সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার আজ এক বছর

ঢাকায় গ্রেফতার ক্যাপ্টেনকে চুয়াডাঙ্গায় নেয়ার পক্রিয়া অব্যাহত

 

স্টাফ রিপোর্টার: ২১ মে। সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার আজ এক বছর। গত বছর এদিনের সূর্য ওঠার আগেই মোমিনপুর স্টেশনে রেললাইনে সদরুল নিপুলের ক্ষত-বিক্ষত লাশ দেখে চমকে ওঠেন স্থানীয়রা। তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর রেললাইনে ফেলে রাখে। ট্রেনে কেটে ক্ষত-বিক্ষত হয় নিপুলের নিথর দেহ।

নিপুল হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আশফাকুর রহমান বলেছেন, ঘাতকচক্রের হোতা মোমিনপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের ক্যাপ্টেন ঢাকায় ছিনতাই করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে বর্তমানে কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলহাজতে রয়েছে। তাকে নিপুল হত্যা মামলায় ইতোমধ্যেই শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় নেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। রিমান্ডের আবেদনও প্রস্তুত। তবে ঘটনার পরপরই সন্দেহভাজন দুজন মোমিন ও নিতাই জামিনে রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর নীলমণিগঞ্জের মরহুম নূর মোহাম্মদ ওরফে নূরু সিআই’র ছেলে সদরুল নিপুল দৈনিক মাথাভাঙ্গার মোমিনপুর প্রতিনিধি ছিলেন। মোমিনপুর স্টেশনসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় গড়ে তোলা একটি গ্যাঙের বিরুদ্ধে কলম ধরেন। গাছ চুরিসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পদ চুরির বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করে ক্যাপ্টেন গ্যাঙের চোখের শুল হন সদরুল নিপুল। এরই এক পর্যায়ে গত বছরের ২০ মে রাতে কৌশলে ডেকে নিয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী মোমিনপুর স্টেশনে হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে। নিথর দেহ স্টেশনেই রেললাইনের মাঝে ফেলে রেখে সটকে পড়ে ঘাতকচক্র। ভোরে ট্রেনে কাটা ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়। মাথায় আঘাত করা রক্তমাখা ইটটি পাওয়া যায় স্টেশন প্লাটফর্মের অদূরে। ময়নাতদন্ত শেষে ওইদিনই দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। সাংবাদিক সদরুল নিপুলের স্ত্রী নীলুফা ইয়াসমিন নীলিমা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। রেললাইনের ওপর থেকে লাশ উদ্ধার এবং ঘটনাস্থল স্টেশন হওয়ার কারণে বিধি মোতাবেক রেলওয়ের পোড়াদহ থানায় মামলাটি দায়ের করতে হয়।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবসহ এলাকার সাংবাদিক সমাজ সদরুল নিপুল হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় মোমিনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যায়। তবে ঘটনার রাতে ক্যাপ্টেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য দেয়। নিতাইকেও সন্দেহমূলক আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। দুজনই পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয়। আব্দুল মান্নানের ছেলে ক্যাপ্টেনসহ তার গ্যাঙের অন্যরা সেই থেকে আত্মগোপনে। এরই মাঝে ক্যাপ্টেন ঢাকার তেজগাঁও থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ঢাকায় ছিনতাই করার সময় তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে। তার দেয়া স্বীকারোক্তি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করা হয়। গ্রেফতারের বিষয়টি জানার পর সদরুল নিপুল হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন জানিয়ে চুয়াডাঙ্গায় নেয়ার প্রার্থনা করেন।

অপরদিকে ঢাকা ডিএসবি সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার বিষয়টি অবগত হওয়ার পর ক্যাপ্টেন সম্পর্কে বাড়তি খোঁজখবর নিতে শুরু করে। সূত্র বলেছে, সেখানে পৃথক একটি মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এদিকে সদরুল নিপুল হত্যা মামলায়ও তাকে রিমান্ডের আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় নেয়া হলেই রিমান্ড শুনানি হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পোড়াদহ থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর এনামুল হক বলেছেন, মামলাটি প্রথমে রেলওয়ের দর্শনা হল্টস্টেশন ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোনায়েমকে দেয়া হয়। তিনি বদলি হলে তদন্তভার দেয়া হয় এসআই সেলিমকে। তিনিও বদলি হয়েছেন। ফলে বর্তমানে মামলাটির তদন্তভার পেয়েছেন এসআই আশফাকুর রহমান। তিনি তদন্ত শুরু করেই সাংবাদিক হত্যার বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন।

সাংবাদিক সদরুল নিপুলের রয়েছে একমাত্র কন্যা। মানিয়ো এমামুন নিধি এক বছরে বেশ বড় হয়েছে। সে মাঝে মাঝেই পিতাকে খোঁজে। আব্বু কেন ফেরে না? প্রশ্ন করে। শোকার্ত স্ত্রী নিজেকে শিক্ষকতা পেশায় কিছুটা ব্যস্ত করতে পারলেও কন্যার এ প্রশ্নের কী জবাব দেবেন? যে সমাজে সাংবাদিক নিরাপত্তাহীন, সেই সমাজের মানুষের কাছেও কি এ প্রশ্নের জবাব আছে? সদরুল নিপুলের স্ত্রীসহ নিকটজনেরা বলেছেন, সাংবাদিক নিপুল হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে আমরা সান্ত্বনা খুঁজে পাবো। নিধিকেও হয়তো একদিন বোঝাতে পারবো তার পিতা ন্যায়ের পক্ষে কলম ধরে সমাজের অপরাধীদের নৃশংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়ে এখন আকাশের তারা হয়ে আছে। ন্যায়ের পক্ষে কলম ধরে শহীদ কলমসৈনিকের সন্তান তুমি।

উল্লেখ্য, সদরুল নিপুলের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভাইদের উদ্যোগে পারিবারিকভাবে তার পৈত্রিক বাড়িতে আগামীকাল শুক্রবার বাদজুমা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।