দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার উদ্যোগ : আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন হতে পারে আইন সংশোধনের খসড়া প্রস্তুত

স্টাফ রিপোর্টার: স্থানীয় সরকারের সকল স্তরের নির্বাচন দলীয়ভাবে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য আইনের কী ধরনের সংশোধন দরকার সেটি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। আগামী বছরের প্রথমার্ধে শুরু হতে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচন থেকেই দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ৩১৯টি পৌরসভা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালে এটিএম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচন করে। ওই বছরে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে আড়াই শতাধিক পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া একই বছরের ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল উপকূলীয় ২৪ উপজেলার প্রায় ৬০০ ইউনিয়ন পরিষদ এবং ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই দেশের বাকি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকারের এসব স্তরের মেয়াদ ৫ বছর। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা আইন অনুযায়ী, ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ছয় মাসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ এবং  মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৩ মাসের মধ্যে পৌরসভায় নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনও ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে। এ জন্য সম্ভাব্য খরচ হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। পৌরসভা নির্বাচনের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন, এ বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের জন্য প্রস্তুতি শুরু হবে। আইনানুযায়ী আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে এসব নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের অধীনে এছাড়া আর কোনো বড় ধরনের নির্বাচন বাকি নেই। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। এর আগে অবশ্য পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হবে।

স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠানের বিদ্যমান আইনি বিধান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। সর্বশেষ ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও দলীয় প্রভাব প্রকট হয়ে ওঠে। দলীয়ভাবে প্রার্থিতা মনোনয়ন, প্রচার প্রচারণা ও বিজয়ের কৃতিত্ব দলীয়ভাবে সংরক্ষণ করাসহ সবকিছুই চলে দলীয়ভাবে। ওই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন। আর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একাধিকবার দলীয় ফোরামে ও গণমাধ্যমে বলেছেন, স্থানীয় সরকারের সকল স্তরের নির্বাচন দলীয়ভাবে করা উচিত। এ প্রসঙ্গে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনের সংশোধনীর খসড়া করে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেলে সেটি প্রথমে তার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। অনুমোদনের পর আইনের সংশোধনী মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সংসদে বিল পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দলীয়ভাবে করার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি আছে। দলীয়ভাবে হলে দখল করা হবে। এখন তো দেশে কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়া নেই। যেখানেই নির্বাচন হবে এখন সরকারি লোকই নির্বাচিত হবে। দলবাজি হবে। দলীয়ভাবে হলে সংঘাত বাড়বে। বিরোধী দলের কেউ হলে সে অর্থ পাবে না। বরখাস্ত হবে। গণতান্ত্রিকতা বলতে কিছু নেই। তিনি বলেন, দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে বিদ্যমান বাস্তবতায় লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। দলীয় শৃঙ্খলা থাকলে দলীয়ভাবে হলে ভালো হতো। বিদ্যমান স্থানীয় সরকার কাঠামো মেয়র সর্বস্ব। ভারতে মেয়র পরিষদ রয়েছে। পারিষদ থাকলে মেয়রের দায়বদ্ধতা থাকবে। পরিষদই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সেখানে সরকার ইচ্ছা করলেই কিছু করতে পারবে না। তবে এখন যা হচ্ছে তা নির্দলীয়-দলীয় কোনোটাই হচ্ছে না।

ড. বদিউল আলম বলেন, দলীয়ভাবে হলে আইনের মধ্যেই মনোনয়ন প্রক্রিয়া ঠিক করা দরকার। দলের পুনর্গঠন, দলের ভেতর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ভালো ও যোগ্য লোককে সুযোগ দেয়ার মানসিকতা মজবুত করা ছাড়া দলীয়ভাবে নির্বাচন করলে লাভ হবে না। বরং ক্ষতি হবে। দলীয়ভাবে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর আগে এ বিষয়ে জনসমক্ষে বিতর্কের সুযোগ রাখা উচিত। দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে সংঘাত-সহিংসতা বাড়বে। ভারতে গ্রাম পঞ্চয়েত থেকে শুরু করে পৌরসভা, জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে হয়।