গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিস ও বামন্দী এরিয়া অফিস দালালমুক্ত করতে পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে। গত সোমবার বামন্দী অফিস থেকে মটমুড়া গ্রামের চিহ্নিত দালাল রিপন হোসেনেকে (৩৫) গ্রেফতারের পর তাকে জেল-জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অচিরেই তালিকাভুক্ত সকল দালালকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন গাংনী থানার ওসি। রিপন হোসেন এ উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের পুরাতন মটমুড়া গ্রামের চাঁদ আলীর ছেলে। তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন জানান, দালালদের দৌরাত্মে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। দালাল নির্মুলে গত ৩১ মে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিকসভায় কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে দালালদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান শুরু হয়। সেমতে বামন্দী এরিয়া অফিসে দালালী করার সময় রিপনকে আটক করা হয়। বামন্দী এরিয়া অফিসের সামনে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করলে ওই দণ্ড দেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন জানান, সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও পল্লী বিদ্যুত অফিস থেকে জনগণকে মিটার লাগিয়ে দেয়ার নামে প্রতারণা করার অপরাধ স্বীকার করে রিপন। তাকে দোষী সাব্যস্ত করে একমাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া হয়। আদেশের পরেই জরিমানা পরিশোধ করে রিপন। পরে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করে গাংনী থানা পুলিশ।
গাংনী থানা ও পল্লী বিদ্যুত অফিসসূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নতুন সংযোগ দেয়া শুরু হলে দালালদের দৌরাত্ম চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। বিভিন্ন পরিচয়ে দালালরা পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপরে প্রভাব বিস্তার করে তাদের কথা মতো কাজ করতে বাধ্য করে। এতে রাজি না হলে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এদের মধ্যে একজন নারী কর্মচারীও রয়েছেন।
ওই সূত্রে আরো অভিযোগ, নতুন মিটার স্থাপনের লক্ষ্যে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত মৌখিক চুক্তি করে কতিপয় দালালরা। সংযোগ প্রত্যাশীরা নিরুপায় হয়ে তাদের হাতে টাকা তুলে দেয়। তখন থেকেই গ্রাহকদের মিটার লাগিয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে কর্মকর্তাদের ওপর চাপ শুরু হয়।
কোনো কনজ্যুমার মিটার অর্ডার (সিএমও) হলেই দালালরা অফিসে এসে হাজির হয়। তারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তাদের চুক্তির গ্রাহকের মিটার ছিনিয়ে নেয়। পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দালালদের নির্দেশ মতো মিটার লাগাতে বাধ্য হচ্ছে। তবে পল্লী বিদ্যুতের কেউ দালালদের সাথে জড়িত কি-না তাও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গাংনী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আবু আনাছ মোহা. নাছের জানান, দালালদের দৌরাত্মে দিশেহারা সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী। দালালরাই এখন নিয়ন্ত্রণ করছে নতুন মিটার স্থাপনের বিষয়টি। তাই আইনশৃঙ্খলা কমিটির গত মাসের সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অফিসের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে সকলের সহযোগিতা চাইলেন তিনি।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন আরো জানান, দালাল রিপন বামন্দী, মটমুড়া, কাজিপুর ও তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার শ শ নতুন বৈদ্যুতিক মিটার প্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ ছাড়াও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচনায় আসে। রিপনের ব্যাপারে তদন্ত শেষে অভিযুক্ত হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এলাকার প্রায় শতাধিক দালালের নামের তালিকা নিয়ে পুলিশের তদন্ত চলছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, যেকোনো মূল্যে পল্লী বিদ্যুতের দালালমুক্ত করা হবে। প্রতিটি দালালকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা এবং পল্লী বিদ্যুত অফিস এলাকায় পুলিশি টহল অব্যাহত থাকবে।