স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতনস্কেল আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে এমপিওভুক্ত প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী একই সময় থেকে নতুন স্কেলে বেতন-ভাতা পাবেন কি-না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে না। এ জন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা উদ্বিগ্ন।
অনেক শিক্ষক-কর্মচারী তাদের এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তাদের দাবি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো তাঁরাও যেন জুলাই থেকে নতুন স্কেলে বেতন-ভাতা পান। এ বিষয়ে গত রোববারও স্পষ্ট কিছু জানায়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ গতকাল বলেন, এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি (প্রস্তাবিত বেতনকাঠামো) মন্ত্রিসভায় যাবে, অনুমোদন পাবে, এরপর এ বিষয়ে বলা যাবে। এর আগে বলা যাবে না।
গত শুক্রবার বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি এর জবাব দেননি। অবশ্য শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখন পর্যন্ত তিনি এ বিষয়ে নেতিবাচক কিছু দেখছেন না। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের মূল বেতনের পুরোটাই সরকারি কোষাগার থেকে পান। এর সাথে বর্তমানে ২০ শতাংশ মহার্ঘ্যভাতা, ৫শ টাকা বাড়িভাড়া, ৩শ টাকা চিকিৎসা ও উৎসবভাতা (শিক্ষকেরা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ ও কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ পান) পাচ্ছেন। প্রায় ২৬ হাজার স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় প্রায় পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন। ৪ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়ন শুরুর ঘোষণা দিচ্ছি। এ ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করব। আশা করি, নতুন বেতনকাঠামো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে স্বস্তি এনে দেবে।’ কিন্তু ওই বক্তৃতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের নতুন বেতনস্কেল নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
অর্থমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। ১ জুলাই থেকে নতুন স্কেলে বেতন-ভাতা দেওয়া হবে না বলে অনেকের আশঙ্কা। এ জন্য এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে না। গতকাল একাধীক শিক্ষক বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে তাঁরা একটি স্পষ্ট ঘোষণা চান। বাজেট বক্তৃতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের নতুন জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম ও রিয়াজ উদ্দিন এক বিবৃতিতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, শিগগির এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে, অন্যথায় তারা আন্দোলন কর্মসূচি দেবেন। মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেতন ও চাকরি কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করার জন্য গঠিত সচিব কমিটি গত ১৩ মে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার নেতৃত্বাধীন ওই পর্যালোচনা কমিটি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতন বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ করার সুপারিশ করে। এর মধ্যে গ্রেড-১ বা সর্বোচ্চ গ্রেডের (ধাপ) মূল বেতন হবে ৭৫ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ধাপে আট হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পর্যালোচনা কমিটি বর্তমান কাঠামোর মতো ২০টি ধাপেই বেতন দিতে বলেছে।