ভারতের সাথে তিনটি চুক্তির খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

চেয়ারে বসে নামাজ পড়া যাবে না বলে যে ফতোয়া দিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরের সময় দু দেশের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য তিনটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এরমধ্যে দুটি প্রটোকলও রয়েছে। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভা ‘জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের খসড়া এবং ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সংশোধন) আইন ২০১৫’র খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ সব অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে উত্থাপিত পবিত্র রমজান মাসের অফিস সময়সূচি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এতে বলা হয়, রমজান মাসে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সকাল ৯টায় শুরু হবে এবং শেষ হবে বিকেল সাড়ে ৩টায়। জোহরের নামাজের জন্য দুপুর সোয়া ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত অর্থাত্ ১৫ মিনিট কাজে বিরতি থাকবে। তবে আদালত, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালসহ যে প্রতিষ্ঠান জরুরি সেবা দেয় তারা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী অফিস সূচি ঠিক করবে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুঁইয়া সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, চুক্তির খসড়া অনুযায়ী, কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে পারবে। একই সাথে ঢাকা-সিলেট-শিলং-গৌহাটি রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে পারবে। তিনি বলেন, চুক্তির আওতায় প্রটোকল দুটির খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে দু দেশের মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়বে জানিয়ে শাররাফ হোসাইন বলেন, এ চুক্তিতে দু’দেশ সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে। সবই পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে প্রণীত ও গৃহীত এবং উভয় দেশের অপারেটর সমান সুবিধা পাবে। এ চুক্তির আওয়ায় দু’দেশে যাতায়াতকারী যানবাহনের রুট পারমিট, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস সনদ, ইন্সুরেন্স পলিসি লাগবে। বাস পরিচালনাকারী ও বাসের যাত্রীদের পাসপোর্ট ও মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা থাকতে হবে। কলকাতা থেকে আগারতলা যেতে ট্রানজিটের জন্য আলাদা কোন ফি দিতে হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, এটি এখানে ম্যানশন করা হয়নি। বাস্তবায়নের জন্য দু’দেশের কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। চুক্তি ও প্রটোকল না হলেও এরই মধ্যে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা ও ঢাকা-গুয়াহাটি রুটে পরীক্ষামূলক বাস চলাচল শুরু হয়েছে। গত ২২ মে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের একটি ২৬ আসনের বাসে ২২ সরকারি কর্মকর্তা গুয়াহাটির পথে রওনা হন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরীক্ষামূলক এ সেবার উদ্বোধন করেন। আর রোববার সকালে কলকাতার সল্টলেক আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাল থেকে ১০ জন ভারতীয় কর্মকর্তাকে নিয়ে পরীক্ষামূলক যাত্রায় ঢাকার পথে ছেড়ে আসে একটি বাস, যেটি ঢাকা হয়ে মঙ্গলবার ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় পৌঁছাবে। পশ্চিমবঙ্গের পরিবহন দপ্তরের প্রধান সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় পরীক্ষামূলক এ সেবার উদ্বোধন করেন।

ভারতের সাথে স্বাক্ষরের জন্য ‘অ্যাগ্রিমেন্ট বিটুইন বাংলাদেশে স্টান্ডাডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিউশন অ্যান্ড ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্স অন কো-অপারেশন ইন দি ফিল্ড অব স্ট্যান্ডার্ডডাইজেশন অ্যান্ড কনফরমিটি অ্যাসেসমেন্ট’র খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তির জন্য ২০০৯ সাল থেকে প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত মে মাসে দু দেশ চুক্তি করতে সম্মত হয়। এ চুক্তির আওতায় এ দুটি মান সংস্থা একে অপরের পণ্যের মান সংক্রান্ত সনদের স্বীকৃতি দেবে। তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানি পণ্যের মান পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে দু’পক্ষ সম্মত হয়েছে। মান সংস্থাগুলো মান ও পরীক্ষা পদ্ধতিতে সামঞ্জস্যতা আনবে। সংস্থা দুটি পরস্পর পরস্পরের রিপোর্ট গ্রহণ করবে। এ চুক্তি বাস্তবায়ন ও কার্যকর হলে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

জিটুজি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা যাবে: অন্য দেশের সরকারের সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকনোমিক জোন) গড়ার বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সংশোধন) আইন ২০১৫’র খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অন্য দেশের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে (জি-টু-জি) অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা যাবে। তিনি বলেন, এত দিন শুধু বিদ্যমান আইনে চার ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সুযোগ আছে। সেগুলো হলো সরকারি মালিকানাধীন, বেসরকারি মালিকানাধীন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে করা অঞ্চল ও বিশেষায়িত অঞ্চল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাপানসহ বিভিন্ন দেশ সফরের সময় সরকারের সঙ্গে সরকারের মধ্যে এ ধরনের অঞ্চল করার আগ্রহের কথা জানানো হয়েছিল। সেই আগ্রহে সাড়া দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া এত দিন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় এ ধরনের অঞ্চল করার সুযোগ ছিল না। প্রস্তাবিত আইনে ওই সব এলাকায় আইসিটি শিল্পের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা দেবে সরকার: প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ ও ঝুঁকিপূর্ণ যেকোনো বয়সের মানুষকে আমৃত্যু সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা সংক্রান্ত ‘জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাভ করেছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের যেসব খাতে ব্যাপক সাফল্য আছে তার মধ্যে অন্যতম এটি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ ফতোয়া পেল কোথায়? সূত্র জানায়, চেয়ারে বসে নামাজ পড়া নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জারি করা ফতোয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চেয়ারে বসে নামাজ পড়া যাবে না বলে যে ফতোয়া দিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। প্রসঙ্গত ময়মনসিংহ জেলার জনৈক এক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগ থেকে জারি করা ফতোয়ায় চেয়ারে বসে নামাজ পড়াকে জায়েজ নয় বলে উল্লেখ করা হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ওই ফতোয়ার বিষয়ে প্রথমে আলোচনা তোলেন। এ সময় অন্য কয়েকজন মন্ত্রীও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তারা এ ফতোয়ার সমালোচনা করে বলেন, ধর্মেই আছে যেভাবেই হোক নামাজ পড়তে হবে। যে যেমন করে পারে নামাজ পড়তে পারেন। যিনি দাঁড়াতে না পারবেন তিনি বসে পড়বেন। বসতে না পারলে শুয়ে পড়বেন। অথচ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এটা কোথায় পেল? এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এমনও দেখা গেছে যিনি উঠতে পারছেন না, তিনি শুয়ে নামাজ পড়ছেন। তাহলে কী তার নামাজ হবে না?