মোবাইলফোনে চাঁদা দাবি : উঠোনে বোমা নিক্ষেপ

 

শুধু প্রত্যন্ত অঞ্চলেই নয়, শহরেও মোবাইলফোনে চরমপন্থি পরিচয়ে খুনের হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে হুমকির পর হুমকি দিয়েই শুধু ভীতসন্ত্রস্ত করা হয় না, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বোমাও নিক্ষেপ করে আতঙ্ক ছড়ানো হয়। মোবাইলফোনে চাঁদাবাজচক্রের উৎপাত মাঝে মাঝেই বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে ওদের অপতৎপরতায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন কৃষক, পেশাজীবীসহ ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, এক সময় চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াসহ দেশের পশ্চিম-দক্ষিণাঞ্চলের সিংহভাগ জনপদ হরেক নামের চরমপন্থি অধ্যূষিত ছিলো। ওই সময় তাদের অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে হৃদপিণ্ডের কম্পন বেড়েছে। পুলিশ-ৱ্যাবসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের অনমনীয় অভিযানে সেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি কেটেছে, বাঘা বাঘা অস্ত্রবাজের পতন হয়েছে। এলাকাবাসীর বুকের সেই কাঁপুনিও কমেছে। তবে সাহসী হওয়ার মতো পরিবেশ যে এখনও গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। সে কারণেই মোবাইলফোনের হুমকিধামকি এখনও সাধারণ মানুষের কাছে ভীতির কারণ হয়ে রয়েছে। এরপর যখন বাড়ির উঠোনে বোমা নিক্ষেপ করে হুঙ্কার দিয়ে বলে, বাড়ির উঠোনের পর এবার বোমা মারা হবে মাথায়- তখন শঙ্কিত না হওয়ার কি কারণ থাকে? যদিও অধিকাংশ চাঁদাবাজ বা চাঁদাবাজচক্রের মূল অস্ত্র মোবাইলফোন।

মোবাইলফোনে হুমকিধামকিতে চাঁদাবাজিই শুধু নয়, সকল প্রকারের অপরাধমূলক অপকর্ম রুখতে প্রত্যেক মোবাইলফোন ব্যবহারকারীকে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়। নতুন নম্বর নিতে হলেও বেশ কিছু শর্ত মানতে হয়। অথচ এরপরও লক্ষ্য করা যায়, যেসব সেলফোন তথা মোবাইলফোন নম্বর দিয়ে হুমকিধামকি দিয়ে চাঁদাবাজি করা হয়, তার অধিকাংশই ফেক নামে নেয়া। এটা সম্ভব হচ্ছে কীভাবে? অবশ্যই মোবাইলফোনের সিম বিক্রেতাদের কেউ কেউ বেনামে তা বিক্রি করছেন বা করতে বাধ্য হচ্ছেন। তা ছাড়া মোবাইলফোন ব্যবহারকারীর অবস্থান এবং সিম বদলানোর পরও মোবাইলফোনে কখন কোন নম্বরটি কোথায় কতোটুকু ব্যবহার হচ্ছে তাও যখন শানাক্ত করে অপরাধীকে ধরার প্রযুক্তি পুলিশের হাতে রয়েছে তখন ওইসব চাঁদাবাজ ধরা পড়ছে না কেন? অপ্রতুলতার অজুহাত আর কতোদিন!

মোবাইলফোনে খুনের হুমকি দেবে, চাঁদা না পেয়ে বোমা মারবে। এরকম পরিস্থিতি কোনো জনপদের শান্তিকামী সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে না। মোবাইলফোন ফেক বা ভুয়া নামে রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকলে কোথায় কীভাবে কার সহযোগিতায় হয়েছে তা যেমন খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, তেমনই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সন্ত্রাসবিরোধী অনমনীয় অভিযান জোরদার করার তাগিদ পদে পদে পরিলক্ষিত হচ্ছে। মোবাইলফোনে হুমকির শিকার হলেও অনেকে মুখ খোলেন না, তাদের সাহসী করতে পুলিশি তৎপরতা আরো জোরদার করা জরুরি।