মিয়ানমারে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমানের অনুরোধ উপেক্ষা
স্টাফ রিপোর্টার: মিয়ানমারের প্রচলিত আইনে বিচার প্রক্রিয়া শেষেই নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফেরত দেয়া হবে। বাংলাদেশকে এমন কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান গত শনিবার মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি বিজিবির অপহৃত নায়েক আবদুর রাজ্জাককে দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। এ সময় মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়, বিজিবির অপহৃত নায়েক আবদুর রাজ্জাক অবৈধভাবে মিয়ানমারের জলসীমানায় প্রবেশ করায় তাকে আটক করা হয়েছে। মিয়ানমারের প্রচলিত আইনে বিচার প্রক্রিয়া শেষেই তাকে ফেরত দেয়া হবে।
গত বুধবার টেকনাফের নাফ নদীর জাদিমুরা পয়েন্ট সীমান্তে বিজিবির টহল দলের ওপর গুলিবর্ষণ করে মিয়ানমার বিজিপি। এ সময় এক বিজিবি জোয়ান গুলিবিদ্ধ হন এবং বিজিবি নায়েক রাজ্জাককে অপহরণ করে নিয়ে যায় বিজিপি।
এ নিয়ে পতাকা বৈঠকের জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানানো হলেও বিজিপি কোনো সাড়া দেয়নি। উল্টো মিয়ানমার পুলিশের হেফাজতে নায়েক আব্দুর রাজ্জাককে হাতকড়া পরিয়ে রাখার ছবি প্রকাশ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিজিপির এ ধরনের রহস্যময় আচরণে ক্ষোভ ও শঙ্কা বাড়ছে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
টেকনাফ ৪২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, মিয়ানমার তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে নায়েক রাজ্জাকের হাতকড়া পরিহিতসহ কয়েক ধরনের ছবি প্রকাশ করেছে। যা চরম অবমাননাকর ও প্রতিবেশী দেশের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার শামিল। বিজিবির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অপরদিকে নায়েক রাজ্জাককে ফেরতের বিষয়ে মিয়ানমারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় বিজিপি পতাকা বৈঠকের সময় দিতে পারছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে অপহৃত নায়েক রাজ্জাককে বিজিপি তাদের ক্যাম্পে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে এবং তার কাছ থেকে উদ্ধার করা রাইফেল ও অন্যান্য সামগ্রী সামনে রেখে অপরাধীর মতো ছবি তুলে বিভিন্ন ভাষায় কটাক্ষ করে মিয়ানমারের সরকারি ওয়েবসাইটে তা প্রচার করা অমানবিক আচরণ বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার সংস্থাসহ একাধিক সংস্থার কর্তা ব্যক্তিরা।
সুশীল সমাজের মতে, প্রতিবেশী দেশের একটি সরকারি বাহিনীর কর্মকর্তার সাথে কী ধরনের শোভন আচরণ করতে হয় সে জ্ঞানটুকুও মিয়ানমার বিজিপির সদস্যদের নেই। এভাবে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পোশাক পরিহিত সদস্যকে অপমানের যথাযথ জবাব সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে চাওয়া সরকারের উচিত বলে মন্তব্য করেন তারা। বিজিবি সদস্যকে ফেরত না দিয়ে তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল উল্লেখ করে, উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বিজিবি সদস্যকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তারা।
উল্লেখ্য, প্রতিদিনের মতো বিজিবির সদস্যরা গত বুধবার সকালে দমমিয়া চেকপোস্টের বিপরীতে লালদিয়া নামক স্থানে টহল দিচ্ছিলেন। ওই সময় একদল চোরকারবারীকে ধাওয়া করে বিজিবি সদস্যরা। একপর্যায়ে চোরকারবারীরা বিজিবির আওতার বাইরে চলে যায়। এ সময় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বিজিবির টহল দলের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে বিপ্লব নামের এক সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাক নাফ নদীতে পড়ে গেলে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। তবে বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এমএম আনিসুর রহমান শুক্রবার ৩৭ বাংলাদেশিকে মায়ানমার থেকে ফেরত আনার পর বলেছিলেন, বুধবার টেকনাফের নাফ নদীর জাদিমুরা পয়েন্ট সীমান্তে বিজিবি-বিজিপির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে গোলাগুলির ঘটনায় ধরে নিয়ে যাওয়া বিজিবি সদস্য নায়েক রাজ্জাকের বিষয়টি নিয়ে পতাকা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে আরো একটি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে নায়েক রাজ্জাককে ফেরত দিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সেক্টর কমান্ডারের এ তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর সবার মাঝে স্বস্তি দেখা দিলেও নায়েক রাজ্জাককে নিয়ে প্রকাশ করা ছবি শঙ্কা বাড়িয়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।