মেহেরপুর অফিস: গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মোবাইল নম্বরে একটি এসএমএস আসে। এর বিষয়বস্তু, এক যুবকের বাঁচার আকুতি। তাকে অপহরণ করে একদল সন্ত্রাসী জেলা শিল্পকলা একাডেমীর ভেতরে আটকে রেখেছে। এমন খবর পেলে পুলিশ যে কতো দ্রুত অভিযানে নামে তা দেখালেন সদর থানার ওসি। তিনি তড়িৎ পুলিশের কয়েকটি দল নিয়ে গোটা শিল্পকলা একাডেমী এলাকা ঘিরে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য। এর কিছুক্ষণ পর ওই একই মোবাইল নম্বর থেকে পুনরায় এসএমএস আসে তাকে মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে। এখনই তাকে গুলি করে হত্যা করবে সন্ত্রাসীরা। সেখানেও শিল্পকলা একাডেমীর মতো অভিযান, ফলাফলও একই। এরপর আরো কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে মর্মে আরো কয়েকটি এসএমএস আসে। সেসব স্থানে অভিযান চালিয়েও তার কোনো হদিস পায়নি পুলিশ। এক পর্যায়ে অনেকটাই হতাশা ভর করে অভিযান দলের ঘাড়ে। কিন্তু হাল ছাড়েননি কেউ। যেকোনো মূল্যে অভিযান সফল করতে নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নামে পুলিশের অভিযান দলগুলো। কীভাবে একটি প্রাণ রক্ষা করা যায় এবং সন্ত্রাসীদের কীভাবে আটক করা যায় তা নিয়ে অস্থির জেলার পুলিশ বিভাগ। অনেকটাই রেড এলার্ট ঘোষণার মতো পুলিশের একাধিক দল বিভিন্ন কৌশলে শহরের অলিগলিতে ব্যাপক নজরদারি ও অভিযান শুরু করে। শেষ পর্যন্ত রাত দশটার কিছুক্ষণ পর ওই যুবকের কল আসে ওসির নম্বরে। তাকে কেউ অপহরণ করেনি স্বীকার করে সে জানায়, এক পুলিশ সদস্য তাকে হয়রানি করেছিলো, বিধায় সে পুলিশকে এমন হয়রানি দিয়েছে। তার কন্ঠে ছিলো প্রতিশোধের হাসি। সাবলীল ভাষায় সে ওসিকে কথাগুলো বলে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মোবাইলের কথোপকথন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর ওসি কৌশলে এশিয়া নেট মোড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। গ্রেফতার হওয়া যুবক শহরের মল্লিকপাড়ার আহসান হাবীবের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২০)। সে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অনার্স (ম্যানেজমেন্ট) প্রথম বর্ষের ছাত্র। তাকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয় পরিস্থিতির অবসান হলেও কী কারণে সে এ কাজ করেছে তা নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবীব জানান, প্রথমে ম্যাসেজ পাওয়ার পর থানা, ফাঁড়ি ও ডিবির একাধিক দল কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে অভিযান শুরু করে। যেকোনো মূল্যে অপহৃত উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে মরিয়া হয়ে ওঠে পুলিশ। সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চলে এ অভিযান। এতে নিয়মিত কাজের বিঘ্ন ঘটে। পুলিশকে এভাবে ব্যস্ত রেখে শহরে বড় ধরনের কোনো নাশকতা করার পরিকল্পনা কারো ছিলো কি-না তা যাচাই করা হচ্ছে। এর আগে কখনো সে গ্রেফতার হয়নি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারের পর অস্বাভাবিক আচরণ করছে। প্রাথমিকভাবে ধরা হচ্ছে সে একজন নেশাগ্রস্ত মানুষ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং আজ শনিবার সকালে পুলিশ সুপার তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এরপরই তার বিষয়ে কী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান ওসি। এদিকে খবর পেয়ে সাজ্জাদের পিতা আহসান হাবীব রাতেই সদর থানায় হাজির হন। তিনি পুলিশকে অবহিত করেন যে, তার ছেলে নেশাগ্রস্ত। লেখাপড়ার পাশাপাশি আউট সোর্সিং করে বেশ ভালোই আয় করতো। এ টাকা নিয়ে মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বাইরে যেতো। এক পর্যায়ে সে নেশায় জড়িয়ে পড়ে। এখন ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। এ কারণে অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থা চলছিলো সাজ্জাদের। সাজ্জাদের পিতার দাবি সঠিক কি-না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।