স্টাফ রিপোর্টার: পাচারকারীদের বোটে করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টাকালে প্রায় তিন মাস সাগরে ভাসার পর মিয়ানমার উপকূল থেকে ১৭ দিন আগে উদ্ধার হওয়া ১৫০ বাংলাদেশীকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে সরকার। আজ মঙ্গলবার এদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। পরে স্বজনদের নিকট সকলকেই ফেরত দেয়া হতে পারে।
উদ্ধার হয়ে দেশে ফেরা দেড়শ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার ৪ জন রয়েছে। এরা হলো- ফিরোজ মণ্ডলের ছেলে সাইফুল মণ্ডল, সুমিত আলী ছেলে মো. আরিফুল ইসলাম, আবদুর ফরাজির ছেলে শফিকুল ইসলাম, মফিউর রহমানের ছেলে মফিজুল হোসেন রয়েছে। তবে এদের বিস্তারিত ঠিকানা তাৎক্ষনিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।
গতকাল সোমবার দুপুরে বাংলাদেশের ঘুমধুম ও মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তে পতাকা বৈঠকের পর মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ এই বাংলাদেশিদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। বেলা ১টা ৫৩ মিনিটে ঘুমধুমের বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সেতু দিয়ে ৩০ জনের প্রথম দলটি দেশে প্রবেশ করে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও নিয়ে আসা হয়। উদ্ধারের আগে তিন মাস তারা সাগরে ভাসছিলেন। দিনের পর দিন তারা থেকেছেন না খেয়ে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। এখন আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বিজিবি কর্মকর্তারা জানন, ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশিদের মধ্যে ১৭ জেলার বাসিন্দা রয়েছে। এদের মধ্যে নরসিংদীর ৫৬, কক্সবাজারের ৩৩, বান্দরবানের ১০, চট্টগ্রামের ৭, বাহ্মণবাড়িয়ার ৬, ঝিনাইদহের ১২, পাবনার ৫, টাঙ্গাইলের ৩, সুনামগঞ্জের ৪, বাগেরহাটের ৪, চুয়াডাঙ্গার ৪, নাটোরের ১, চাঁদপুরের ১, হবিগঞ্জের ১, নারায়ণগঞ্জের ২, রাজবাড়ীর ২ ও যশোরের ২ জন।
ফিরে আসাদের মধ্যে রয়েছেন ঝিনাইদাহের ইসমাইল হোসেনের ছেলে মফিউর রহমান, মো. নিজামের ছেলে হারুন উর রশিদ, ওসেল বিশ্বাসের ছেলে মহসিন বিশ্বাস, ইসমত আলীর ছেলে মো. সোবহান, মকবুল মোল্লার ছেলে পলাশ, মোতালেব মণ্ডলের ছেলে রফিকুল ইসলাম, রাহাজ উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে আবুল কালাম, রজব আলীর ছেলে আবদুর রাজ্জাক, শরীফ বিশ্বাস ছেলে দুলাল, ইসমাইল সরদারের ছেলে আবদুল মালেক ও রাসেদ মণ্ডলের ছেলে ছব্বির হোসেন। ফিরে আসাদের মধ্যে সুনামগঞ্জের মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে সাহেদ উদ্দিন, আহমদ আলীর ছেলে রমজান আলী, সোনাপুর আলীর ছেলে শওকত আলী,মো. ইদ্রিস আলীর ছেলে আলী হোসেন; বি. বাড়িয়ার ছিদ্দিক সরকারের ছেলে আনোয়ার হোসেন,হোসেন মিয়ার ছেলে এরশাদ; বান্দরবান জেলার ইকবালের ছেলে জাহিদ ইসলাম, নূরুল হকের ছেলে রহিম উল্লাহ, মনির আহমদের ছেলে আবদুল ছবি, মো. শফির ছেলে নূরুল হক; কুমিল্লার সোলতান আহমদের ছেলে রিদুয়ান,চাঁদপুরের ইউসুপ আলীর ছেলে কালাম; রাজবাড়ির আবদুল খালেকের ছেলে সাইফুল ইসলাম;কক্সবাজার জেলার নূরুল ইসলামের রমিজ উদ্দিন, মো. সৌরভের ছেলে নূরুল হোসেন, মহসিন আলীর ছেলে সাকের, আসমত আলীর ছেলে সিরাজুল হক, জহির আহমদের ছেলে মিজানুর রহমান,ইমতিয়াছ আহমদের ছেলে আবদুল খালেক, কাশেম আলীর ছেলে মো. রশিদ মিয়া, সেলিম হোসেনের ছেলে হামিদ হোসেন, রহমত আলীর ছেলে শাহাজান, আবদুল জব্বারের ছেলে জসিম উদ্দিন, আবদুর রহমানের ছেলে ইয়াছিন আরফাত, আমির হাওলাদারের ছেলে শহিদুল ইসলাম, দুলু মিয়ার ছেলে ইউসুপ খান, মো. হাসেমের ছেলে আবুল হোসেন, ফজল করিমের ছেলে একরাম,আবদুল করিমের ছেলে ইকরাম, আবদুল করিমের ছেলে সোহেল সরকার, মো. রাশেদের ছেলে ইদ্রিস,হাজী নূরুল হকের ছেলে ইমরান হোসেন, আহমদ আলীর ছেলে জসিম উদ্দিন, নুরুল ইসলামের ছেলে আবদুস শুক্কুর, জিয়াবুল হকের ছেলে মিজানুর রহমান, মাহমুদুল করিমের ছেলে গিয়াস উদ্দিন,মৃত আবু তাহেরের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, হাবিবুর রহমানের ছেলে সালামত উল্লাহ, শামশুল আলমের ছেলে মোক্তার হোসেন, মো. হাশিমের ছেলে নুরুল আবছার, সিরাজুল হকের ছেলে মুবিনুল হক, মৃত উলা মিয়ার ছেলে রফিক আলম, কালা মিয়ার ছেলে সাইফুল, টাইঙ্গাইলের আবদুল করিমের ছেলে আবদুল ছৈয়দ, আবদুল জলিলের ছেলে উজ্জ্বল হোসেন, জহির উদ্দিনের ছেলে সাহাদত হোসেন; চট্টগ্রাম জেলার সাহাব উদ্দিনের ছেলে মো. হেলাল, উমর আলীর ছেলে হাসেম, সাহেদ আহমদের ছেলে লুকমান কবির, আলী আমজাদের ছেলে চাঁদ মিয়া, শহিদুল্লাহর ছেলে সেলিম উদ্দিন, বদিউল আলমের ছেলে মো. বাদশা, আবদুল আলিমের ছেলে মো. জলিল, শাহ আলমের ছেলে মো. আরিফ, চুয়াডাঙ্গার ফিরোজ মণ্ডলের ছেলে সাইফুল মণ্ডল, সুমিত আলী ছেলে মো. আরিফুল ইসলাম, আবদুর ফরাজির ছেলে শফিকুল ইসলাম, মফিউর রহমানের ছেলে মফিজুল হোসেন; নারায়ণগঞ্জ জেলার আবু মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া ও নুরুল ইসলামের ছেলে মো. হালিম; নরসিংদীর সোনা মিয়ার ছেলে এবাদুল মিয়া, মুজিবুল মিয়ার ছেলে ফাহাদ মিয়া, আবদুল হাসিমের ছেলে রুহুল আমিন, জহিরুল হকের ছেলে মেহেদী হাসান, সুজাউদ্দিনে ছেলে পারু মিয়া, তাজু মিয়ার ছেলে সালাম মিয়া, তারা মিয়া ছেলে নাহাম, ওহাব মিয়ার ছেলে সাগর, আবদুল আওয়ালের জসিম উদ্দিন ও ওবাইদুল হাসানের ছেলে শামীম মিয়া।
ফিরে আসা বাংলাদেশিদের বিকেল সাড়ে ৫টায় কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আশ্রয় দেয়ার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার তাদের আদালতে তোলা হবে। আদালত জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে কক্সবাজার পুলিশ সুপার শ্যামলকুমার নাথ জানিয়েছেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ফিরে আসা এসব অভিবাসীর সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এদের পাচারের উদ্দেশে কারা সমুদ্রের মাঝ পথে ফেলে দিয়েছে সেসব হোতাকে খুঁজে বের করা হবে।
তিন মাস সাগরে ভাসছিলেন তারা: উদ্ধার হওয়া এসব বাংলাদেশি তিন মাস ধরে সাগরে ভাসছিলো। পাচারকারীদের খপ্পরে পরে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য বোটে করে পাড়ি জমিয়েছিলেন তারা। সাগরে ভাসমান অবস্থায় তারা দিনের পর দিন না খেয়ে থাকেন। তাদের হাড্ডিসার শরীর দেখলেই বোঝা যায় কি নিদারুণ কষ্টে কেটেছে তাদের দিন। ২১ মে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের সাগর থেকে উদ্ধার করে। তাদের সাথে কয়েকশ’ রহিঙ্গাও রয়েছেন। মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধারকারীদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ১৫০ বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠনো হয়েছে। এখনও যারা রয়েছেন তাদের মানবিক সাহায্য দেয়া হচ্ছে।