চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর সাথে ঢাকার সরাসরি বাস যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কেন? নৈশকোচ ডাকাতির সাথে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে চালককে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে ও তার মুক্তির দাবিতে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছে। এ কারণে অসংখ্য যাত্রীসাধারণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। ট্রেনে বাড়তি চাপের কারণে আসন ছাড়াই অনেকের ভ্রমণ করতে হচ্ছে দীর্ঘ পথ। অনেকে জরুরি কাজেও যাওয়া আসার উপায় পাচ্ছে না।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে ছেড়ে আসা সোহাগ পরিবহন সংস্থার একটি নৈশকোচ ডাকাতির কবলে পড়ে। যাত্রী সেজে কয়েকজন ডাকাত ফরিদপুর-মাগুরার মধ্যবর্তী মধুখালীর নিকট নৈশকোচে ডাকাতি করে নির্বিঘ্নে নেমে পড়ে। ডাকাতির সময় ডাকাতদলের কয়েকজন কোচের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয়। ডাকাতির পর যাত্রীদের বর্ণনার প্রেক্ষিতে মধুপুর থানা পুলিশ ওই নৈশকোচের চালককে গ্রেফতার করেন। খবর পেয়ে পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ তাকে মুক্ত করতে থানায় সুপারিশ করেন। এতে সাড়া না মেলায় শুরু হয় পরিবহন ধর্মঘট। প্রথমে অবশ্য সোহাগ পরিবহন সংস্থার কোচ চালাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে সকল পরিবহন সংস্থার শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করে।
ধর্মঘটের কারণে যাত্রীসাধারণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। দুর্ভোগের শিকার অনেকেরই সঙ্গত কিছু প্রশ্ন, তবে কি পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে পারবে না? নাকি সত্যিই ডাকাতি ঠেকাতে না পেরে তথা ব্যর্থতা এড়াতে নৈশকোচ চালককে গ্রেফতার করে বাহবা নিয়েছেন? তা যদি না হয় তা হলে ডাকাতির শিকার যাত্রীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সন্দেহজনকভাবে গ্রেফতার করার পর তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে কেন? এ দাবিতে ধর্মঘট ডেকে যাত্রীসাধারণকে দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেয়া কি ধর্মঘট করার অধিকারের অপব্যবহার নয়? অবশ্যই যাত্রী সুরক্ষার দায়িত্ব পরিবহন সংস্থার শ্রমিকদের যেমন, তার চেয়ে ঢের বেশি পুলিশের। কারণ, দেশের জনগণ জননিরাপত্তার জন্যই পুলিশ নিয়োগ করেছে।
বিশেষ দল বা সংগঠনের কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। প্রয়োগ করা যাবে না প্রচলিত আইন। এরকম সংস্কৃতি কোনো সমাজের জন্যই কল্যাণকর নয়। যদিও বহুক্ষেত্রেই, বহুবিধ ঘটনার প্রেক্ষিতে ওরকম চিত্র হরহামেশায় দৃষ্টিগোচর হয়। পুলিশে পেশাদারত্ব উধাও। সকলকে ধোয়া তুলশি বলা যায় না। সে কারণে চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ যে সঠিক পদক্ষেপই নিয়েছে তা যেমন নিশ্চিত করে বলা যায় না, তেমনই চাপের মুখে অন্যকে ছাড়লে ওর কেন মুক্তি নয়? যুক্তির জাঁতাকলে আমরা আমজনতা।