প্রতারকরা সব সময়ই টোপে আনে অভিনবত্ব। বিশ্বাস করার মতো কিছুটা আচরণ না করলে তাদের পাতা ফাঁদে শিকার পড়বে কেন? অন্যরা জেনে গেলে চাকরিটা যদি হাতছাড়া হয়! এ শঙ্কায় লোভনীয় টোপ গেলার জন্য অনেকেই গোপনেই তড়িঘড়ি করে প্রতারকদের হাতে গোছিয়ে দেয় টাকা। প্রতারক লাপাত্তা হলে প্ররারিতরা তখন হাই হাই আমার কী হলো বলে হাহুতাশ করতে থাকেন। মূলত সে কারণেই সর্বক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি দিয়ে সকল প্রস্তাবই যাচাই করার তাগিদ দেয়া হয়। সরলতা আর লোভে অন্ধত্বেরই সুযোগ নেয় প্রতারকরা। লোভের টোপই ওদের মূল অস্ত্র।
মোবাইলফোনে জিনের বাদশা সেজে রাতারাতি ধনী করে দেয়ার কথা বলে কতোজনকে যে সর্বস্বান্ত করেছে তার হিসেব নেই। লটারি বেধেছে বলেও টাকা হাতিয়ে নেয়ার খবর মেলে মাঝে মাঝে। মূর্তি বা দোয়া লেখা মেডেলের লকেটে ভাগ্য ফেরানোর ভাউতাবাজির বিজ্ঞাপনও এখন বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। কিছুদিন আগে তো বেচলেট দিয়ে ভাগ্য ঘোরানোর নামে সচেতন যুবসমাজকেও বোকা বানিয়ে ছেড়েছে সঙ্ঘবদ্ধচক্র। বিপদে পড়েছি বলে আশ্রয় নিয়ে রাতে পরিবারের সকলকে অজ্ঞান করে মালামাল হাতিয়ে পালানোর উদাহরণও কম নয়। নিখরচায় বিদেশে নিয়ে ভালো চাকরি জুটিয়ে দেয়ার টোপে অসংখ্য নারী-পুরুষকে অপহরণের পর কীভাবে নির্যাতন করেছে, হত্যা করে সাগরে ফেলেছে সে খবর এখন প্রায় প্রতিদিনই তো সংবাদপত্রের শিরোনাম হচ্ছে। নানা নামের সমিতি ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে স্বল্প সুদে মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার খবর পুরাতন হলেও নতুন করে প্রতারিত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর মাঝে গ্রামবাংলায় মোবাইলফোনের টাউয়ার স্থাপনের কথা বলে জমি কেনার নামে ভুয়া চুক্তিনামা, বাড়ির পাশের টাউয়ারে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারক সটকালে অবাক হওয়ার আর কি আছে? প্রতারিত হওয়ার হিড়িকে বাড়ছে দীর্ঘশ্বাস। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, সমাজের মানুষ আবার কবে সচেতন হবে? ধান্ধাবাজদের ধন্ধে না পড়ে তাদের ধরে আইনে সোপর্দ করার মতো মানুষের সংখ্যা সমাজে কবে বাড়বে?
সরল বিশ্বাসের যুগ বহু আগেই গত হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান যুগে প্রমাণিতগুলোই যেহেতু বিশ্বাসের পাল্লায় গ্রহণযোগ্য হচ্ছে, সেহেতু যেকোনো প্রস্তাবই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই না করলেই প্রতারিত হওয়ার শঙ্কা প্রায় শতভাগ। আশেপাশে এতো ঠকবাজ, তারপরও প্রত্যাশিত হারে সচেতনতার আলো ছড়াচ্ছে না কেন? সমাজের সচেতন মানুষগুলোকে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই সচেতনতার আলো ছড়ানোর কাজে নিয়োজিত হওয়া দরকার। আলো ছড়াতে না পারাদের কি সচেতন বলা যায়? প্রতারকদের ধরতে প্রশাসনিক জোরদার পদক্ষেপও প্রয়োজন বটে।
পুনশ্চ: ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।