চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে ৩৭৭টি উপজেলায় ১২৪৫টি নারী সদস্য পদে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া গতকাল সোমবার সকাল ৮ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অনিয়মের অভিযোগ আসায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ভোটকেন্দ্রে এ ভোটগ্রহণ করা হয়। এসব ভোটকেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা দেয় সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ৩৭৭টি উপজেলায় ১২৪৫টি নারী সদস্য পদের বিপরীতে মোট ২৫৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ১১ হাজার ১৬৮ জন। এছাড়া প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে একক প্রার্থী থাকায় ৩০১ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ১৬টি আসনে কোনো প্রার্থীই মনোনয়নপত্র জমা না দেয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদে নারী সদস্য পদের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার সংরক্ষিত নারী সদস্যরা। সদস্যপদে প্রার্থীও ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংরক্ষিত নারী সদস্যরা। আইন অনুযায়ী, প্রতিটি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভার মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের সমান সংখ্যক পদ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। কোনো উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন থাকলে পরিষদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত পদের সংখ্যা হবে পাঁচটি। ১২ টি থাকলে চারটি। গত ১৩ মে ৪৭৮ উপজেলায় সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে তফসিল ঘোষণা করে ইসি। সীমানা ক্রটির কারণে ৮টি উপজেলাতে নির্বাচন স্থগিত হয়। ৪৭০টির মধ্যে ৯৩টি উপজেলায় ৩০১ জন সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। ফলে বাকি ৩৭৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো প্রায় দেড় হাজার নারী সদস্য উপজেলা পরিষদে যোগ দিতে যাচ্ছেন।

এদিকে চুয়াডাঙ্গায় চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা সদস্য ১০টি পদে মধ্যে ৮জন বেসরকারি ফলাফলে নির্বাচিত, দুটি আসনে সমান সংখ্যক ভোট পাওয়ায় ফলাফল অমীমাংসিত ও ৩জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সদর, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ ভোটগ্রহণ চলে। চুয়াডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলায় কোনো ভোট বাতিল না হলেও আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২৫টি ভোট বাতিল হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বেগমপুর ইউনিয়নের মহিলা ইউপি সদস্য হালিমা খাতুন (মোরগ), তিতুদহ ইউনিয়নের মৌসুমী বেগম (হরিণ) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চুয়াডাঙ্গা সদরে ভোটার সংখ্যা ছিলো ২৪ জন। এর মধ্যে গতকালের নির্বাচনে ২৩ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। হালিমা খাতুন মোরগ প্রতীকে ২১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মৌসুমী বেগম হরিণ প্রতীকে পান ২ ভোট। সদর উপজেলায় তিনজন সদস্যের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর সুলতানা আরা রতনা ও পদ্মবিলা ইউপির সংরক্ষিত সদস্য খালেদা বেগম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১নং আসনে ২০ ভোট পেয়ে জাহানারা বেগম বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নূর বানু খাতুন ১৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। ২নং আসনে জেসমিন আক্তার ও সেলিনা খাতুন সমান সংখ্যক ১৮ ভোট পেয়ে ফলাফল অমীমাংসিত রয়েছে। ৩নং আসনে আসমিনা খাতুন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ৪নং আসনে ছাহেরা খাতুন ও মর্জিনা খাতুন সমান সংখ্যক ১৪ ভোট পেয়ে ফলাফল অমীমাংসিত রয়েছে। ৫নং আসনে ফাতেমা খাতুন ১৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ১৪ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। জীবননগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১নং আসনে বুলবুলি খাতুন ১২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী রেখা খাতুন মাত্র ৫ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। ২নং আসনে শিরিনা খাতুন ১০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী নার্গিস আক্তার ৭ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। সাতটি আসনের নির্বাচনে পাঁচজন বেসরকারিভাবে বিজয়ী হলেও আলমডাঙ্গায় দুটি আসনে সমান সংখ্যক ভোট পাওয়ায় তাদের ভোট পরবর্তীতে পুনরায় অনুষ্ঠিত হবে। তিনটি আসনে প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর গাংনী উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচনে তিনটি আসনের দুটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থক নারী সদস্যরা জয়লাভ করেছেন। অপরটিতে বিএনপি সমর্থক দু প্রার্থী সমান সংখ্যক ভোট পাওয়ায় পুনঃনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রোববার উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে সকাল আটটা থেকে দুপুর দুটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ১নং আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থী মর্জিনা বেগম ৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থক আসমা তারা পেয়েছেন ৬ ভোট। ২নং আসনে নাজমিনা আক্তার ৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থক ফরিদা পারভীন পেয়েছেন ৭ ভোট। এদিকে ৩নং আসনে বিএনপি সমর্থক পারভীনা আক্তার ও রেহেনা আক্তার ৯টি করে ভোট পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থক রওশানারা পেয়েছেন ৩ ভোট।

প্রিসাইডিং অফিসার আসাদুজ্জামান জানান, দুজন প্রার্থী সমান সংখ্যক ভোট পাওয়ায় কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি। এদিকে নির্বাচনে বিজয়ী নাজমিন আক্তার চামেলী ও মর্জিনা আওয়ামী লীগের বিজয়ী দু প্রার্থীকে তাৎক্ষণিকভাবে সংবর্ধনা দিয়েছেন মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য মকবুল হোসেন। এমপির বাসভবনে সংবর্ধনাকালে আরো শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন গাংনী পৌর মেয়র আহমেদ আলী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শফি কামাল পলাশ, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ষোলটাকা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আয়ুব আলী, তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াসিন রেজা, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুজ্জামান শিপু ও ফয়সাল আহম্মেদ আহমেদ সাগরসহ নেতৃবৃন্দ।

প্রিসাইডিং অফিসার সূত্রে জানা গেছে, গাংনী উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভার নির্বাচিত সংরক্ষিত ৩০ জন নারী সদস্য ভোটারের মধ্যে ২৯ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। একজন ভোটার তিনটি করে ভোট দিয়ে তিনটি আসনের সদস্য নির্বাচিত করেন। ১নং ওয়ার্ডে ১৪টি, ২নং ওয়ার্ডে ১৩টি ভোট বৈধ এবং ৩নং ৮টি ভোট বাতিল হয়।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন,মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। মুজিবনগর উপজেলার আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহিনা খাতুন ৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বীপ্রার্থী বিএনপির জাহানার খাতুন পেয়েছেন ৫ ভোট। একটি আসনের জন্য উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ১২ জন ভোটারের মধ্যে ১১ জন ভোটার ভোট অধিকার প্রয়োগ করেন। প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন মৎস্য অফিসার এএফএম নাজমুস সালেহীন।

 

Leave a comment