জালনোট প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার: নোট জালকারী চক্রের শেকড় উপড়ে ফেলতে কঠোর অভিযান পরিচালনাসহ জামিনে থাকা জালকারীচক্রের ওপর নজরদারি জোরদারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে জালনোট প্রতিরোধকল্পে করণীয় নির্ধারণবিষয়ক এক সভায় এ অনুরোধ জানানো হয়। একই সভায় জালনোট প্রতিরোধে জনসচেতনা বাড়াতে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জালনোট প্রতিরোধে সমন্বিত প্রয়াসের অংশ হিসেবে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রহিমের সভাপতিত্ব সভায় আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং দেশের সব বাণিজিক ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবদুর রহিম বলেন, এটা মূলত রিভিউ মিটিং ছিলো। কারণ বড় বড় উৎসব এলে নগদ টাকার লেনদেন বাড়ে। এ সময়ে নোট জালকারী চক্রগুলোও সক্রিয় হয়ে ওঠে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে তৎপর থাকার অনুরোধ করেছি। পাশাপাশি নোট জালকারী চক্রের সাথে জড়িত যারা বর্তমানে জামিনে বাইরে রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নজরদারি জোরদারের আহ্বান জানিয়েছি। তিনি বলেন, একই সভায় দেশের সব ব্যাংকে জনসম্মুখে আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংবলিত ভিডিও প্রচারের নির্দেশনা দিয়েছি। একই সাথে ব্যাংকিং কর্মদিবসে লেনদেনের সময় জালনোট এড়াতে প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে নোট পরীক্ষার কথা বলেছি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ হাজার টাকা মূল্যমানের নোট বেশি জাল হয়। এজন্য এসব নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংবলিত কয়েক লাখ পিস হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখা অফিসের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর কাউন্টারের মাধ্যমে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে সাথে এটিএম মেশিনে টাকা ঢোকানোর আগে তা পরীক্ষা করার জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এসব নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য বিষয়ক পোস্টার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ইউএনও অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের অফিসে নেট দিয়ে আবদ্ধ নোটিশ বোর্ডে টাঙানোর সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সচেতনতা বাড়াতে রমজান মাসজুড়ে প্রতি সপ্তায় আসল ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংবলিত বিজ্ঞাপন অন্তত পাঁচটি পত্রিকায় প্রচার করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টিভি চ্যানেলগুলোতে জালনোটের ওপর তৈরিকৃত ভিডিও প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে জালনোট প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা অফিসগুলোর উদ্যোগে সারাদেশে কর্মশালা ও সচেতনামূলক কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে ৮টি উপজেলায় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব কর্মশালায় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, শিক্ষক ও এলাকার জনগণকে রাখা হয়েছে। ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য: ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের অন্যতম হলো- প্রতিটি নোটের মূল্যমান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো সংবলিত নিরাপত্তা সূতা থাকে। নোটটি চিত করে ধরলে মূল্যমান ও লোগো দেখা যায়। কাত করে খাড়াভাবে ধরলে তা কালো দেখায়। আসল নোটের এ নিরাপত্তা সূতা অনেক মজবুত যা নোটের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে জালনোটের নিরাপত্তা সূতা নখ দিয়ে নড়াচড়া করলে উঠে যায়। প্রত্যেক প্রকার নোটের ওপরের ডান দিকের কোণায় ইংরেজি সংখ্যায় লেখা মূল্যমান রঙ পরিবর্তনশীল কালি দিয়ে মুদ্রিত। জাল নোটে ব্যবহৃত কালি চকচক করলেও তা পরিবর্তন হয় না। আসল নোটের উভয় পাশের ডিজাইন, মধ্যভাগের লেখা, নোটের মূল্যমান ও ৭টি সমান্তরাল সরলরেখা উঁচু-নিচু বা খসখসেভাবে মুদ্রিত। এসব বৈশিষ্ট্য জাল নোটে সংযোজন করা সম্ভব না।