এসএসসি : ৯ ভাগ পরীক্ষার্থীরই ফল নিয়ে আপত্তি

ন্টাফ রিপোর্টার: জান্নাতুল ফেরদৌসী সুখি। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞানে পাস করেনি সে। অন্য বিষয়ে লেটার গ্রেড পেলেও ওই বিষয়ে ‘এফ’ (ফেল) তার। সুখির ধারণা, সে এমন ফল করতেই পারে না। তাই চ্যালেঞ্জের আবেদন করেছে বোর্ডে। আবার আরিফুল ইসলাম পেয়েছে জিপিএ-৫। কিন্তু জীববিদ্যায় সে ‘এ-প্লাস’ পায়নি। তারও ফল নিয়ে আপত্তি। এদিকে ফয়জুল ইসলাম জিপিএ-৪ দশমিক ১১ পেয়েছে। এ পরীক্ষার্থী উচ্চতর গণিতের মতো বিষয়ে ‘এ-প্লাস’ পেলেও সাধারণ গণিতে পেয়েছে ‘এ-মাইনাস’। ইংরেজিতে পেয়েছে ‘বি’। তবে আর কোনো বিষয়ে ‘এ-মাইনাসের’ কম পায়নি সে। তারও ফল চ্যালেঞ্জের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত আবেদন করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুখি ও আরিফের মতো এবার ফল চ্যালেঞ্জের আবেদন করেছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৩০১ শিক্ষার্থী। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জন। সে হিসাবে এবার খারাপ বা ভালো- উভয় ফলের বিপরীতে চ্যালেঞ্জকারী আছে মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ৯ ভাগ। যদিও ফয়জুলের মতো আরও অনেকের ফলের ব্যাপারে আপত্তি থাকলেও নানা কারণে পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করতে পারেনি। এ ধরনের পরীক্ষার্থী আবেদন করলে আবেদনকারীর সংখ্যা আরও বেড়ে যেত। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও পরীক্ষা বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ বলেন, সাধারণত দু ধরনের শিক্ষার্থী ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছে। যারা কৃতকার্য হয়নি, আর যারা কাক্সিক্ষত ফল করেনি। তবে আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ইদানীং জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও যে বিষয়ে ‘এ-প্লাস’ পায়নি, সে বিষয়ের ফলও কেউ কেউ চ্যালেঞ্জ করে। মূলত উচ্চতর ভর্তিতে পরীক্ষার ফল গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এমন প্রতিক্রিয়া আসছে।

উল্লেখ্য, এবার ১ লাখ ২৯ হাজার ৩০১ শিক্ষার্থী মোট ২ লাখ ৪৬ হাজার ২৯৩টি খাতা চ্যালেঞ্জ করেছে। এ খাতে বোর্ডগুলোর আয় ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। অথচ এ খাতে ব্যয় মাত্র ২০ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী সর্বমোট ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৬০টি খাতার ফল পুর্ণমূল্যায়নের আবেদন করেছিলো। তেমনিভাবে তার আগের বছর চ্যালেঞ্জকারী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল আরও কম। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান সিস্টেম এনালিস্ট মনজুরুল কবীর বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, ‘ঢাকা বোর্ডে গতবছর মাত্র ৫১ হাজার খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদন পড়েছিল। এবার পড়েছে প্রায় ৮৫ হাজার। অতীতের বিবেচনায় এটা একটি রেকর্ড সৃষ্টিকারী ঘটনা।’

বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফল পুনঃনিরীক্ষার ক্ষেত্রে এবার সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে গণিতে। ইংরেজির ক্ষেত্রে আবেদন না বাড়লেও বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, শারীরিক শিক্ষার মতো বিষয়ে গতবছরের চেয়ে এবার ফল চ্যালেঞ্জকারীর সংখ্যা বেড়েছে। গণিতে এবার প্রথমবারের মতো সৃজনশীল প্রশ্ন হয়। এ কারণে এতে খারাপ ফলকারীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। আর শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি এবার নতুন প্রবর্তিত হয়েছে। দশ বোর্ডের ইংরেজি, গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও শারীরিক শিক্ষা- এ ৫টি বিষয়ের পাসের হার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গণিতে গতবছরের চেয়ে ১১ ভাগ পরীক্ষার্থী কম পাস করেছে এমন রেকর্ডও রয়েছে। এ রেকর্ডটি হয়েছে সিলেট বোর্ডে। ১০টির মধ্যে কোনো বোর্ডেই গতবছরের তুলনায় এ বিষয়ে পাসের হার বেশি নেই। আবার যদিও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে পাসের হার সাড়ে ৯৮ ভাগের নিচে নেই কোনো বোর্ডে। কিন্তু ‘এ-প্লাস’ বা কাক্সিক্ষত ফল কম এই বিষয়ে। একই ঘটনা ইংরেজি এবং পদার্থ ও রসায়নে। যে কারণে ফল চ্যালেঞ্জকারীর সংখ্যা এবার বেশি। তবে এর বাইরেও বাংলা, সাধারণ বিজ্ঞান এমনকি ধর্ম বিষয়েও পুনঃনিরীক্ষার আবেদন হয়েছে।

ফল চ্যালেঞ্জকারী ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী সুখি জানায়, পদার্থবিজ্ঞানে তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কীভাবে ফেল এসেছে- এ প্রশ্নের জবাব পেতেই সে আবেদন করেছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ বলেন, যেসব পরীক্ষার্থী খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছে, আমরা তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মোট চারটি দিক দেখে থাকি। এগুলো হচ্ছে- সবকটি উত্তরে নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে (কম্পিউটারে ফল প্রণয়নে পাঠযোগ্য ফরম) উত্তোলনে ভুল হয়েছে কিনা এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা।

তিনি বলেন, মাত্র দু মাসের মধ্যে ফল প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। তাছাড়া কাজটি যেহেতু মানুষই করে তাই ভুল হওয়া স্বাভাবিক। তাই আমরা এ চারটির ক্ষেত্রে ত্রুটি পেলে তা সংশোধন করে নতুন ফল প্রকাশ করে থাকি।

গত ৩০ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এবার ১০ বোর্ডে মোট অংশ নেয় ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জন। পাস করেছে ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন। ১০ শিক্ষা বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ লাভ করেছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন। উল্লেখ্য, পুনঃনিরীক্ষার ফল আগামী ২০ জুন প্রকাশিত হবে।