স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ৪ যুবক ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয়ার পরও মানবপাচারকারীদের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। তাদের পরিবারের কাছে আরো ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে পাচারকারীরা। থাইল্যান্ডের একটি মোবাইল সিম ব্যবহার করে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বলা হচ্ছে। হতভাগ্য যুবকরা হচ্ছে নাগিরাট গ্রামের লিটন জোয়ার্দ্দার, মাধবপুর গ্রামের সোহেল, রমজান ও সোবহান।
মার্চ মাসের শেষদিকে দালালদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে এই চার যুবক। বাড়ির কাউকে কিছু না বলে তারা মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে দালালদের কাছে যায়। বৈধ পথে বিমানে পাঠানো হবে বলে দালালরা তাদের আশ্বাস দেয়। এ কথাও বলে- এখন টাকা লাগবে না, মালয়েশিয়া পৌঁছে চাকরি করে টাকা দিলেই হবে। এরপর চট্টগ্রামে নিয়ে অন্য দালালদের কাছে তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়। ওই দালালরা চার যুবককে সাগরে নিয়ে ট্রলারে তুলে দেয়। সাথে আরো অনেক লোক ছিলো।
এরপর থেকে ওই চারজনের কোনো খোঁজ মিলছিলো না। কয়েক দিন আগে লিটন থাইল্যাণ্ডের একটি মোবাইল নম্বর থেকে বাড়িতে ফোন করে। তিনি বলেন, তারা ৪ জন এক সাথেই আছে। সাথে আরো অনেকে আছে। লিটন তার পরিবারসহ চারজনের পরিবারকে বিকাশে টাকা পাঠাতে বলে। টাকা না দিলে তাদের মেরে ফেলবে বলে জানায়। এরপর বিকাশ করে ৩ লাখ টাকা পাঠান স্বজনেরা। তাতেও তাদের মুক্তি মেলেনি। মোবাইলফোনে লিটন জানায়, ৩ মাস পর তাদের মুক্তি দেয়া হবে। কয়েক দিন পর লিটন ফের ফোন করে বলে আরো ৬ লাখ টাকা লাগবে। মাকে সে বলে তাড়াতাড়ি টাকা পাঠাও। মারতে মারতে আমার পিঠের চামড়া তুলে ফেলেছে। মোবাইলফোনে ব্যাঙ ডাকার শব্দ শোনা যায়। এতে মনে হয়, কোনো জঙ্গলের মধ্যে তাদের আটক রাখা হয়েছে।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান, এ পর্যন্ত মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারে উদ্ধার হওয়া ১৬ জন ঝিনাইদহে সরকারিভাবে ফিরে এসেছে। এদের মধ্যে শৈলকুপা উপজেলার চরধলহরাচন্দ্র গ্রামের রফিকুল ইসলাম, ছোট ধলধরাচন্দ্র গ্রামের হারুন অর রশিদ, ধলহরাচন্দ্র গ্রামের মহসিন বিশ্বাস, হাটফাজিলপুর গ্রামের সোহান বিশ্বাস,পলাশ বিশ্বাস ও দলিল উদ্দিন বিশ্বাস পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে দালালরা কীভাবে তাদের পাচার করে তার বর্ণনা দিয়েছেন। তারা জানায়, ছোট ধলহরাচন্দ্র গ্রামের লোকমান, ইউনুস, কায়েস, হাটফাজিলপুর গ্রামের সুমন ও তার বাবা শ্রীকৃষ্ণ তাদের ফুসলিয়ে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়। ইউনুস ছোট ট্রলারে তুলে তাদের গভীর সাগরে নেয়। সেখান থেকে বড় জাহাজে তুলে দেয়। এরপর ২ মাস ৫ দিন সাগরে ভাসতে থাকে তারা। শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার নৌবাহিনী তাদের উদ্ধার করে সেদেশে নিয়ে যায়।
এদিকে গতকাল শনিবার সকালে শৈলকুপা থানার পুলিশ রঘুনন্দনপুর গ্রামের মো. মাছরা উদ্দিন নামে এক মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে। শৈলকুপা থানার ওসি হাশেম খান জানান, তার বিরুদ্ধে মানবপাচারের মামলা আছে।