রাজধানীতে গণধর্ষণের শিকার নারী পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানী ঢাকার রাস্তায় মাইক্রোবাসে গারো তরুণীকে গণধর্ষণের পর এবার এক নারী পুলিশ সদস্য একই ঘটনার শিকার হলেন। দু বন্ধুকে নিয়ে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ করেছে আরেক পুলিশ সদস্য। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায়। ধর্ষণে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের নাম কালিমুর রহমান। সে বর্তমানে এসপিবিএনে (স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন) সহকারী উপপরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। এর আগে সে খিলগাঁও থানায় তিন বছর এএসআই হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে। দু সহযোগী নিয়ে ধর্ষণকারী পুলিশ সদস্য ওই নারী পুলিশ সদস্যের সাবেক স্বামী। বছরখানেক আগে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। নারী পুলিশ সদস্য খরপোষের জন্য তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছেন। মামলার প্রতিশোধ নিতেই কৌশলে ও ফুসলিয়ে খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ার এক বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে তাকে। এদিকে ধর্ষণের শিকার নারী পুলিশ সদস্যকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) ভর্তি করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। আজ রোববার সকালে তার ফরেনসিক বিভাগে ডাক্তারি পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল রাত পর্যন্ত পুলিশ ধর্ষক কালিমুর ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশ বলছে, মামলার পর ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, গত ১০ই মার্চ সকালে কালিমুর রহমান তার সাবেক স্ত্রী ওই নারী পুলিশ সদস্যকে ব্যক্তিগত কথা বলার নাম করে মোবাইলফোনে তাকে খিলগাঁও আসতে বলে। তিনি প্রথমে আসতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় কালিমুর রহমান কান্নাকাটি শুরু করে। কালিমুরের আবেগ দেখে ১০ই মার্চ সন্ধ্যায় ওই নারী পুলিশ সদস্য খিলগাঁও টেম্পো স্ট্যান্ডে যান। ওই টেম্পো স্ট্যান্ডে আগে থেকে অবস্থান করছিলো কালিমুর। তখন ওই নারী পুলিশ সদস্য কালিমুরকে জিজ্ঞাসা করেন, কি কথা বলার জন্য তাকে ডাকা হয়েছে। কালিমুর তখন তাকে বলে, রাস্তায় সব কথা বলা যায় না। বাসায় চলো। এ সময় তিনি বাসায় যেতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর কালিমুর তাকে ফুঁসলিয়ে খিলগাঁওয়ের সি ব্লকের তিলপাপাড়ার ৮৬/৩, নম্বরে তার এক আত্মীয়র বাসায় নিয়ে যায়। তিন তলা ওই বাড়ির নিচতলার বেডরুমে কালিমুর ও তার দুই সহযোগী মিলে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ করে। এ সময় তিনি অচেতন হয়ে যান। পরের দিন ওই নারী পুলিশ সদস্য কৌশলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। পরে তিনি শাহজাহানপুরে তার এক ভাবির বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তিনি রাজারবাগ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মামলার সাক্ষী ও প্রমাণপত্রের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন। গতকাল দুপুরে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে প্রথমে ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। পরে তাকে ওসিসিতে স্থানান্তর করা হয়। গত ১২ই মার্চ দুপুরে ওই নারী পুলিশ খিলগাঁও থানায় মামলা করতে গেলে তার মামলা থানা পুলিশ নেয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। তার আইনজীবী বড় বোন জানান, তার বোন বর্তমানে তুরাগ থানার কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। তিনি ওই থানার ব্যারাকেই থাকেন। কোনো কোনো দিন গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকায়ও থাকেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খিলগাঁও থানায় কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। ওই সময় একই থানায় এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন কালিমুর রহমান। সেখানেই তাদের মধ্যে পরিচয়। পরে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। কালিমুর রহমান কয়েকদিন আগে খিলগাঁও থানা থেকে এসপিবিএনে বদলি হয়েছেন।
নির্যাতিতা ওই নারীর বড় বোন বলেন, বিয়ের পর তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশেই একটি স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের একটি মেয়ে সন্তান হয়। ২০১৩ সালে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। কালিমুর তার বোনকে চাকরি ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দেয় এবং যৌতুক হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। তার বোন কালিমুরের ওই দুই শর্তে রাজি হয়নি। এ জন্য তাকে প্রায়ই মারধর ও বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো। স্বজনরা জানান, পারিবারিক কলহের বিষয়টি ওই নারী পুলিশ সদস্য তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি