যাত্রীবাহী বাস উল্টে আহত ১৫ : মামলার প্রস্তুতি

দামুড়হুদায় পিচরোডের সেই পিচ্ছিল কাদায় আবারও হরদম দুর্ঘটনা

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদায় পিচরোডের পিচ্ছিল কাদায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী বাস উল্টে কমপক্ষে ১৩ যাত্রী আহত হয়েছে। পথচারীরা আহতদের উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এদিকে ওই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জেলা বাসমালিক সমিতির পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। এলাকাবাসী এ ঘটনার জন্য দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দায়ী করেছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটের দিকে চুয়াডাঙ্গা-যশোর সড়কের দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের সামনে ওই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, দামুড়হুদা বাজারপাড়ার নেদু মিয়া ও দশমীপাড়ার নাজমুল হাসান বেল্টু আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের পেছনের বিলে তাদের ব্যক্তিগত পুকুর মেশিন দিয়ে পুনঃখনন করেন। দিন পনেরো খননকৃত ওই পুকুরের কাদামাটি বিল থেকে ট্রাক্টরে নিয়ে আসা হয় চুয়াডাঙ্গা-যশোর সড়কের দামুড়হুদা ফিলিং স্টেশনের অদূরে নবনির্মিত দারুহ সুন্নাহ ইসলামিয়া মাদরাসায়। ওই কাদামাটি ট্রাক্টরে বহনের সময় বেশকিছু কাদামাটি পিচরোডে পড়ে লেপটে যায়। গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটের দিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে দর্শনা অভিমুখে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস (চুয়াডাঙ্গা-জ-১১-০০০২) দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের সামনে আসা মাত্রই পিচরোডের ওপর পড়ে থাকা ওই পিচ্ছিল কাদায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং রাস্তার বামপার্শ্বে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে উল্টে যায়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে কিছুক্ষণ পর চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী বাসে থাকা আহত যাত্রী চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জস্থ সুজন ট্রেডার্সের তুলা শ্রমিক জয়রামপুর স্টেশনপাড়ার আরজিনা খাতুন (৪৫) জানান, ফাহিম ফয়সাল নামের ওই দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি চুয়াডাঙ্গা থেকে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে আসে। তিনি আরো বলেন, বাসে প্রায় ১৪/১৫ জন যাত্রী ছিলো। সকলেই কমবেশি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তারানীপুরের আলমগীরের স্ত্রী তুলা শ্রমিক বকুল বেগম (৫০) বেশি আঘাত পেয়েছেন। তাকে দামুড়হুদার চিৎলা হাসপাতালে নেয়া হয়। তার মাথায় দু স্থানে মোট ৯টি সেলাই দেয়া হয়েছে এবং ডান চোখের নিচ দিয়ে অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। আরজিনা খাতুনকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। তিনি অন্তঃসত্ত্বা বলে জানা গেছে।

এছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে, শান্তিপাড়ার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে নজরুল ইসলাম (৫৪), জয়রামপুরের মৃত আব্দুল হামিদের স্ত্রী আরজিনা খাতুন (৪৫), কেদারগঞ্জের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল, একই পাড়ার মৃত ফকির বিশ্বাসের ছেলে লিটন, পলাশপাড়ার রোকনের স্ত্রী উষা (৩০), তার স্বামী রোকন ও জীবননগর বাসস্ট্যান্ডের নজরুল ইসলামের ছেলে লিটন। আহতদের মধ্যে বকুল বেগমকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনার পরপরই রাস্তার উভয় পার্শে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে দামুড়হুদা থানা পুলিশ এসে যানজট নিরসন করে। এ ঘটনার মিনিট দশেক আগে একই স্থানে ৫/৬টি মোটরসাইকেল আরোহী ওই পিচ্ছিল কাদায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আছড়ে পড়ে আহত হন। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যান দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. আজিজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ছালমা জাহান পারুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টুসহ অনেকেই। এ বিষয়ে দারুহ সুন্নাহ ইসলামিয়া মাদরাসার পরিচালক মুফতি রুহুল আমিন বলেন, মাদরাসাটি জনগণের প্রতিষ্ঠান। পত্রিকায় নিউজ হওয়ার পরদিন অর্থাৎ ৭ জুন মাদরাসার পক্ষ থেকে দুটো লেবার নিয়ে ওই কাদার বেশকিছু অংশ অপসারণ করা হয় এবং ওই স্থানে দুর্ঘটনার পরপরই কাদা ঢেকে দিতে কয়েক ট্রাক্টর বালি দেয়া হয়েছে। এদিকে পিচরোডের ওপর পড়ে থাকা কাদামাটির জন্য দায়ী কে এমন প্রশ্নের জবাবে এলাকার অধিকাংশ সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, এ ঘটনার জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষ যতোটা না দায়ী তার চেয়ে ঢের দায়ী দামুড়হুদার ইউএনও। কারণ গত ৬ জুন এই স্থানেই দুর্ঘটনার শিকার হন প্রায় ৩৫ মোটরসাইকেল আরোহী। বিষয়টি স্থানীয় লোকজন ইউএওকে জানানোর পরও উনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। তারা আরো বলেন, উনি ইতঃপূর্বে কর্মসংস্থান কর্মসূচির লেবার দিয়ে উপজেলা পরিষদের ঝোড়জঙ্গল পরিষ্কার করিয়েছেন, থানার মধ্যে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করিয়েছেন এমনকি ওই লেবার দিয়ে মাথাভাঙ্গা নদীর অবৈধ বাঁধ-কোমর অপসারণ করিয়েছেন। তাহলে এই সামান্য ১০০ গজ রাস্তা পরিষ্কারের জন্য উনি কি ১০টি লেবার দিতে পারতেন না?

উল্লেখ্য, গত ৬ জুন বিকেলে ওই একই স্থানে প্রায় ৩০/৩৫ জন মোটরসাইকেল আরোহীসহ বেশকিছু সিএনজি রাস্তায় পড়ে থাকা ওই পিচ্ছিল কাদায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মডেল থানার ওসিকে অবহিত করা হলেও গতকাল পর্যন্ত ওই কাদামাটি অপসারণের কোনো ব্যবসা না নেয়ায় প্রশাসনের প্রতি অনেকেই চরমভাবে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। আহত ব্যক্তিরা এ ঘটনার জন্য দায়ীদের হই গালাগালি করে। অবিলম্বে ওই পিচরোডে লেপটে থাকা কাদামাটি অপসারণের জন্য মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় ফলাও করে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। তারপরও টনক নড়েনি প্রশাসনের।