা ঢিলে। কেন ঢিলে? তাও খুব একটা অস্পষ্ট নয়। গ্যালন গ্যালন মদ অবৈধভাবে খুচরা বিক্রেতারা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পাচার করে আনা হচ্ছে ফেনসিডিল, মরফিন, হেরোইনসহ ভয়ঙ্কর নেশাদ্রব্য। পাচারকারীদের রাঘববোয়ালরা সমাজের দরিদ্র পরিবারের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরদের কাজে লাগিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে সমাজের শিরা উপশিরায়। সহজলভ্যতা নেশাখোরের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে ক্রমশ। হেরোইন, মরফিন, কোকেন, ইয়াবা, ঘুমের পিল-ইনজেকশন, ফেনসিডিল এমনই নেশা, যার কবলে একবার পড়লে অধঃপতন অনিবার্য হয়ে ওঠে।

অবশ্যই সমাজের অধিকাংশ মানুষই মাদকমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখে, এরপরও কেন মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠছে না? মাদককারবারীরা সংখ্যায় অল্প হলেও ওরা শুধু সংগঠিতই নয়, অর্থ ছড়িয়ে ক্ষমতাধর হয়ে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে সমাজের কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাকেই হেনস্থা হতে হয় নানাভাবে। যার উদাহরণ চুয়াডাঙ্গায় অনেক। মাদকবিরোধী কমিটির নেতার বাড়িতে বোমা রেখে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়াই নয়, স্ত্রী-মেয়েকে দিয়ে ধর্ষণ অপচেষ্টার মামলা করার মতো ঘটনাও রয়েছে। তাতে মাদকবিরোধীকে কম হেনস্থা হতে হয়নি।

মাদকচক্র যতোই ভয়ঙ্কর হোক, রুখতে হবে। অন্যের ঘরে মাদকের অশান্তির আগুন দেখে কাউকেই স্বস্তির ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়া উচিত নয়। ওই আগুনের ফুলকি স্বস্তি কাড়তে কতোক্ষণ? পুলিশের পদস্থ এক কর্তা সস্ত্রীক তাদের কন্যা ঐশির হাতে প্রাণ দিয়ে বুঝিয়ে গেছেন মাদক শুধু উঁচুতলায় নয়, সুযোগ বুঝে উর্দিতেও রক্ত লাগায়। দরকার শুধু উপলব্ধি। সম্মিলিতভাবেই মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের কিছু অসাধু সদস্যের কারণে মাদক সরবরাহকারীদের অতো দাপট? তাদেরও মুখোশ খুলে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করাতে দরকার কর্তার কুম্ভঘুম ভাঙার মতো সমস্বরে আওয়াজ।

Leave a comment