ধর্ষণ মামলায় যশোরের সন্ত্রাসী নজু ভারতে গ্রেফতার নিয়ে নতুন প্রশ্ন

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ভারত কেঁপে ওঠা সন্ন্যাসিনী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি যশোরের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী নজরুল ইসলাম নজুকে আটক করেছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। আদালতের নির্দেশনা পেয়ে ভারতীয় পুলিশ এখন তাকে ১৫ দিনের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এক সপ্তা আগে খুলনার একটি ভাড়া বাসা থেকে নজরুল ইসলাম নজুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তার স্ত্রী শিখা পুলিশে অভিযোগ করে। এর দু দিন পর ভারতের গোয়েন্দা পুলিশ দাবি করে, নজুকে কোলকাতার শিয়ালদহ  স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নজুর স্ত্রীর দাবি সত্যি, নাকি ভারতীয় গোয়েন্দাদের- এ নিয়ে দ্বিমুখি দ্বন্দ্বে আছেন যশোরের পুলিশ কর্মকর্তারা। নজরুলকে যারা চেনেন, তাদের মধ্যেও এ নিয়ে সীমাহীন কৌতূহল। তবে নজরুল ওরফে নজু যে একজন ভয়ঙ্কর দস্যু তা নিয়ে দ্বিমত নেই বাংলাদেশ ও ভারতীয় পুলিশ এবং যশোর শহরের বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকাবাসীর।
গত ১৪ মার্চ নদীয়া জেলার রানাঘাটে কনভেন্ট অব জিসাস অ্যান্ড মারিতে হানা দেয় একদল দুর্বৃত্ত। দলটি স্কুলের অফিস থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকা লুট করে। পরে তারা সন্ন্যাসিনীদের আবাসগৃহেও হামলা চালায়। সেখানে ৭১ বছর বয়সী বৃদ্ধ এক সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করা হয়।

এ পৈশাচিক ঘটনায় কেঁপে ওঠে গোটা ভারতবর্ষ। প্রতিবাদে মুখর হয় শহর-জনপদ। চার্চের তরফেও চাপ বাড়ানো হয় সরকারের ওপর। ঘটনার পরদিন সিআইডি তদন্ত  শুরু করে। মাঠে নামে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো। ঘটনার পর পরই সিআইডি অত্যাধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে ঘটনার সময় ওই অঞ্চলে যতোগুলো মোবাইল ফোন চালু ছিলো, প্রত্যেকটির নম্বর যোগাড় করে। এ তথ্যের ভিত্তিতে প্রথম মুম্বাইয়ে গ্রেফতার করা হয় এক দুষ্কৃতকে। এরপরই সন্ধান মেলে বাংলাদেশের যশোর জেলার ভয়ঙ্কর দস্যু নজরুল ইসলাম নজুর। সিআইডির সন্দেহ, বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে একজনই ধর্ষণ করেছিলো। আর সেই লোকটিই হলো নজু। ঘটনার পর থেকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ নজুর সন্ধানে ঝটিকা অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে বাংলাদেশের খুলনা জেলার ফুলতলা এলাকার একটি বাড়িতে সন্ধান মেলে নজুর। তার পরের ঘটনা অনেকটা নাটকীয়।

নজুর স্ত্রী শিখা জানান, কিছু দিন আগে তারা খুলনার ফুলতলা ও সোনাডাঙ্গা থানার মধ্যবর্তী এক বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠে। সাতদিন আগে ভোর পাঁচটার দিকে ওই বাসা থেকে পুলিশ পরিচয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা নজুকে ধরে নিয়ে যায় বলে ওই দিন ফুলতলা থানায় অভিযোগ দেন শিখা।
ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন অভিযোগের বিষয়টি টেলিফোনে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি শিকদার আক্কাছ আলীকে জানান। কিন্তু শিকদার আক্কাছ এ বিষয়ে কোনো কিছু জানেন না বলে ফুলতলার ওসিকে জানিয়ে  দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি বিষয়টি স্বীকার করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফুলতলার ওসি আমার কাছে জানতে চাইছিলেন, আমরা ওই এলাকা থেকে নজরুল ইসলাম নজু নামে কাউকে ধরে এনেছি কি না। কিন্তু আমি তো এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।

নজুকে পুলিশ পরিচয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা খুলনা থেকে তুলে নিয়ে গেছে বলে শুনেছেন যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই জামালও। আসল ঘটনা কি তা নিয়ে সন্দেহে আছেন তিনিও।
নজুকে কোন সংস্থার লোকেরা তুলে নিয়ে গেছে, নাকি সে  স্বেচ্ছায় ভারতে গেছে, তা নিয়ে যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকায় এখন জোর আলোচনা চলছে। সবার কৌতূহল আসলে কি ঘটেছে?
যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলেন, এ সম্বন্ধে আমার কিছুই জানা নেই। এদিকে নজুর কথিত অপহরণের দু দিন পর ভারতের গোয়েন্দা পুলিশ দাবি করে, বুধবার নজরুল ইসলাম নজু নামের একজন বাংলাদেশি ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীকে কোলকাতার শেয়ালদা রেলস্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছে খবর ছিলো, বুধবার নজু বনগাঁ থেকে কোলকাতার ট্রেনে চেপেছেন- দাবি করেন সিআইডির স্পেশাল সুপারিন্টেনডেন্ট চিত্তরঞ্জন নাগ।

এদিকে গত তিন দিন অনুসন্ধান করে যশোর কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালের প্রায় দুই-আড়াই কিলোমিটার দক্ষিণে হরিণার বিলের মধ্যে একটি বাড়িতে সন্ধান মেলে নজরুল ইসলাম নজুর মা সালেহা বেগম ওরফে ফুলি বেগমের। তিনি জানান, তিনিও লোক মারফত জানতে পেরেছেন তার ছেলেকে পুলিশ পরিচয়ে কারা যেন তুলে নিয়ে গেছে। বর্তমানে আমার নজুর কি অবস্থা তা আমি বলতে পারবো না।

কে এই নজরুল ইসলাম নজু: যশোর টিবি ক্লিনিক এলাকার মৃত আবদুল মজিদ ও সালেহা বেগম ফুলির ছেলে নজরুল ইসলাম ওরফে নজু। অনুসন্ধানে জানা যায়, তাদের আদি নিবাস সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায়। উপকূলবর্তী অনেক মানুষের মতো এ পরিবারটিও জীবিকার সন্ধানে যশোরে চলে আসে। কিন্তু আবদুল মজিদ স্বাভাবিক কোনো পেশা গ্রহণ করেননি। তার  পেশা ছিলো ডাকাতি। যশোর শহরের বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, তারা শুনেছেন, ডাকাতি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে মারা যান নজুর বাবা আবদুল মজিদ।