এসএসসি পরীক্ষা এবং চুয়াডাঙ্গার ফলাফল

 

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সারাদেশেই ফলাফল গতবারের তুলনায় এবার জিপিএ ও পাসের হার কমেছে। চুয়াডাঙ্গায়? জেলার ঐতিহ্যবাহী দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অকৃতকার্যের সংখ্যা হতাশাই শুধু করেনি, কিছু প্রশ্নও দানা বেধেছে। সে তুলনায় দর্শনা কেরু উচ্চবিদ্যালয় পাসের হারে এগিয়েছে। এদিকে সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে গণহারে কোচিং করলেও পাসের হারে গতবারের তুলনায় এবার হতাশ করেছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পরীক্ষার সময়সূচি বিপর্যয়ের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এতে পরীক্ষার্থীদের শুধু বিড়ম্বনার শিকারই হতে হয়নি, বিভ্রান্তিতেও ভুগতে হয়েছে। ফল প্রকাশের সময় পাসের হার গতবারের তুলনায় এবার কম হওয়ার কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হরতাল- অবরোধকেই দায়ী করেছেন। অপরদিকে শিক্ষামন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগামীতে শীর্ষ দশ বলে কিছু থাকবে না। এতে বিদ্যালয়ের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শিক্ষামন্ত্রীর এ উক্তির জের ধরে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষানুরাগীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলে বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে কি তেমন রেষারেষির কারণে জিপিএ কমেছে? তা ছাড়া যে বিদ্যালয় দুটিতে মেধা যাচাই করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়, সে বিদ্যালয়ে অকৃতকার্য কেন? ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৪৮ জনের মধ্যে অকৃতকার্য ২৩ জন। আর বালিকা বিদ্যালয়ে ২২৩ জনের মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছে ১২ জন। অথচ পাঁচলিয়া জামাল উদ্দীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৯ জনের মধ্যে সকলেই পাস করেছে। অভিন্ন কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে জামজামি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ২৫ জনের সকলেই উত্তীর্ণ। গ্রাম পর্যায়ের বিদ্যালয়ে শতভাগ উত্তীর্ণ হলো অথচ জেলা শহরের যে দুটি বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করা হয়, নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয় না, সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণে ত্রুটি শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আন্তরিক হওয়ার তাগিদ নিশ্চয় অযৌক্তিক নয়। আর সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৪৭ জনের মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছে ১৫ জন। যে বিদ্যালয়ে গণহারে কোচিং তথা অতিরিক্ত ক্লাসের নামে অর্থ আদায় করা হয়, সেই বিদ্যালয়ে ১৫ জন অকৃতকার্য কেন? এ হিসেবে দর্শনার কেরুজ উচ্চ বিদ্যালয় অবশ্যই ভালো করেছে। ১৩৩ জনের মধ্যে অকৃতকার্য মাত্র ২ জন। জীবননগরের হাসাদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফলাফলও ভালো। ৭৬ জনের মধ্যে ৭০ জন পাস করেছে। এদিকে ডিঙ্গেদহ শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী স্মরণী বিদ্যাপীঠের ফলাফলও অনেকটা আশা জাগিয়েছে। ৯৭ জনের মধ্যে ৯৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কম হওয়ার আরো একটি কারণ হিসেবে অনেকে এবারই প্রথম উচ্চতর গণিতসহ কয়েকটি বিষয়ে সৃজনশীলযুক্ত হওয়াকেও দায়ী করেছে।

চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষার মান দিন দিন বৃদ্ধির চিত্র ফুটে উঠলেও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ প্রাপ্তির সংখ্যা হ্রাসের খবর হতাশার। চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জিপিএ প্রাপ্তি কমেছে। যদিও যশোর বোর্ডসহ সারাদেশেই এবার গতবারের তুলনায় কমেছে, তবুও চুয়াডাঙ্গার এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমলো কেন? আড়ালে পরীক্ষার সময় সুযোগ পেয়ে বিদ্যালয় দুটির সুপ্ত কৌশল লুকিয়ে? খতিয়ে দেখা দরকার।