আলমডাঙ্গা শহরের কয়েক কোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা শহরের কয়েক কোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দীর্ঘদিনের লিজ গ্রহীতাদের সাথে কালিদাসপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল ইসলামের বিরোধ তুঙ্গে রূপ নিয়েছে। লিজসূত্রে বসবাসকারী মহির উদ্দীন তার পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও নূরুল ইসলাম সম্প্রতি ওই সম্পত্তি রেকর্ডমূলে দাবি করে তা দখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, ১৯৭৭ সাল থেকে অর্থাৎ দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে এ জমি লিজসূত্রে বসবাস করছেন মৃত ধীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ছেলে সন্তোষ কুমার বিশ্বাসেরা ৮ ভাই। তিনি জানান, এ সম্পত্তি প্রায় সাড়ে ৩১ শতক। জমির মালিক ছিলেন স্বর্গীয় ভগবানের। ১৯৬৮ সালে ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হয়। ১৯৭৭ সালে মৃত ধীরেন্দ্র বিশ্বাস ২০ শতক জমি সরকারের নিকট থেকে লিজ গ্রহণমূলে নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোগ দখল করে আসছেন। বর্তমানে ধীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের অবর্তমানে তার ৮ ছেলে লিজমূলে বসবাস করছেন। বর্তমান সাল অবধি লিজের সমুদয় টাকাও তারা পরিশোধ করেছেন। বাকি প্রায় সাড়ে ১১ শতক জমির ওপর দোতলা বিল্ডিং। এক সময় এই সাড়ে ১১ শতক জমিসহ বিল্ডিংটি অগ্রণী ব্যাংকের ভোগদখলে ছিলো। পরবর্তীকালে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা অন্যত্র স্থানান্তরিত হলে ২৪/১২/০৯ তারিখ থেকে মৃত চাঁদ আলী জোয়ার্দ্দারের ছেলে আকতার জোয়ার্দ্দার ও একই গ্রামের মৃত কলিম উদ্দীন মালিথার ছেলে মহির ওই সাড়ে ১১ শতক জমি লিজ গ্রহণ করে। সে সময় থেকেই মহির আলী পরিবারসহ সেখানে বসবাস করে আসছেন।

এদিকে, লিজ গ্রহীতাদের দাবি- আলমডাঙ্গা গোবিন্দপুর দক্ষিণপাড়ার শুকুর আলী আরএস রেকর্ডের সময় জরিপকারীদের প্ররোচিত করে ওই সম্পত্তি তার নামে রেকর্ডভুক্ত করায়। পরবর্তীকালে খাজনা দিতে গেলে তা জানাজানি হয়ে যায়। সে সময়ও লিজ গ্রহীতাদের জোরপূর্বক তুলে দিয়ে ওই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। গত ২২/১১/৯৫ তারিখে তৎকালীন জেলা প্রশাসক বাদী হয়ে সরকারের পক্ষে মামলা দায়ের করেন। গত ৪/৯/০২ তারিখে সে মামলায় সরকার পক্ষে রায় হয়। জিতে যায় লিজ গ্রহীতারাও। পরে শুকুর আলী আবারও উচ্চ আদালতে আপিল করেন। সে আপিলের রায় সরকার পক্ষের অনুকূলে যায়। বর্তমানে আবারো নতুন করে দাবি তুলে সোচ্চার হয়েছে।

আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান যিনি পরবর্তীকালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। তিনি আরএস রেকর্ডমূলে ও আমমোক্তারনামাবলে তিনি ওই সম্পত্তি দাবি তুলেছেন। গত ২৭/১১/১৩ তারিখে তিনি ওই সম্পত্তির লিজ অবমুক্তের দাবিতে জেলা জর্জ আদালত ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। সে মামলা চলমান। এরই মধ্যে গত ১ সপ্তা ধরে লিজ গ্রহীতাদের সাথে নূরুল ইসলামের চলছে দফায় দফায় গোলযোগ। লিজগ্রহীতা মহিরের দখলে থাকা ঘরের এক রুম দখল করে নুরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। গত পরশুও এ নিয়ে মারামারি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহির অসুস্থ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। বাড়িতে মহিরের স্ত্রী, সন্তান, ভাইয়ের বউসহ আরও কয়েকজন মহিলা আত্মীয় উপস্থিত ছিলো। সে সময় নুরুল ইসলামের পক্ষে কয়েকজন ওই ওই বাড়িতে চড়াও হয়ে ঘরবাড়ি ত্যাগ করে চলে যেতে বলে। তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় মহিরের স্ত্রীকে তারা মারধর করে। এমন পরিস্থিতিতে মহিলারা কেউ কেউ ঝাটা নিয়ে আবার কেউ কেউ শুকনো ঝালের গুড়ো পানিতে গুলিয়ে প্রতিপক্ষের মুখে স্প্রে করে। মহিলাবাহিনীর এমন আকস্মিক আক্রমনে দিশেহারা হয়ে নুরুল ইসলাম পক্ষের লোকজন পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে নূরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি আমমোক্তারনামা ও রেকর্ডমূলে ওই সম্পত্তি দাবি করছি। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা চলছে। রায় যা হবে মেনে নেব। তাছাড়া আক্তার তো আলমডাঙ্গা শহরের অনেক জমি দখল করেছে। এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিকুর রহমান বলেন, ওই সম্পত্তি সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হওয়ায় লিজ দিতে কোনো বাধা নেই। সে কারণে লিজ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযোগ তোলার কোনো সুযোগ নেই।