ঈদ সামনে রেখে ভারত থেকে পাচার করে আনা হচ্ছে থ্রিপিস শাড়িসহ প্রসাধনী সামগ্রী : চুয়াডাঙ্গা ডিবি ও সরোজগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশের পৃথক অভিযান
স্টাফ রিপোর্টার: ঈদকে সামনে রেখে ভারত থেকে পাচার করে আনা হচ্ছে থ্রিপিস, শাড়িসহ প্রসাধনী সামগ্রী। চকচকে গাড়িযোগে ভারতীয় ওইসব বস্ত্র সামগ্রী দেশের অভ্যন্তরে পাচারের সময় পাচারকারীদের চালান পুলিশের হাতে ধরাও পড়ছে। গতকালই পৃথক সময়ে চকচকে দুটি গাড়িসহ চুয়াডাঙ্গা ডিবি ও সরোজগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ৫ জন। এদের নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণের থ্রিপিস, শাড়ি ও প্রসাধনী সামগ্রী।
অবাক হলেও সত্য যে, ভারতীয় এসব মালামাল পাচারে ব্যবহৃত চকচকে গাড়িতে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার লোগোও ব্যবহার করা হয়েছে। ২২৯ পিস থ্রিপিসসহ ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়া এটিএন বাংলার লোগো লাগানো প্রবক্স মডেলের গাড়িটি নড়াইল জেলার এটিএন বাংলার প্রতিনিধির বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। গাড়ির চালক বলে দাবি করা পারভেজ পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, প্রবক্স মডেলের গাড়িটি এটিএন বাংলার নড়াইল প্রতিনিধি জহির ঠাকুরের। নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতির সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, জহির ঠাকুর দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকায় অবস্থান করেন। তার সম্পর্কে আমরা কিছু বলতে পারবো না।
জানা গেছে, গতপরশু এটিএন বাংলার স্টিকার লাগানো প্রবক্স মডেলের মাইক্রোবাসটি চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে ঘুরতে থাকে। গতকাল সোমবার এই গাড়িযোগে ( ঢাকা মেট্রো-গ ২১-১০৬৫) ভারতীয় প্রচুর পরিমাণ মালামাল পাচার হচ্ছে বলে খবর পায় চুয়াডাঙ্গা গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আমির আব্বাস ও এসআই ইব্রাহীম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কেদারগঞ্জ এলাকায় সকাল থেকে অপেক্ষা করতে থাকেন। বেলা ১১টার দিকে গাড়িটি দামুড়হুদা এলাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে রওনা হয়। কেদারগঞ্জে পৌঁছুলে গোয়েন্দা পুলিশ থামিয়ে তল্লাশি শুরু করে। গাড়ি তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয় ভারতীয় উন্নতমানের ২২৯টি থ্রিপিস। যার আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা। অবশ্য পুলিশের দাবি আনুমানিক মূল্য ৫ লাখ। ভারতীয় থ্রিপিসসহ এটিএন বাংলার স্টিকার লাগানো প্রবক্স মাইক্রোটি উদ্ধার করার পাশাপাশি আটক করা হয় তিনজনকে। আটককৃতরা হলো- রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দের সিদ্দিক, হাজিপাড়ার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে কামরুর ইসলাম (৩৪) ও নড়াইল জেলার কুলাপাড়ার সিকদার সৌরভের ছেলে পারভেজ। পারভেজ নিজেকে প্রবক্সের চালক বলে দাবি করেছে। গতকালই এদেরকে মামলাসহ চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে গতরাত সাড়ে ৮টার দিকে দর্শনা থেকে ঝিনাইদহ অভিমুখে চকচকে হাইএস মাইক্রোবাস সরোজগঞ্জ বাজারে থামিয়ে তল্লাশি করে পাওয়া গেছে ১১৮টি থ্রিপিস, ৩৯টি শাড়ি, ১৬টি পাঞ্জাবি, ৪৮টি পারফিউমসহ কিছু বস্ত্র। যা ভারত থেকে পাচার করে আনা। পুলিশ এ তথ্য দিয়ে বলেছে, মাইক্রোবাসযোগে ভারতীয় এসব বস্ত্র ও প্রসাধনী সামগ্রী পাচারের সময় আটক করা হয়েছে ৩ জনকে। এরা হলো- কুষ্টিয়া দৌলাতপুরের হলুদবাড়িয়ার আজাহার আলীর ছেলে আলমগীর, মঞ্জুর ছেলে ইকবাল হোসেন ও নূরুল ইসলামেসর ছেলে সুজন। ইকবাল নিজেকে মাইক্রোচালক বলে দাবি করেছে। এরা দর্শনা থেকে ঝিনাইদহ অভিমুখে রওনা হওয়ার সময় দর্শনায় এক মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে দুজন আহত হয় বলে জানা গেছে। আহত দুজনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে।
সরোজগঞ্জে আটকের পর হাইএস মাইক্রোবাসসহ তিনজনকে গতরাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের একজন নিজেকে ভারত থেকে বৈধভাবে বাংলাদেশে ফেরার সময় এসব মালামাল এনেছেন বলে দাবি করেছেন। অপরদিকে পুলিশ বলেছে, এতো টাকার মালামাল ওভাবে দেশে পাচার করে আনার বিধান নেই। অবৈধভাবেই পাচার করে আনা হয়েছে। অপরদিকে দর্শনা জয়নগর সীমান্ত চেকপোস্টের দালালদের মাধ্যমে থ্রিপিস প্রতি বিশেষ হারে টাকা দিয়ে বহু যাত্রীই অবৈধভাবে মালামাল পাচার করে আনছে বলে অভিযোগ রয়েছে।