বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিভাবদন

সম্মানের গায়ে যারা কলঙ্কের দাগ লাগায় তাদের বিবেক জেগে উঠুক

 

এক ম্যাচ হাতে রেখে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ জয়কে যদি কেউ অঘটন বলেন- তা হলে শুধু অন্যায়ই হবে না, অর্জিত মর্যাদায় আঘাত হানা হবে। এমন দাপুটে সিরিজ জয়ে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। বাংলাদেশের এমন কীর্তিতে জয়ধ্বনি না করে পারেনি বিশ্ব মিডিয়া। এরই মাঝে একটি বিষয় লজ্জারও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলার মাঝে নয়, ঘটনাটি মাঠের বাইরে। ভারতীয় টিমের একজন সমর্থককে ঘিরে কয়েকজনের টিপ্পনী কাটার ঘটনাটি দেশের সাধারণ সমর্থকদের হতবাক করেছে। অপমান করেছে বললেও ভুল বলা হয় না। যদিও যে ক’জন টিপ্পনী কেটেছেন তারা বাংলাদেশ দলের সমর্থকদের প্রতিনিধি নয়। যারা ওই ধরনের বিবেকহীনতার পরিচয় দেয় তারা আর যাই হোক দেশের মর্যাদা কীভাবে রক্ষা করতে হয় তা বোধ করি ওদের জানা নেই।

প্রসঙ্গত, ওয়েস্ট ইন্ডিজের টিমবাসে ঢিল ছুড়েছিলো একজনই। কিন্তু অপমানিত হয়েছিলো পুরো বাংলাদেশ। বিশ্ব মিডিয়ায় এই একজন হঠকারীর নাম আসেনি। খবর এসেছিলো, ওয়েস্ট ইন্ডিজের টিমবাস বাংলাদেশের সমর্থকদের দ্বারা আক্রান্ত। গতপরশু ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা শেষে তিন-চারজন একইভাবে অপমান করলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। ভারতীয় ক্রিকেটের সমর্থক সুধীর গৌতম স্টেডিয়াম থেকে বেরোনোর পথে আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ করলেও আসলে ঘটনাটি ছিলো কয়েকজনের নিবুর্দ্ধিতার বহির্প্রকাশ। সুধীরকে অনেকেরই চেনার কথা। ক্রিকেটপাগল মানুষটা শচীন টেন্ডুলকারের ভীষণ ভক্ত। সারা গায়ে ভারতীয় জাতীয় পতাকার তেরঙা রঙ মাখেন। পিঠে লেখা থাকে টেন্ডুলকারের নাম আর ‘১০’ সংখ্যাটি। প্রচণ্ড রোদ কিংবা প্রবল শীতেও তার এ বেশ-ভুষা বদলায় না। তার এ পাগলামি ​দেখে খোদ টেন্ডুলকার ডেকে নিয়েছিলেন। অনেক দিন টেন্ডুলকার নিজে তার নামে বরাদ্দের একটা করে টিকিট দিয়ে আসতেন সুধীরকে।

খেলাপাগল দরিদ্র এ মানুষটা সাইকেল চালিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন বলে শোনা যায়। ঘুমিয়েছেন ফুটপাতে, গ্যারেজে। কখনো কোনো নিম্ন-মধ্যবিত্তের বাড়িতে আশ্রয় মিলেছে। কিন্তু বারবার বাংলাদেশে এসেছেন। এ দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। তাকে দেখেই অনুপ্রাণিতও হয়েছেন অনেকে। সমালোচকদের অনেকেই দেশের ক্রিকেটামোদীদের উৎসাহ দেখে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ক্রিকেটকে ভালোবাসার দিক দিয়ে বাংলাদেশের সমর্থকেরাই সারা বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন। অথচ এই সম্মানের গায়ে যারা কলঙ্কের দাগ লাগায়, সেই মুষ্টিমেয় সমর্থকেরা কি আদৌ বাংলাদেশে ক্রিকেটের সত্যিকারের সমর্থক? বিবেক জেগে উঠুক ওদের।

আইসিসির ওয়ানডে ৱ্যাংকিঙে সদ্যই সাত নম্বর স্থানটি পাকাপাকি করেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে টানা দুই জয়ে মর্যাদার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির একটি স্থানও এখন বাংলাদেশের অধিকারে। কিন্তু এ মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান কি সত্যিই সাত নম্বরে? আইসিসির ৱ্যাংকিং হয়তো বলছে সাত, কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে এ মুহূর্তে বিশ্বের দুই নম্বর ক্রিকেট শক্তি বাংলাদেশ! আইসিসির ৱ্যাংকিঙে অনেক জটিলতা। বিভিন্ন হিসাবের চৌহদ্দি পেরিয়ে চূড়ান্ত করা হয় এই ৱ্যাংকিং। বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমীরই মাথার ওপর দিয়ে যাওয়া এ জটিল ৱ্যাংকিং একটু দূরে সরিয়ে রেখেই দাবি করে ফেলা যায় ব্যাপারটা। ২০১৫ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে জয়-পরাজয়ের অনুপাতে আসলেই বিশ্বের দুই নম্বর দল মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিকদের বাংলাদেশ।
হিসাব মোটেও জটিল কিছু নয়। ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এখনো পর্যন্ত ওয়ানডে দলগুলো যতোগুলো ম্যাচ খেলেছে, তার ওপর ভিত্তি করেই এই পরিসংখ্যান। সেই পরিসংখ্যানে এক নম্বর স্থানটি দখল করেছে অস্ট্রেলিয়া। জানুয়ারি মাস থেকে এখনো পর্যন্ত মাইকেল ক্লার্কের দল মোট ১৩টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে ১১টিতে। এতে আছে একটি ‘টাই’ আর একটি হারের রেকর্ড। তাদের জয়-পরাজয়ের অনুপাত এ মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বে সবার শীর্ষে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এ অনুপাতে অস্ট্রেলিয়ার ঠিক পরপরই আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এ বছর ১১টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে জিতেছে ৮টি ম্যাচ। জয়-পরাজয়ের অনুপাত ২ দশমিক ৬৬৬। এ হিসাব দেখে নিজেদের আপাতত বিশ্বের দুই নম্বর দল ভাবতে আপত্তি কোথায়? বাংলাদেশ দলকে অভিবাদন। মুস্তাফিজুরকে সাদর সম্ভাষণ।